রমজান ইসলামী ক্যালেন্ডারের নবম মাস এবং ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি। প্রতি বছরই এ মাসটি রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের বারতা নিয়ে আমাদের মাঝে আগমন করে। সুবহে সাদিকের আগে সাহরি শেষ করে রোজা শুরু করতে হয় আর সূর্যাস্তের পর ইফতারের মধ্য দিয়ে রোজা শেষ হয়।
মাঝখানে এই সময়টা পানাহার থেকে বিরত থাকতে হয়। দীর্ঘ সময় পানাহার থেকে বিরত থাকার জন্য আমাদের মুখে দুগন্ধের সৃষ্টি হয়। মুখের দুর্গন্ধ ও দাঁতের সুস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য তাই আমাদের দরকার রমজান মাসে সাহরি ও ইফতারের পর দাঁতের নিয়মিত পরিচর্যা।
হাদিসে আছে, ‘রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর কাছে মিশকের সুগন্ধির চেয়েও সুগন্ধিযুক্ত।’ মূলত এই হাদিসের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা রোজাদারের জন্য তার ভালোবাসার ব্যাপ্তি বুঝিয়েছেন। দীর্ঘক্ষণ পানাহার থেকে বিরত থাকলে মুখে Salivation কম হয় যার ফলে Regular bacterial flow কম থাকে এবং মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়।
এই দুর্গন্ধ এড়ানোর জন্য সাহরির পর খুব ভালোভাবে দাঁত ব্রাশ করতে হবে যাতে মুখে Bacterial plaque না জমে। অনেকে মনে করেন যেহেতু রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর কাছে অনেক প্রিয় তাই তারা সাহরির পর আর ব্রাশ করার ওপর গুরুত্ব দেন না।
তাদের জেনে রাখা ভালো এখানে আল্লাহপাক দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকার জন্য যে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয় তার কথা বলেছেন, কিন্তু ঠিকমতো দাঁত ব্রাশ না করে food particle, bacterial plaque জমে মুখে বিশ্রী গন্ধের কথা বলেননি।
আর ইসলাম আমাদের সব সময়ই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রতি তাগিদ দেয়। হাদিসে বলা হয়েছে, ‘আত তুহুরু শাতরুল ঈমান’- পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ।
সাহরি ও ইফতারের পর অবশ্যই ঠিকমতো দাঁত পরিষ্কার করতে হবে। রোজা রাখা অবস্থায় ব্রাশ করা, মাউথওয়াশ ব্যবহার করা, ফ্লসিং করতে কোনো বাধা নেই। শুধু খেয়াল রাখতে হবে পানি বা মাউথওয়াশ যেন গলার ভেতর ঢুকে না যায়। মুখ ও দাঁতের তথা শরীর সুস্থ রাখার জন্য সাহরি ও ইফতারে প্রচুর পানি, কম ফ্যাট ও কম ক্যালরিযুক্ত খাবার, প্রচুর শাকসবজি ও টাটকা ফলমূল খেতে হবে।
তেলে ভাজা খাবার, অধিক ক্যালরিসমৃদ্ধ খাবার যেমন- ফাস্টফুড ও কোল্ডড্রিংকস কম খেতে হবে। এতে দাঁতে bacterial plaque কম হবে, Caries-এর আশংকা কম থাকবে, এসিডিটি কম সৃষ্টি হবে ও কোষ্ঠকাঠিন্য হবে না।
রমজানে দাঁতের চিকিৎসা : অনেকেই মনে করেন রোজা রেখে দাঁতের কাজ করানো যাবে না, ইফতারের পর কাজ করতে হবে। কিন্তু তাদের এ ধারণা ভুল। রোজা রেখেও দাঁতের কাজ করা যাবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন পানি বা রক্ত গলার ভেতর ঢুকে না যায়। রোজা রেখে দাঁতের যে চিকিৎসা করা যায়- সব ধরনের ফিলিং, রুট ক্যানেল ট্রিটমেন্ট, স্কেলিং, পলিশিং, দাঁত লাগানো, ক্যাপ, ব্রিজ, অর্থোডেন্টিক্সস ট্রিটমেন্ট, দাঁত হোয়াইটেনিং, দাঁত তোলা।
লেখক : বিডিএস (রাজ), ওরাল অ্যান্ড ডেন্টাল সার্জন, ইবনে সিনা ডেন্টাল সেন্টার, ধানমন্ডি, ঢাকা