বাংলাদেশের মুসলিম ধর্মালম্বীদের কাছে শত শত বছরের একটি ঐতিহ্যবাহী শব্দ ‘ঈদ’। কিন্তু এই শব্দটি পরিবর্তনের প্রক্রিয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলা একাডেমি। আর এটা নিয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় বইছে। দেশবাসী এটাকে ভালো চোখে দেখছেন না। এজন্য সমালোচকদের কেউ কেউ এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তাক্ষেপও কামনা করেছেন।
এ প্রসঙ্গে আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো গানের সুরকার ভাষা সৈনিক শহীদ আলতাফ মাহমুদের কন্যা শাওন মাহমুদ ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, শোনেন রে ভাই বাংলা একাডেমী। আমার এই বয়সে এসে নতুন করে বানান মুখস্থ করবার মগজের সেই অংশ নষ্ট হয়ে গেছে। সুতরাং বাকী জীবন আমি 'ঈদ' শব্দটি ঈদ বানানেই লিখবো। কখনই 'ইদ' লিখবো না। সারা জীবন যেমন 'সেহরী' বলেছি তাই বলবো। 'সাহরি' নয় হুম।
এরপর সেই স্ট্যাটাসে 'ঈদ' সমর্থনে অনেকেই কমেন্ট করেছেন। এদের মধ্যে জেমস বিজয় নামে এক ব্লাগার লিখেছেন, বুবু, এতোদিন বাংলা একাডেমী কি জানতো না ঈদ বিদেশী শব্দ, হঠাৎ করে ২০১৭ সালে এসে মনে হলো কেন? ঈদ কে ইদ করায় কেমন জানি ন্যাংটা ন্যাংটা লাগছে।
রিফাত জামিল ইউসুফজাই নামের আরেকজন 'ঈদ'কে সমর্থন দিয়ে বাংলা একাডেমিকে পরামর্শ দিয়ে লিখেছেন, অনেক ভাষাতেই বানানরীতি সহজ করা হয়/হয়েছে। বাংলায় সহজ বানান আরও সহজ করার চাইতে বরং জটিল যুক্তাক্ষরগুলি ভেঙ্গে সহজ করা দরকার।
সাহিত্য সমালোচক, কবি ও ভাষাতাত্ত্বিক সাখাওয়াত টিপু তার ফেসবুকে 'ঈদ' শব্দটি নিয়ে বেশ কয়েকটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। বাংলা একাডেমি ঈদকে "ইদ" লিখেছে। বাংলা বানানে খবরদারির শেষ কোথায়? ভাষাবিকৃতি নিন্দাজনক কাজ।
পরের স্ট্যাটাসে প্রশ্ন রেখে তিনি লেখেন, 'ঈদ' বানান এভাবে 'ইদ' বললে 'ইঁদুর ইঁদুর' কালচার মনে হয়। আরবি 'ঈদ' মানে 'আনন্দ'। কিন্তু 'ইদ' মানে কি আনন্দ?
পরে সাখাওয়াত টিপু আরও লেখেন, এক ভাষা থেকে অন্য ভাষার শব্দ তার ভাব ও ধ্বনিগতভাবে শব্দ আত্মীয়করণ করে। গায়ের জোরে শব্দ বিকৃতকরণ ভাষার ফ্যাসিবাদ। এটা বল প্রয়োগের সংস্কৃতি! 'ইদ' নয়, লিখুন 'ঈদ'। 'ইদ' শব্দ ভুল!
সাংবাদিক আরাফাত সিদ্দিকী তার স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘অভিধানে ঈদ বানান পরিবর্তন করে 'ইদ' করা হয়েছে। এনিয়ে ফেসবুকে চরম প্রতিক্রিয়া চলছে। যা মনে হচ্ছে, তাতে এবার ইদ অনেকে বয়কট করতে পারে! এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাই। ’
ফেসবুকে চোখ ফেললে এমন অসংখ্য স্ট্যাটাস চোখে পড়ছে। যারা 'ঈদ' শব্দটি ইদ না লেখার পক্ষে সরব হয়েছেন। এই তালিকায় রয়েছেন শিক্ষক, লেখক, সাংবাদিক ও শিক্ষার্থীসহ প্রায় সব শ্রেণির মানুষ।