বাবা দিবস উপলক্ষ্যে প্রিয় বাবাকে নিয়ে অন্য অনেকের মতো ফেসবুকে লিখেছেন ঢালিউড অভিনেত্রী পরিমণি। রবিবার ফেসবুকে তিনি লিখেছেন,
#বাবা,
তুমি কি বাবা! নাহ তোমাকে কিছু লিখবো না আমি আজ। লিখবো তোমাকে নিয়ে...।
হ্যালো ফেসবুক দুনিয়া, শোন কতই তো বাবা দিবস গেল। আমি শুধু দেখেই গেছি সবার বাবা দিবসের কত কত পোস্ট ...এবার আমিও দিলাম। দেয়ার একটা কারণ ছিলো। কারণটা স্ট্যাটাস এ লিখেছিলাম একবার। আজ লিখতে গেলে আবার মেজাজটা সামলাতে পারবো না হয়তো।
যাই হোক, ছবিটাতে আমি আমার বাবা মনিরুল ইসলাম এর সাথে। বাবা বেঁচে নেই আজ ৮ বছর হয়ে যাচ্ছে...বাবা পুলিশ ছিলেন। বাবার শরীরে পুলিশের পোশাক দেখে আমার ছোট্ট বেলার লক্ষ্য জন্মেছিল পুলিশ হবার। মা মরে যায় তখন আমি ৩ বছরেরও কম ছিলাম। বাবা এই ধাক্কাটা নিতে পারছিলেন না বলে দেশ ছাড়েন। বাবার ছায়া করে পাই নানুভাইকে।
নানু-নানি দুজনই টিচার। নানু বাড়ী আর দাদু বাড়ী দু'বাড়ীরই বড় নাতনি আমি। অনেক আহ্লাদে বড় হওয়া আমার। কখনো এক বিন্দু অনুভব করিনি মা-বাবার শূন্যতা। ভুল করেও মনে পড়েনি কখনো। এমনকি এখনো ভাবি আসলে মা-বাবা কি জিনিস!
আজ সত্যি যদি বলি আমার বাবা হলেন আমার নানুভাই শামসুল হক গাজী। আর আমার জন্মদাতা বাবা হলেন মনিরুল ইসলাম। ওহ একটা মজার বিষয় বলি, অনেকেরই আমার নাম নিয়ে কৌতূহল দেখেছি। আসল নাম, ডাক নাম কে রেখেছে ইত্যাদি ইত্যাদি...নাম কখনো আসল নকল হয় নাকি? হাহাহাহা। হতে পারে ডাক নাম অথবা সার্টিফিকেট নাম। আমার পরী নামটা আমার নানিমনির দেয়া। তার নানির নাম ছিলো পরীবিবি। আমার জন্মের কিছুদিন আগে তার নানি মারা যান আর আমার জন্মের পর আমার নাম পরী হয়ে যায়। আর মনিটা সবাই আদর করেই চালু করে দিল।
আমার সার্টিফিকেট নাম শামসুন্নাহার স্মৃতি। শামসুন মানে সূর্যের আলো। নানুভাই এর নামের সাথে মিল করে এই নাম। আর স্মৃতিটা বাবার জীবনের প্রথমবার হজ করতে যেয়ে ঠিক করেছিলেন আল্লাহর কাছে মেয়ে চেয়ে। যদিও বাবা তখন নাকি বিয়েই করেননি। এসব বাবার কাছে শোনা আমার। বাবা মরে যাবার পর আমার স্মৃতি নামটা কেবল স্মৃতিই হয়ে গেল।
সবাই বলে মেয়েরা নাকি একটু বাবার স্বভাবি বেশি হয়। আমারও নাকি বাবার মতো বদমেজাজ, অনেক বেশি আবেগপ্রবণ, স্পটভাষী, প্রচণ্ড সাহস এসব পেয়েছি। বাবার সাথে আমার অনেক বেশি স্মৃতি নেই। বড় হবার পর বাবাকে কাছে পেয়েছিলাম এক বছরের মতো। মনে আছে যেদিন বাবা দেশে ফিরে প্রথম আমার সামনে আসে...একটা ছোট্ট বাচ্চার মতো শব্দ করে সেকি কান্না!
কতো যে রাত পোয়াতো বাবা মেয়ের... শুধু আমার ছোট্ট বেলার যতো গল্প কাহিনী... একদিন বাবার একটা সাদা রংয়ের শার্ট আমাকে দিয়ে খুলতে বললো। খুলে দেখি শার্টের ভেতর আঁকা বাঁকা হাতে শুধু বাবা বাবা...লেখা...দেখেই বোঝা যাচ্ছিল হাতের লেখাটা একটা বাচ্চার হাতের।
বাবা বুকের মধ্যে আমাকে ধরে চুপ করে ছিলো। অনেক্ষণ পরে বললো 'জানো এখানে ২৭৩ বার বাবা লেখা আছে। তুমি কেবল লিখতে শুরু করেছিলে তখন। কলম হাতে দেয়ার পর যেখানেই সুযোগ পেতে সেখানেই ছোট্ট করে বাবা শব্দটা লিখতে। '
ওহ আমিতো ভুলেই গেছিলাম যে আমি ফেসবুকে লিখছি। সরি আসলে বাবা নিয়ে লেখার সীমারেখাটা আমার জানা নেই হয়তো। থাক আর না লিখি আজ। ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল বাবা।