সপ্তম প্রজন্মের ল্যাপটপ বাজারে আনলো দেশীয় ব্র্যান্ড ওয়ালটন। এই ল্যাপটপ বেশ উচ্চগতির। মাল্টিটাক্সিং সুবিধা ও উন্নত ফিচারসমৃদ্ধ এই ল্যাপটপে ব্যবহৃত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক শীর্ষ আইসিটি ব্র্যান্ড ইন্টেলের শক্তিশালী কোর আই থ্রি প্রসেসর। দামেও বাজারে প্রচলিত অন্যান্য ব্র্যান্ডের চেয়ে প্রায় ২০ শতাংশ সাশ্রয়ী। প্যাশন সিরিজের ল্যাপটপটি ১৫.৬ ইঞ্চি ডিসপ্লে’র, যার মডেল- WP157U3G মূল্য ৩৫,৯৯০ টাকা।
বৃহস্পতিবার সকালে (১ জুন) এ উপলক্ষ্যে এক লঞ্চিং প্রোগামের আয়োজন করা হয়। রাজধানীর মতিঝিলে ওয়ালটন মিডিয়া অফিসের কনফারেন্স হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাজারে ছাড়া হয় আরো তিন মডেলের কোয়াডকোর প্রসেসর সমৃদ্ধ ল্যাপটপ। এগুলো হচ্ছে প্যাশন সিরিজের মডেল WP15b71G, WP14B71B এবং টেমারিন্ড সিরিজের WT15B71G মডেল। শিক্ষার্থীদের উপযোগী এই মডেলগুলোর মূল্য যথাক্রমে ২৪,৯৯০, ২৪,৫৫০ এবং ২৩,৯৯০ টাকা। বৃহস্পতিবার থেকেই দেশের সকল ওয়ালটন প্লাজা ও সেলস পয়েন্টে পাওয়া যাচ্ছে এই নতুন চার মডেলের ল্যাপটপ। এ নিয়ে ওয়ালটনের ল্যাপটপ প্রোডাক্ট লাইনে যুক্ত হলো ২৬টি ভিন্ন ভিন্ন মডেল। সব মডেলের ব্যাটারিতে ৬ মাসের এবং ল্যাপটপে থাকছে ২ বছরের ফ্রি বিক্রয়োত্তর সেবা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) সভাপতি ও বিজয় বাংলা ফন্টের উদ্ভাবক মোস্তফা জব্বার। উপস্থিত ছিলেন ওয়ালটন গ্রুপের বিপণন বিভাগের প্রধান সমন্বয়ক ইভা রিজওয়ানা, নির্বাহী পরিচালক এমদাদুল হক সরকার (মার্কেটিং), হুমায়ূন কবীর (পিআর অ্যান্ড মিডিয়া) এবং জাহিদ হাসান (পলিসি, এইচআরএম অ্যান্ড অ্যাডমিন), অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর ফিরোজ আলম (পিআর অ্যান্ড মিডিয়া), ল্যাপটপ বিভাগের প্রোডাক্ট ম্যানেজার আবুল হাসনাতসহ অন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সাশ্রয়ী মূল্যের নতুন এই ল্যাপটপ দ্রুতগতির এবং টেকসই। এছাড়া এর আরো কিছু বিশেষ দিক রয়েছে; যেমন-সুদৃশ্য ডিজাইন, উন্নত ফিচার, দারুণ পারফরমেন্স এবং বাংলা ফন্টযুক্ত মাল্টি ল্যাঙ্গুয়েজ কি-বোর্ড। প্রয়োজনীয় কাজ, গেম কিংবা বিনোদনে এই ডিজিটাল ডিভাইস দেবে আরো বেশি গতিময় অভিজ্ঞতা।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দুই শীর্ষ প্রতিষ্ঠান ইন্টেল ও মাইক্রোসফট এবং বাংলাদেশের ওয়ালটন- এই তিন প্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগে গত সেপ্টেম্বরে দেশের বাজারে আসে ওয়ালটন ল্যাপটপ। যাতে যুক্ত হয়েছে বিজয় বাংলা। এই ল্যাপটপ ইতোমধ্যেই প্রযুক্তিপ্রেমীদের কাছে দারুণভাবে সমাদৃত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সপ্তম প্রজন্মের প্রসেসরসমৃদ্ধ নতুন ল্যাপটপসহ শিক্ষার্থীদের জন্য আরো ৩টি সাশ্রয়ী মূল্যের ল্যাপটপ বাজারে ছাড়লো ওয়ালটন।
অনুষ্ঠানে মোস্তফা জব্বার বলেন, ১৬ কোটি মানুষের হাতে যদি কোনো ডিজিটাল যন্ত্র তুলে দিতে হয়, তবে সবার আগে দুটি বিষয় নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এক, পণ্যটি দেশে উৎপাদিত হতে হবে এবং দুই, তার দাম হতে হবে সাশ্রয়ী। কেবলমাত্র নিজের দেশে উৎপাদিত পণ্যই সাশ্রয়ী মূল্যে দেওয়া সম্ভব। বিদেশের যে ব্র্যান্ড বাংলাদেশে পণ্য নিয়ে আসে, তাদের প্রধান লক্ষ্যই থাকে সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জন। কিন্তু দেশীয় ব্র্যান্ড সবসময়ই চাইবে দেশের মানুষের কাছে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য তুলে দিতে। ওয়ালটন ইতোমধ্যেই সেই বিষয়গুলো নিশ্চিত করেছে এবং তারা সফল হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, অন্যান্য ব্র্যান্ড থেকে ওয়ালটন ল্যাপটপের দাম অন্তত ২০ শতাংশ কম। ওয়ালটনের আছে নিজস্ব গবেষণা ও উন্নয়ন (আরএন্ডডি) বিভাগ। যারা নিজেদের পণ্যের ডিজাইন ও মান উন্নয়ন নিয়ে গবেষণা করে। ওয়ালটনের মাদারবোর্ড কারখানা শিগগিরই উৎপাদনে যাবে বলে তিনি আশাবাদী। বাংলাদেশে তৈরি প্রযুক্তিপণ্য বিদেশে রপ্তানি হবে জানিয়ে ল্যাপটপের যন্ত্রাংশ ও কাঁচামাল আমদানিতে সরকার শুল্কমুক্ত সুবিধা বা সহায়ক শুল্কনীতি প্রণয়ন করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
ওয়ালটন ল্যাপটপ বিভাগের প্রোডাক্ট ম্যানেজার আবুল হাসনাত জানান, সপ্তম প্রজন্মের প্রসেসরযুক্ত ওয়ালটনের নতুন ল্যাপটপে ব্যবহৃত হয়েছে ১৫.৬ ইঞ্চির এইচডি এলসিডি ডিসপ্লে। এতে আছে ২.৪ গিগাহার্টস গতির কোর আই থ্রি ৭১০০ইউ প্রসেসর। বিল্টইন ইন্টেল এইচডি গ্রাফিক্স ৬২০। ফলে গেম খেলার সময় উচ্চ গ্র্যাফিক্যাল ইন্টারফেস পাওয়া যাবে। ভিডিও এডিটিং কাজে গ্রাফিক্যাল কালার ও মানও হবে অনেকটাই উন্নত। এর সঙ্গে রয়েছে ৪ গিগাবাইট ডিডিআর৪ র্যাম। ফলে এই ল্যাপটপে পাওয়া যাবে দারুণ গতি। প্রয়োজনীয় গেম, সফটওয়ার, ডকুমেন্ট, মুভি ইত্যাদি সংরক্ষণের জন্য এক টেরাবাইট হার্ডডিক্স ড্রাইভের সঙ্গে রয়েছে ৯.৫ মিমি সাটা ইন্টারফেস। সুযোগ থাকছে আরো বেশি জায়গাযুক্ত হার্ডডিক্স ড্রাইভ ব্যবহারের। দীর্ঘক্ষণ পাওয়ার ব্যাকআপের নিশ্চয়তায় নতুন এই ল্যাপটপে ব্যবহৃত হয়েছে শক্তিশালী ৪ সেলের স্মার্ট লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি। যা পাঁচ ঘন্টা পর্যন্ত পাওয়ার ব্যাকআপ দিতে সক্ষম।
তিনি জানান, শিক্ষার্থীদের জন্য সাশ্রয়ী মূলের অপর তিন মডেলের ল্যাপটপে ব্যবহৃত হয়েছে ১.৬ গিগাহার্টস গতির ষষ্ঠ প্রজন্মের কোয়াডকোর প্রসেসর। ৪ গিগাবাইট ডুয়াল চ্যানেল ডিডিআরথ্রিএল র্যাম, যা ৮জিবি পর্যন্ত বাড়ানো যাবে। বিল্টইন ইন্টেল এইচডি গ্রাফিক্স ৪০৫ থাকায় কাজে আসবে গতি। বিনোদন হবে আরো উপভোগ্য। ৫০০ গিগাবাইট স্টোরেজে অনায়াসেই সংরক্ষণ করা যাবে প্রয়োজনীয় ফাইল বা মুভি। ১৫.১ ও ১৪.১ ইঞ্চি পর্দার এসব লাপটপের এইচডি মানের এলসিডি ডিসপ্লে দেবে নিখুঁত ও জীবন্ত ছবি। বিভিন্ন কোণ থেকে ডিসপ্লে দেখা যাবে স্পষ্টভাবে। সব ল্যাপটপেরই ১ মেগা পিক্সেলের এইচডি ক্যামেরা থাকায় ভিডিও কল করা যাবে। ধারণ করা যাবে এইচডি মানের ভিডিও। চার সেলের লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি দেবে পাঁচ ঘন্টা পর্যন্ত পাওয়ার ব্যাকআপ।
উল্লেখ্য, মাত্র ২০ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ক্রেতারা ১২ মাসের সহজ কিস্তিতে কিনতে পারছেন টেমারিন্ড, প্যাশন, কেরোন্ডা ও ওয়াক্সজ্যাম্বু সিরিজের সব মডেলের ল্যাপটপ।