শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪
অ্যানেক্স ভবনের সামনে ভাস্কর্য পুনঃস্থাপন
প্রকাশিত - মে ২৮, ২০১৭ ১০:১৭ এএম
অপসারণের ৪৮ ঘণ্টা পর সুপ্রিম কোর্ট অ্যানেক্স ভবনের সামনে পুনঃস্থাপিত হলো গ্রিক দেবীর ভাস্কর্যটি। ভাস্কর মৃণাল হক গত রাতে ভাস্কর্যটি পুনঃস্থাপন করেন। রাত ১০টার দিকে স্থাপনের কাজ শুরু হয়। শেষ হয় রাত ১টার দিকে। সুপ্রিম কোর্টের অ্যানেক্স ভবনটি বার কাউন্সিল গেটের প্রবেশ পথে। অ্যানেক্স ভবনের পানির পাম্পের সামনে রাখা ভাস্কর্যটি ছোট পিক আপ ভ্যানে করে অ্যনেক্স ভবনের সামনে নেওয়া হয়। এরপর উত্তোলক যন্ত্রের সাহায্যে পিক আপ ভ্যান থেকে ভাস্কর্যটি নামানো হয়। ঝালাই দিয়ে এটি স্থাপন করা হয়।
এ ব্যাপারে ভাস্কর মৃণাল হক বলেন, আজ (গতকাল শনিবার) সকালেই ভাস্কর্যটি পুনঃস্থাপন করতে সুপ্রিম কোর্ট থেকে নির্দেশনা কোর্টে পাই। ওই নির্দেশনা মোতাবেকই পুনঃস্থাপন করা হলো। পুনঃস্থাপনে সহায়তা করেন ৩৬ জন কর্মী। যারা বৃহস্পতিবার ভাস্কর্য অপসারনে সহায়তা করেছিল। তিনি আরও বলেন, বৃহস্পতিবার ভোর রাতের দিকে অ্যানেক্স ভবনের সামনে বেদির প্রাথমিক কাঠামো তৈরি করা হয়েছিল। মৃণাল হক আরো বলেন, ভাস্কর্যটি সরালাম, এটি আমাদের জন্য পরাজয়।
সুপ্রিম কোর্ট সূত্র জানায়, ভাস্কর্যটি মূল ভবনের সামনে থাকায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদ নামাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি হতে পারে এ বিবেচনায় এটি সরানো হয়েছে। অপরদিকে ভাস্কর্যটি অপসারণের ব্যাপারে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন , বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ডেকে ভাস্কর্য বিষয়ে মতামত নিয়েছিলেন। এ সময় সিনিয়র আইনজীবীরা অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর জন্য ভাস্কর্যটি সরিয়ে নেওয়ার জন্য মত দিয়েছিলেন। অ্যাটর্নি জেনারেল আরো জানিয়েছিলেন, আমরা বলেছি, ভাস্কর্যটি সুপ্রিম কোর্ট অ্যানেক্স ভবন সংলগ্ন জাদুঘরের সামনে স্থাপন করা যেতে পারে।
বৃস্পতিবার রাতেই সুপ্রিম কোর্ট মূল ভবনের সামনে ভার্স্কযটি অপসারণের পর সুপ্রিম কোর্ট অ্যানেক্স ভবনের সামনে বেদি স্থাপনের কাঠামো তৈরি করা হয়। ওই দিন অপসারণের পর ভার্স্কযটি সুপ্রিম কোর্টের অ্যানেক্স ভবনের পানির পাম্পের সামনে পুলিশ প্রহরায় নীল রঙের একটি ত্রিপল দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছিল।
ভার্স্কয স্থাপন
গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর ভাস্কর্যটি সুপ্রিম কোর্ট মূল ভবনের সামনে স্থাপন করা হয়। মৃণাল হক জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষের মৌখিক আদেশেই তিনি এটি তৈরি করেন। এটি তৈরিতে তার খরচ হয় প্রায় ১৮ লাখ টাকা। চলতি বছরের ২ ফেব্রয়ারী ভাস্কর্য অপসারণের দাবি করে মানববন্ধন করে ওলামা লীগ। এর ৪ দিনের মাথায় ৬ ফেব্রয়ারি হেফাজতের আমীর শাহ আহমদ শরীফ বিবৃতি দিয়ে ভাস্কর্য অপসারণের দাবি তোলেন। এর ১০ দিনের মাথায় হেফাজত প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতিকে স্মারকলিপি দেন। পরে মার্চের ৩ তারিখ বায়তুল মোকারম মসজিদের সামনে ইসলামী আন্দোলন অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ করে। সর্বশেষ গত ১১ এপ্রিল গণভবনে ওলামাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি নিজেও এই ভাস্কর্যটি পছন্দ করেননি। এর ৩৬ দিন পর গত ২৫ মে গভীর রাতে ভাস্কর্যটি সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবন থেকে অপসারণ করে ভাস্কর মৃণাল হক।
প্রতিবাদে বিক্ষোভ
সুপ্রিম কোর্ট চত্বর থেকে ভাস্কর্য সরানোর প্রতিবাদে এক বিক্ষোভ কর্মসূচিতে শুক্রবার পুলিশ হামলা করেছে। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের উপর টিয়ার সেল ছোঁড়ে ও লাঠিচার্জ করে। এ সময় বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান ব্যাবহার করে। এতে অন্তত দশ-পনের জন আহত হয়। গ্রেফতার করা হয় ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকসহ চারজনকে। এ ঘটনায় শুক্রবার রাতেই পুলিশ বাদী হয়ে ১৪০ জনকে আসামি করে শাহবাগ থানায় মামলা করে। অপরদিকে হামলা এবং আটকের প্রতিবাদে গতকাল শনিবার সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়। এ ছাড়া হেফাজতে ইসলামের দাবির মুখে সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে থেকে ভাস্কর্য অপসারণের বিষয়ে রাজনীতিতে বৈরী আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একই সুরে কথা বললেও প্রতিবাদ জানিয়েছেন রাজনীতি, সংস্কৃতিসহ প্রায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষ।
অপর দিকে সুপ্রিম কোর্ট চত্বর থেকে ভাস্কর্য সরানোয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে ঢাকা মহানগর শাখা হেফাজতে ইসলাম। একই সঙ্গে তারা সারা দেশে স্থাপিত সব ভাস্কর্য (মূর্তি) সরানোর দাবি জানান। সূত্র: ইত্তেফাক
Copyright © 2024 Sunbd24 - Latest News Update About DSE, CSE Stock market.. All rights reserved.