অপসারিত ভাস্কর্যটি সুপ্রিম কোর্টের অ্যানেক্স ভবনের সামনে পুনঃস্থাপিত হচ্ছে! বৃহস্পতিবার রাতেই ভাস্কর্যের কাঠামো স্থাপনের লক্ষ্যে পিলার নির্মাণ করা হয়েছে। শিল্পী মৃণাল হক জানিয়েছেন, কর্তৃপক্ষ তাকে জানিয়েছে ভাস্কর্যটি অ্যানেক্স ভবনের সামনে স্থাপিত হবে। বৃহস্পতিবার ভোর ৪টায় সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবনের সামনে থেকে ভাস্কর্যটি সরিয়ে নিয়ে পানির পাম্পের সামনে রাখা হয়েছে। ত্রিপল দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে ভাস্কর্যটি। তবে ভাস্কর্য পুনঃস্থাপনের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষের কোনো বক্তব্য এখনো পাওয়া যায়নি।
ভাস্কর্য সরানোর প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে গতকাল শুক্রবার পুলিশ হামলা করেছে। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের উপর টিয়ার সেল ছোঁড়ে ও লাঠিচার্জ করে। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে তারা জলকামান ব্যাবহার করে। এতে ১০/১৫ জন আহত হয়েছে। আটক করা হয়েছে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকসহ ৪ জনকে। হামলা এবং আটকের প্রতিবাদে আজ শনিবার সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ কর্মসূচি আহ্বান করা হয়েছে।
এ দিকে সুপ্রিম কোর্ট চত্বর থেকে ভাস্কর্য সরানোয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে ঢাকা মহানগর শাখা হেফাজত ইসলাম। একই সঙ্গে তারা সারাদেশে স্থাপিত সব ভার্স্কর্য (মূর্তি) সরানোর দাবি জানান। গতকাল বাদ জুমা বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের তিন নম্বর ফটকের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে হেফাজত ইসলামের নেতারা এ দাবি জানান।
অপরদিকে ভাস্কর্যটি পুনঃস্থাপনের ব্যাপারে ভাস্কর মৃণাল হক সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাতে অ্যানেক্স ভবনের সামনে বেদীর কাজটুকু করা হয়েছে।
অপরদিকে ভাস্কর্যটি অ্যানেক্স ভবনের সামনেই প্রতিস্থাপন হচ্ছে কীনা- এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার সাব্বির ফয়েজ সাংবাদিকদের বলেছেন, এটি আমি ঠিক জানি না।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানন, বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ডেকেছিলেন এবং ভাস্কর্য বিষয়ে মতামত নিয়েছিলেন। এ সময় জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর জন্য ভাস্কর্যটি সরিয়ে নেওয়ার জন্য মতো দিয়েছিলেন। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আমরা বলেছি, ভাস্কর্যটি সুপ্রিম কোর্ট অ্যানেক্স ভবন সংলগ্ন জাদুঘরের সামনে স্থাপন করা যেতে পারে।
অপসারণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল
গতকাল শুক্রবার সোয়া বারোটার দিকে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ‘ছাত্র-জনতার প্রতিবাদ’-এর ব্যানারে সুপ্রিম কোর্ট অভিমুখে মিছিল নিয়ে যায়। এদের মধ্যে ছিলেন ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, উদীচী, অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট, ছাত্র ঐক্য ফোরামসহ বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। ভাস্কর্য সরানোর প্রতিবাদে মিছিল নিয়ে তারা হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে গেলে পুলিশ তাদের ওপর কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও জলকামান ব্যবহার করে। এতে ১০/১৫ জন আহন হন। এ সময় ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী, ঢাকা কলেজ সংসদের সভাপতি মোর্শেদ হালিম এবং লালবাগ থানার ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী জয় এবং উদীচী নেতা আরিফ নুরকে আটক করে পুলিশ।
ছাত্র ফ্রন্টের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সালমান সিদ্দিকী বলেন, আমরা হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে গেলেই পুলিশ আমাদের লক্ষ্য করে প্রথমে রঙিন গরম পানি এবং পরে টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এতে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের ২০-২৫ জন আহত হয়েছে।
এর আগে এগারটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন নাহার হল প্রাঙ্গণ থেকে মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যাালয়ের টিএসসি হয়ে শাহবাগে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এই সমাবেশে ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দীর সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সভাপতি নাঈমা খালেদ মনিকা, সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স, ছাত্র ঐক্য ফোরামের সরদার আল ইমরান প্রমুখ।
সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে ভাস্কর্য পুনঃস্থাপন এবং বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশি হামলা ও গ্রেফতারের প্রতিবাদে গতকাল বিকালে টিএসসিতে প্রতিবাদী মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ থেকে ভাস্কর্য পুনঃস্থাপন এবং আটককৃতদের অবিলম্বে মুক্তি দাবি করা হয়। সমাবেশ শেষে একটি মশাল মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবার টিএসসিতে এসে শেষ হয়।
একই দাবিতে সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আজ শনিবার বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের পক্ষ হতে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স এ ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচিতে পুলিশ হামলা করেছে। এর প্রতিবাদে আমরা সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবো।
পুলিশের হামলার ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার বলেন, হাইকোর্ট একটি সংরক্ষিত এলাকা। দেশের সর্বোচ্চ আদালতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এখানে সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ। তারা হাইকোর্টের ভেতরে প্রবেশ করতে চাইছিল। আমরা তাদের সকাল থেকে ঠেকানোর চেষ্টা করছি। দফায় দফায় কথা বলেছি। তারা রাজু ভাস্কর্য থেকে মিছিল নিয়ে মাজার গেটের প্রধান সড়কের ব্যারিকেড ভেঙে ফেলে। তখন তাদের ছত্রভঙ্গ করা হয়।
সব ভাস্কর্য ( মূর্তি) অপসারণের দাবি হেফাজতের
দেশে স্থাপিত সব ভাস্কর্য ( মূর্তি) অপসারণ করার দাবি জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। গতকাল বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সংগঠনটির ঢাকা মহানগর কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত এক শুকরিয়া আদায় সমাবেশে এ দাবি জানান ঢাকা মহানগর হেফাজতে ইসলামের সভাপতি মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী।
তিনি বলেন, ‘কোনো অবস্থায় রাস্তার পাশে মূর্তি স্থাপন মেনে নেওয়া চলবে না’। এ দেশে মূর্তি সংস্কৃতি চলবে না।
প্রধানমন্ত্রী তার প্রতিশ্রুতি মোতাবেক মূর্তি সরিয়েছেন, সে জন্য তার প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি উল্লেখ করে কাসেমী বলেন, তিনি ( প্রধানমন্ত্রী) যেন সব সময় ইসলামের খেদমত করতে পারেন এই দোয়া আমরা করছি।’
সমাবেশে হেফাজতের ঢাকা মহানগরের সহ-সভাপতি মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী বলেন, ‘বাংলার মাটিতে আর কোনো মূর্তি স্থাপন করা যাবে না। এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলে তৌহিদী জনতা দাঁত ভাঙা জবাব দেবে।’