ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের যাকাত ফান্ডে যাতাতের টাকা আছে মাত্র ২৮ কোটি টাকা। অথচ প্রধানমন্ত্রীর (পিএম) তহবিলে ইসলামী ব্যাংকের ৪৫০ কোটি টাকা দেওয়ার গুজব উঠেছে। যা একেবারেই ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছেন খোদ ব্যাংকটির চেয়ারম্যান আরাস্তু খান। বৃহস্পতিবার রাজধানীর মতিঝিলে ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারের মোহাম্মদ ইউনুস অডিটোরিয়ামে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।
সংবাদ সম্মেলনে আরাস্তু খান বলেন, ইসলামি ব্যাংকের স্বপ্নদ্রষ্ট্রা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি ১৯৭৪ সালে এর স্বপ্ন বুনলেও তা বাস্তবায়িত হয় আশির দশকে। ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠার ৩৪ বছরে যাকাত ফান্ডে মোট জমা হয় ৩৪৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৭৪ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। ১৪৫ কোটি টাকা ট্যাক্সের জন্য রাখা হয়েছে। বাকি থাকে মাত্র ২৮ কোটি টাকা। অথচ প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে ইসলামী ব্যাংকের ৪৫০ কোটি টাকা দেওয়ার তথ্য বিভিন্ন মিডিয়ায় একজন পরিচালকের মাধ্যমে এসেছে। যা একেবারে মিথ্যা বলে জানিয়েছেন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান।
তিনি জানান, ইসলামী ব্যাংকের জাকাত ফান্ডে টাকা ২৮ কোটি টাকা থাকলে আমরা কীভাবে ৪৫০ কোটি টাকা দেব প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে? এটা যে বলেছে তা তার নিজস্ব বক্তব্য। যা সম্পূর্ণ অসত্য। তাছাড়া ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদ যাকাত ফান্ডের ৪৫০ কোটি টাকা প্রধানমন্ত্রীর জাকাত ফান্ডে দেয়ার মতো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
আরাস্তু খান বলেন, গত ১৩ মে অনুষ্ঠিত বোর্ড সভার বরাত দিয়ে ব্যাংকের যাকাত ফান্ড, শিক্ষাবৃত্তি, ইফতারের অর্থ ব্যয়, শীর্ষ নির্বাহীদের বদলী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুযোগ-সুবিধা সংক্রান্ত যেসব সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তাও বিভ্রান্তিকর। এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত বোর্ড সভায় গৃহীত হয়নি। ব্যাংকের ১৯ কোটি টাকার শিক্ষাবৃত্তিপ্রাপ্ত সুবিধাভোগীদের বিষয়ে খতিয়ে দেখা এবং সিএসআর সুবিধাভোগীদের তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আসন্ন রমজানে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ব্যাংকের বাজেট করা ১৩ কোটি টাকার ইফতার বিতরণের সিদ্ধান্ত হয়েছে মর্মে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তাও সঠিক নয়। তাছাড়া ব্যাংকের জনসংযোগ, মার্কেটিং ও সিএসআর বিভাগের প্রধানদের বদলি এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুযোগ-সুবিধা কমানোর আলোচনাই হয়নি উক্ত বোর্ড সভায়।
আরাস্তু খান বলেন, ইসলামি ব্যাংক জনগনের ব্যাংক। ব্যাংকটির শেয়ার হোল্ডারদের আমানতনের পরিমান প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা। তাদের এ টাকা নিয়ে ছিনিমিনি খেলা কারোর অধিকার নেই। জনগনের সেবায় ব্যাংকটি সব সময় নিয়োজিত থাকবে। পাশাপাশি সিএসআর খাতে অবদান রাাখবে।
তিনি বলেন, গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীয় তহবিলে ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মিলে ১৩৬ কোটি টাকা ২০ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছে। এর মধ্যে ইসলামি ব্যাংকেরই ১৫ কোটি টাকা। যা অনেক ব্যাংকেরই মুনাফা হয় না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ইসলামি ব্যাংকের বোর্ড সভা ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সকল কর্তা ব্যক্তি অতিশয় সৎ ও যোগ্য ব্যক্তি। ব্যাংকিং খাতেও তাদের অবদান উল্লেখ্যযোগ্য। তবে একজন পরিচালক ব্যাংকটি নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। এতে ব্যাংককে কোনো বিভাজন হয়নি বা কোনো দ্বন্দ্ব হয়নি বলে তিনি মন্তব্য করেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আরাস্তু খান বলেন, আমি সরাসরি উক্ত পরিচালককে পদত্যাগ করার কথা বলতে পারি না। তবে তিনি যদি সেচ্ছায় পদত্যাগ করেন সেটা আগামী বোর্ড সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এর আগে ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ জানিয়েছিলেন, এখন থেকে ইসলামী ব্যাংকের যাকাতের অর্থ সরাসরি বণ্টন না করে তা প্রধানমন্ত্রীর ফান্ডের মাধ্যমে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ব্যাংকটির নতুন পরিচালনা পরিষদ মনে করছে ব্যাংকটির করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর), যাকাত এবং ইফতার খাতে ব্যয়ের সিংহভাগ অর্থ যাচ্ছে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিদের লালনে। এমন পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যাংকটির নতুন পরিচালনা পর্ষদ। এই অর্থের পরিমাণ ৪৫০ কোটি টাকা বলে জানিয়েছিলেন সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার ফেসবুকে সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ লিখেন, ‘অশুভ শক্তি ইশারায় আমার শত চেষ্টার পরেও রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি পুনর্বাসিত হয়েছে এবং জাতির পিতার খুনিদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা ফিরে আসছেন নেতৃত্বে। আগামী বৎসর এই ব্যাংকটিকে রাষ্ট্রবিরোধী কাজে ব্যবহার করার নীলনকশা সম্পাদন হচ্ছে।