দেশের বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার সক্ষমতা বাড়াতে ৬১ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার ঋণ দেবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৪ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা।
সোমবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে এডিবির এ সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব কাজী শফিকুল আযম এবং এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর কাজুহিকো হিগুচি। এ সময় এডিবি ও ইআরডির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ পাওয়ার সিস্টেম ইনহ্যান্সমেন্ট অ্যান্ড ইফিসিয়েন্সি ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট শীর্ষক প্রকল্পে এ অর্থ ব্যয় করা হবে। জুলাই ২০১৬ থেকে জুন ২০২০ এই চার বছর মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।
অনুষ্ঠানে কাজী শফিকুল আযম বলেন, এটি এক বিলিয়ন ডলারের (১০৫ কোটি ৭৫ লাখ ডলার) প্রকল্প, যা দেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। আমাদের প্রেক্ষাপটে তাই প্রকল্পটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রকল্প বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে পিজিসিবি, ডেসকো এবং বিআরইবি এই তিন বাস্তবায়নকারী সংস্থার মধ্যে সমন্বয়।
কাজুহিকো হিগুচি বলেন, এ প্রকল্পে অর্থায়ন করতে পারাটা এডিবির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর মাধ্যমে প্রায় ১০ লাখ পরিবার বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আসবে। এসব পরিবারের অধিকাংশই গ্রামাঞ্চলের বাসিন্দা। এছাড়া প্রকল্পটি ঢাকার বর্ধিত বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানো এবং বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নে সাহায্য করবে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশ পাওয়ার সিস্টেম ইনহ্যান্সমেন্ট অ্যান্ড ইফিসিয়েন্সি ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট শীর্ষক প্রকল্প চার বছর মেয়াদে বাস্তবায়িত হবে এবং প্রাক্কলিত সর্বমোট ব্যয় ১০৫ কোটি ৭৫ লাখ মার্কিন ডলার। এর মধ্যে এডিবি দেবে ৬১ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার এবং অবশিষ্ট ৪৩ কোটি ৯৫ লাখ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ অর্থ সরকারের নিজস্ব অথার্য়ন থেকে ব্যয় করা হবে।
এডিবি ছাড়াও এই কর্মসূচিতে সহ-অর্থায়নকারী হিসেবে জাপান ফান্ড ফর পোভার্টি রিডাকশন (জেএফপিআর) শূন্য দশমিক ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান দেবে। এডিবি ওসিআর এবং সহজ শর্তেও ওসিআর (ওসিআর কনসেশনাল) ঋণ ৫ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ২৫ বছরে পরিশোধ করতে হবে। ওসিআর কনসেশনাল ঋণের বার্ষিক সুদের হার ২ শতাংশ এবং ওসিআর ঋণের সুদের হার লাইবোরভিত্তিক। এছাড়া ওসিআর ঋণের জন্য অব্যয়িত অর্থের ওপর শূন্য দশমিক ১৫ শতাংশ হারে কমিটমেন্ট চার্জ এবং শূন্য দশমিক ১০ শতাংশ হারে ম্যাচুরিটি প্রিমিয়াম প্রযোজ্য হবে।
বিদ্যুৎ বিভাগ এ প্রকল্পের উদ্যোগী বিভাগ। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড, ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই লিমিটেড (ডেসকো) এবং বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি) এ ঋণের আওতায় নেয়া প্রকল্পসমূহের বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসেবে কাজ করবে।
এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, দেশের বিদ্যুৎ খাতের সঞ্চালন এবং বিতরণ সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। এর মাধ্যমে দক্ষ এবং নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা। ঋণের আওতায় যেসব কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে সেগুলো হলো, আমিনবাজার-মাওয়া-মংলা ৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন প্রজেক্ট ডেসকো এলাকায় তত্ত্বাবধায়ক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা স্থাপন এবং উপাত্ত আহরণ, দুই প্রকল্পের আওতায় বিতরণ ব্যবস্থার আপগ্রেডেশন পুনর্বাসন এবং ঘনায়ন। এর মধ্যে একটি পর্যায়ে রয়েছে ঢাকা-ময়মনসিংহ, চিটাগাং এবং সিলেট বিভাগ এবং অন্য পর্যায়ে রংপুর, খুলনা এবং বরিশাল বিভাগ। এছাড়া সঞ্চালন এবং বিতরণ সংস্থাগুলোর সক্ষমতা বাড়াতেও ঋণের অর্থ ব্যয় করা হবে।
এদিকে রয়র্টাসের এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশে নিযুক্ত এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর কাজুহিকো হিগুচি’র উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ১০ লাখ পরিবার নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ পাবেন যাদের অধিকাংশই গ্রামীণ এলাকার।
প্রতিবেদনের বলা হয়েছে, ২০২১ সালের মধ্যে নাগরিকদের জন্য শতভাগ বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকারকে ৬১৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ সহায়তা দেবে এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)।
দেশজুড়ে ৫০ হাজার কিলোমিটারের বেশি গ্রামীণ বিদ্যুৎ লাইন সম্প্রসারণ ও পুনঃসংস্কারেও এই অর্থ ব্যয় হবে। এছাড়া ১৭৪ কিলোমিটারের ৪০০ কেভির বিদ্যুৎ লাইনের মাধ্যমে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর বিদ্যুৎ লাইনের সংযোগ ও রাজধানীতে বিদ্যুৎ বিতরণ নেটওয়ার্কের জন্য স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা স্থাপন করা হবে।
এই প্রকল্পের মোট ব্যয় প্রায় ১১০ কোটি মার্কিন ডলার। এর মধ্যে এডিবি প্রায় ৬০০ মিলিয়ন ডলার বাজারভিত্তিক ও ১৬ মিলিয়ন রেয়াতি ঋণ সহায়তা দেবে। এছাড়া এই প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকারের ব্যয় হবে প্রায় ৪৪১ মিলিয়ন ডলার।
এডিবির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গ্রামীণ এলাকার ৮ লাখ ৭৫ হাজার পরিবারসহ বাণিজ্যিক এলাকার মোট সাড়ে ৯ লাখ পরিবারকে নতুনভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে।