চিকুনগুনিয়া একটি ভাইরাসবাহিত রোগ। ডেঙ্গু রোগের ভাইরাস যে এডিস মশা বহন করে, সেই একই মশাই চিকুনগুনিয়া ভাইরাসেরও বাহক। তবে এই রোগে মৃত্যুর ঝুঁকি নেই। ঝুঁকি থাকলে ভোগান্তিও বেড়ে যেত কয়েকগুণ।
সামনে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর, আর এই ঈদে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে পুরো দেশ! বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা বলছেন এই ঈদে অনেকেই এ রোগে আক্রান্ত হয়ে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে যাবেন। এই সুযোগে আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে মশা এ রোগ অন্যান্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে যেতে পারে। এ বিষয়ে কথা হয় গ্যালাক্সি হসপিটালের ডাক্তার ডা. মোস্তফা কামাল রউফের সাথে।
তিনি বলে, “ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে টিকিট কাউন্টারের হিসাব মতে, প্রতিদিন প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ জন এখানে চিকুনগুনিয়া রোগের চিকিৎসা নিতে আসছেন।”
রোগের ইতিহাস: এ রোগের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে গেলে দেখা যায় ১৯৫২ সালে প্রথম তানজানিয়াতে এই ভাইরাস জ্বর দেখা দেয়। তবে বাংলাদেশে প্রথম ২০০৮ সালের দিকে চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত রোগীর দেখা মেলে। চলতি বছরের এপ্রিলের শেষ দিকে হঠাৎ করেই এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে। আর মে -জুন মাসে এসে তা মহামারি আকার ধারণ করেছে।
যেভাবে ছড়ায়: বাসার আশেপাশে ফেলে রাখা মাটির পাত্র, কলসি, বালতি, ড্রাম, ডাবের খোসা ইত্যাদি যে সব স্থানে পানি জমতে পারে, সেখানে এডিস মশা প্রজনন করে।
রোগের লক্ষণ: চিকনগুনিয়ার বড় লক্ষণ অস্থি সন্ধিতে তীব্র ব্যথা। এছাড়া মাথা ব্যথা, বমি বমি ভাব ও শরীর প্রচণ্ড দুর্বল হয়ে যায়। জ্বর চলে যাওয়ার পরও এ শারীরিক দুর্বলতা ও অস্থি সন্ধিতে ব্যথা থাকতে পারে। স্বাভাবিকভাবে এই ব্যথা ৫-৭ দিনের মধ্যেই ভালো হয়ে যায়। অনেক সময় তা ২১ দিন থেকে ৩ মাস বা তারও বেশি সময় থাকে।
চিকিৎসা: এ জ্বরে প্রচুর পানি, সরবত, ওরস্যালাইন, ডাবের পানি পান করতে হবে। রোগীকে পানি দিয়ে শরীর মুছিয়ে দেয়া ও জলপট্টি দেয়াসহ অন্যান্য সেবা দিতে হবে। আর জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল খাওয়া যেতে পারে। এছাড়া অন্য ওষুধ গ্রহণের প্রয়োজন নেই।
রোগীকে আবার যেন মশা না কামড়ায় এজন্য তাকে মশারীর ভেতরে রাখাই ভালো। কারণ আক্রান্ত রোগীকে মশায় কামড় দিয়ে কোন সুস্থ লোককে সেই মশা কামড়ালে ঐ ব্যক্তিও এই রোগে আক্রান্ত হবেন। এছাড়া চিকুনগুনিয়া জ্বরের কোন প্রতিষেধক নেই, কোন ভ্যাক্সিন বা টিকাও নেই। তাই রোগ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হল এডিস মশা প্রতিরোধ।
বিশেষজ্ঞদের মতামত: বর্তমানে চিকুনগুনিয়া শুধু শহর অঞ্চলে বেশী তার মধ্যে ঢাকা শহরে সবচেয়ে বেশী আকার ধারণ করেছে। এই চিকুন গুনিয়া সারাদেশে মহামারি আকার ধারণ করতে পারে বলে পূর্ব সতর্কতাবাণী জানিয়ে দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
চিকুনগুনিয়া বিশেষজ্ঞ ডা.মোস্তফা কামাল রউফ বিডিটোয়েন্টিফোরলাইভকে বলেন, ঈদের পরপরই সারা দেশে চিকুনগুনিয়া ছড়িয়ে পরবে। এর কারণ হিসাবে তিনি বলেন, বর্তমান শহরের মানুষের চিকুনগুনিয়া বেশী হচ্ছে আর সামনে ঈদে সবাই বাড়ি যাবে তখনি সারা দেশ চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হবে। তিনি বলেন, এডিস মশাই চিকুনগুনিয়ার ভাইরাস বহন করে এ মশা যাকে কামড়াবে সে চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত হবে।
চিকুনগুনিয়া থেকে মুক্তির উপায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, এর থেকে বাচতে হলে মশা কে নিধন করতে হবে। শেষ রাতে সেহরী খাবার পরে মশারী ছাড়া ঘুমানো যাবে না। তিনি বলেন, মশা গোধূলি ও উষা লগ্নে মানষদেরকে বেশী কামড়ায়। তবে গোধূলীর সময় মানুষ সজাগ থাকে বিধায় মশা তেমন আক্রমণ করতে পারেনা। কিন্তু উষার সময় মানুষ ঘুমিয়ে থাকে আর তখনি মশা আক্রমণের উপযুক্ত সময় পায়। এজন্য শেষ রাতে মশারী ঘুমানো যাবে না। তবে চিকুনগুনিয়া একবার যার হয়েছে সে ২য় বার আর এই ভাইরাসে আক্রান্ত হবেনা।
সিটি কর্পোরেশনের এক কর্মকর্তা বলেছেন: আমরা আমাদের সাধ্য মত চেষ্টা করছি, মশা নিধনের জন্য বিষ দিচ্ছি। মশা নিধন হচ্ছে না কেন? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা তো রাস্তায় রাস্তায় বিষ দিচ্ছি বাসায় গিয়ে তো আর দিতে পারবো না। বাসার ভিতরে যে মশা থাকে তার দায়িত্ব যার বাসা তাঁর। তবে চিকুনগুনিয়া কে ভয় না পেয়ে সবাই সর্তক থাকতে হবে।
আমাদের করণীয়: যারা চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হননি তাদের অবশ্যই ঘুমানোর আগে মশারী টাঙ্গিয়ে ঘুমাতে হবে। আর যারা চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন তারা ফলমূল ও পানি জাতীয় খাবার বেশী খাবেন।