পবিত্র শবে বরাতের অজুহাত তুলে মাংসের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে ধর্মঘটের অজুহাতে ৪০০ টাকার গরুর মাংস ৪৮০ হলেও দুই মাস পার না হতেই শবে বরাত উপলক্ষে মাংসের মূল্য আরো এক ধাপ বেড়ে ৫৮০ টাকা করা হয়েছে।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকেই গরুর মাংস কেনার জন্য ক্রেতাদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। যেসব দোকানি একটি গরু ভাগাভাগি করে জবাই দিতো তারাই আজ পাঁচ থেকে ছয়টি গরু জবাই দিয়েছে। এবার মাংস ব্যাবসায়ীদের অজুহাত, শবে বরাত।
তারা অভিযোগ করে বলেন, শবে বরাত উপলক্ষে গরুর মাংসের চাহিদা বেড়ে গেছে। এইদিকে বিভিন্ন পশুর হাটে শবে বরাত উপলক্ষে ইজারাদারেরা অতিরিক্ত খাজনা আদায় করায় মাংসের দাম বেড়ে গেছে।
রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, গরুর মাংসের দাম ৫৭০ থেকে ৫৮০ টাকা। নিউমার্কেট কাঁচা বাজারে মাংসের দোকানগুলোতে ব্যাপক ভিড় দেখা গেছে। ৫৮০ টাকা করে মাংস কিনতে অপেক্ষা করতে গেছে ক্রেতাদেরকে।
এদিকে কাওরান বাজারেরও একই চিত্র। ৫৮০ বলে হাঁক ডাকছেন তারা। ক্রেতাদের মধ্যে উৎসাহ লেগে গেছে। কেউ ৫ কেজি, কেউ ১০ কেজি আবার কাউকে তার বেশি পরিমাণ মাংস কিনতে দেখা গেছে।
রাজধানীর মিরপুর, আগারগাঁও এলাকায় এক কেজি মাংস রাখা হয় ৪৮০ টাকা। আগারগাঁওয়ের পাশের এলাকা কল্যাণপুরে প্রতি কেজি মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫১০ টাকায়। একটু এগিয়ে গেলে মোহাম্মদপুরে এর দাম ৫২০ টাকা থেকে ৫৫০ টাকায় ওঠানামা করে। ধানমন্ডি এলাকায় ৬০০ টাকা।
নিউমার্কেট কাঁচা বাজারের মাংস বিক্রেতা মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, ‘আইজ পাঁচটা গরু জবাই দিছি। দুই দিন ধইরা ৫০০ টাকা কেজি গোস (মাংস) বেচতাছি। শবে বরাতের লাইগ্যা কষ্ট (খরচ) প্রত্যেক গরুতে পাঁচ হাজার টাহা বেশি খাজনা দিতে হইছে। হের লইগ্যা দাম বেশি। কাইল আবার ঠিক অইয়্যা যাইবো’।
কাওরান বাজার এলাকার বাসিন্দা আবদুল আলীম মন্ডল বলেন, ‘এক কেজি মাংসে ৮০ টাকা বেশি রাখা হচ্ছে। দেখার কেউ নেই। শবে বরাত উপলক্ষে মাংস কিনতে হবে তাই কিনছি।’
এদিকে সুপার শপগুলোতে শবে বরাত উপলক্ষে গরুর মাংসের দাম বাড়েনি। প্রিন্স বাজারে ৪৬০ টাকা, মিনা বাজারে ৪৮০ টাকা ও স্বপ্নের শাখাগুলোতে ৪৮৫ টাকায় প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে।
মাংসের বাজারের এমন লাগামহীন অবস্থার জন্য ক্ষুব্ধ ক্রেতা ও সাধারণ মানুষ। কাওরান বাজারের ষাটোর্ধ্ব বয়সের একজন ক্রেতা গরুর মাংস কিনতে না পেরে ব্রয়লার মুরগি কিনেছেন। কথা বলে জানা যায়, তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। বাজার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে যমুনা নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আমরা দেশ স্বাধীন করেছি এমন অবস্থার জন্য নয়। কোন রকম বাজার মনিটরিং হচ্ছেনা। যার ফলে যার যেভাবে খুশি দাম বাড়াচ্ছে। এসময় তিনি ভোক্তা অধিকার মন্ত্রণালয়কে অকার্যকর ও খোঁড়া বলে অভিহিত করেন।
অন্যদিকে মাংস ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আসন্ন রমজান মাসে গরুর মাংসের দাম ৫০০ টাকার ওপরে থাকবে। দাম কমার সম্ভাবনা নেই। ঈদের আগে মাংসের দাম শবে বরাতের মতো অজুহাত দেখিয়ে আরও এক দফা বাড়তে পারে বলেও মনে করেন অনেকে।
মাংসের বাজার পরিস্থিতির এমন বেহাল অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম বলেন, গাবতলী পশুর হাটে লুটের মতো খাজনা আদায় চলছে। গরু প্রতি পাঁচ হাজার টাকা থেকে দশ হাজার টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত খাজনা আদায় করা হচ্ছে। আমরা বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে মাংসের দাম নির্ধারণের কথা রয়েছে। ২৫ অথবা ২৬ মে আমরা কর্মসূচি ঘোষণা দিতে পারি