রাত পার হলেই ইরানে ভোট। সেই নির্বাচনে দেশটির পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে মধ্যপন্থী হাসান রুহানি কিংবা কট্টরপন্থী ইব্রাহিম রইসি— এই দু’জনের মধ্যে এক জনকে বেছে নেবে ইরান। এর মধ্যে ৬৮ বছর বয়সি রুহানি ইরানের বর্তমান প্রেসিডেন্ট। তার বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ থাকলেও সর্বশেষ জনমত জরিপে ৫৫ শতাংশের সমর্থন পেয়ে প্রধান প্রতিপক্ষ রইসির চেয়ে সামান্য হলেও এগিয়ে রয়েছেন রুহানি। যদিও বিরোধীদের দাবি, ইরানে এই ধরনের সমীক্ষা মিলেছে খুব কমই।
দু’বছর আগে প্রেসিডেন্ট রুহানির আমলেই পরমাণু কর্মসূচিতে লাগাম পরানোর চুক্তি হয়েছে আমেরিকার সঙ্গে। ওই চুক্তিকে ইরানের মানুষ কীভাবে দেখছেন তারও পরীক্ষা হবে শুক্রবার। রুহানির বিরোধীদের দাবি, ওই চুক্তিতে লাভের লাভ হয়নি কিছুই। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা উঠলেও, মার্কিন প্রশাসনের হুমকি বন্ধ হয়নি। আসেনি লগ্নি। ব্যবসাপাতি বা কর্মসংস্থান— কোনোটিই বাড়েনি। মোট কথায় ইরানের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে বলে যে আশ্বাস রুহানি দিয়েছিলেন, বাস্তবে তার কিছুই হয়নি। যা নিয়ে ভোটের মুখে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলেছে ইরানের নবীন প্রজন্ম। ৮ কোটি মানুষের এই দেশে ৬০ শতাশেরই বয়স ৩০ বছরের নীচে। এদের বড় অংশ মুখর রুহানির সমালোচনায়। দেশের অার্থিক উন্নতি চেয়ে তাঁদের অনেকেই ঝুঁকে রইসির দিকে।
কে এই রইসি? কী বলছেন তিনি?
কট্টর রক্ষণশীলদের মুখ এই রইসি হলেন দেশের শীর্ষ চার ইসলামি বিচারপতির এক জন, ১৯৮৮ সালে যাঁরা কয়েক হাজার রাজনৈতিক বন্দির প্রাণদণ্ডের হুকুম দিয়েছিলেন। ইরানে ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবোত্তর পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে চান ৫৬ বছর বয়সি এই নেতা। এবং তার জন্য কোনো বিদেশি শক্তির উপরে নির্ভর করার কোনো দরকারই নেই বলে তাঁর দাবি। ইরানের সামরিক বাহিনী ও তাদের সমর্থিত জঙ্গি গোষ্ঠী ‘বাসিজ’ তাঁর পক্ষে। প্রভাবশালী দু’টি মৌলবাদী গোষ্ঠী ও কট্টরপন্থী মৌলবাদীদের সমর্থন রয়েছে তাঁর দিকে।
শুধু তা-ই নয়, ১৯৮৯ সাল থেকে ইরানে যিনি সর্বোচ্চ ক্ষমতাধারী ব্যক্তি, সেই আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে তাঁর। শীর্ষ ধর্মীয় নেতা খামেনিই যদি শেষ মুহূর্তেও পরোক্ষে রইসের অনুকূলে কোনো মন্তব্য করেন তবে তাঁর ভাগ্য খুলে যাবে বলেই মনে করা হচ্ছে। খামেনিই অবশ্য প্রকাশ্যে কাউকে সমর্থন করার কথা বলেননি। তিনি শুধু সকলকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। যাতে, দেশের গণতন্ত্র মজবুত হয়। এবং কোনো বিদেশি শক্তি এদেশে নাক না গলাতে পারে।
অনেকেই মনে করছেন, গতবার বিপুল ভাবে জিতলেও শুক্রবার ভোট কম পড়লে রুহানির বিপদ। কারণ, জিততে হলে ৫০ শতাংশ এর বেশি ভোট পেতে হবে। কেউই তা না পেলে, সব চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন যে দু’জন, তাঁদের নিয়ে দ্বিতীয় দফায় ভোট হবে আগামী ২৬ মে। প্রথম দিকে তৃতীয় আর এক জনও ছিলেন এই নির্বাচনী দৌড়ে। তেহরানের মেয়র মোহম্মদ বাগের গলিবাফ। গত সোমবার তিনি সরে দাঁড়িয়েছেন রইসের প্রতি সমর্থন জানিয়ে। স্বাভাবিকভাবেই লড়াইয়ের শেষ লগ্নের এই প্রাপ্তি রইসের জেতার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে ভোটে জেতাই শেষ কথা নয়। এর পরে খামেনি ও ধর্মীয় কট্টরপন্থী নেতাদের সর্বোচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কর্তৃপক্ষের অনুমোদনও পেতে হবে। ফলে ইরানে মধ্যপন্থা ফের কঠিন পরীক্ষার মুখে। সূত্র: আনন্দবজার পত্রিকা