গোটা তুরস্ক জুড়ে এখন যেন ঘড়ির কাঁটা নিয়ে চরম বিভ্রান্তি। কার্যত ‘রাত কত হল, উত্তর মেলে না’ এখন বহু তুরস্কবাসীর কাছে একটা মাথাখারাপ করা প্রশ্ন৷ তাঁদের সবার কাছে এখন একটাই প্রশ্ন, ‘এখন ঠিক কটা বাজে?’ এই বিভ্রান্তির মূলে আছে তুরস্ক সরকারের একটি সিদ্ধান্ত। পূর্ব ইউরোপের বুলগেরিয়া, ইউক্রেন কিংবা বালটিক রাষ্ট্র লিথুয়ানিয়া যেভাবে অটো ডিজিটাল সিস্টেমে দিনের আলো থাকা না-থাকার সঙ্গে ঘড়ির কাঁটা আগুপিছু করার বন্দোবস্ত মেনে নিয়েছে, তুরস্কের সরকার এখনই তা করতে নারাজ৷কিন্তু কম্পিউটার কিংবা বৈদ্যুতিন প্রযুক্তি তো আপনা থেকেই ডে লাইট সেভিং সিস্টেমে চলে গিয়েছে৷ যাঁদের জীবনযাত্রায় যে কোনওভাবে কম্পিউটার ঢুকে গিয়েছে তাঁরা তাহলে কীভাবে টাইম অ্যাডজাস্ট করবেন? তুরস্কের সরকারকে মানতে গেলে কম্পিউটার কথা শোনে না, আবার কম্পিউটার কিংবা মোবাইলের ডিজিট মেনে চলতে গিয়ে রাস্তায় প্রতিপদে হোঁচট খেতে হয়৷তাই তুরস্কের কম্পিউটার বা মোবাইল পরিষেবা ব্যবহারকারী মানুষের জীবনে এখন এটা প্রায় এক জীবন-মরণের প্রশ্ন, ‘কটা বাজে?’
বাকি পূর্ব ইউরোপের সঙ্গে তুরস্কেও অক্টোবরের শেষ রবিবার মধ্যরাতের কিছু পরেই ঘড়ির কাঁটা এক ঘণ্টা পিছিয়ে দেওয়া বা ‘ফল ব্যাক’ করার কথা ছিল। কিন্তু তুরস্ক সরকার শেষ মুহূর্তে স্থির করে, প্রক্রিয়াটায় তারা ছাড় দেবে আসন্ন নির্বাচনের পর৷ যাতে ভোটাররা দিনের আলোর সুবিধাটা পয়লা নভেম্বর ভোটের দিনে বেশি সময় পেতে পারেন।
ভোটপর্ব মিটে যাওয়ার পরের রবিবার, অর্থাৎ ৮ নভেম্বর মধ্যরাতের পর সময় পিছনোর প্রক্রিয়া কার্যকর করা হবে বলেও জানানো হয়েছে, অর্থাৎ নির্ধারিত সময়ের ঠিক দু’ সপ্তাহ বাদে। কিন্তু তুরস্কের ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে তো আর এই নতুন ফরমান কার্যকর করা যায়নি। তারা রীতিমাফিক কাঁটা এক ঘণ্টা পিছিয়ে দিয়েছে পূর্বনির্ধারিত সিস্টেমে, আর সেখান থেকেই সময় বিচার নিয়ে গণ্ডগোলের সূত্রপাত। বুলগেরিয়া, লিথুয়ানিয়া বা ইউক্রেনের মতো যে দেশগুলি ইস্টার্ন ইউরোপিয়ান টাইম (ইইটি) অনুসরণ করে, তারা সরকারিভাবেই যথারীতি ঘড়ির কাঁটা যথাসময়েই পিছিয়ে দিয়েছে। ফলে সোশ্যাল মিডিয়াতে ঠাট্টা করে অনেকে লিখছেন, তুরস্ক এখন ইইটি-তে নয়, বরং ইইএসটি-তে চলছে – অর্থাৎ কিনা যাকে বলে ‘এরদোগান ইঞ্জিনিয়ার্ড স্ট্যান্ডার্ড টাইম’। তুর্কি সরকারের এই খামখেয়ালিপনায় মজা পেয়ে অনেকে প্রেসিডেন্ট রেসিপ তায়েইপ এরদোগানকে ব্যঙ্গ করে ওই দেশের নিজস্ব স্ট্যান্ডার্ড টাইমকে ‘এরদোগান টাইম’ বলেও সোশ্যাল মিডিয়ায় মন্তব্য করছেন।
হ্যাশট্যাগ #saatkac, যার অর্থ হল ‘এখন কটা বাজে?’ এই মুহূর্তে এই সময় বিচারই তুরস্কে ট্যুইটার ব্যবহারকারীদের মধ্যে দারুণ ট্রেন্ডিং, সবাই সেখানে নিজেদের বিভ্রান্তি প্রকাশ করছেন। কী আর করা যাবে, আগামী দু’ সপ্তাহের জন্য তুরস্কের টেক-স্যাভিদের এই ঘড়ি বিভ্রান্তির মধ্য দিয়েই এগতে হবে!