‘বিদেশী হত্যাকাণ্ডে বিএনপি নেতাদের জড়ানো কাল্পনিক’
আপডেট: ২০১৫-১০-২৯ ০০:৫৩:৫৪
সম্প্রতি দুই বিদেশী নাগরিক হত্যাকাণ্ডে বিএনপি নেতাদের জাড়ানোকে ‘কাল্পনিক ও অসত্য’ বলে দাবি করেছে বিএনপি। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বুধবার সংবাদ সম্মেলনে দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘বিএনপির কোনো কোনো নেতার নাম জড়িয়ে সরকারের তরফ থেকে যে সব আজগুবি, কাল্পনিক ও অসত্য অভিযোগ করা হচ্ছে তাতে সত্যের লেশমাত্রও নেই। আমরা সরকারের এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি ও বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’
আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, সম্প্রতি দেশে দু’জন বিদেশী খুনের ঘটনার সাথে শুরু থেকেই সরকারের তরফ থেকে তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের প্রতি ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছিল। সে প্রেক্ষাপটে বিএনপির ঢাকা মহানগর নেতা আব্দুল কাইয়ুম ও হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকে জড়িয়ে যে প্রপাগান্ডা করা হচ্ছে তাতে প্রকৃত অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাবে এবং হত্যাকাণ্ডের মোটিভ ও খুনিদের বিচার করাও সম্ভব হবে না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই এই দুঃখজনক হত্যাকাণ্ডের কূলকিনারা করার জন্য অপরাধীদের আইনের আওতায় বিচারের দাবি করে আসছি। একইসাথে এই দাবিও করেছি যে, যাতে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করার উদ্দেশ্যে এই হত্যাকাণ্ডের রাজনৈতিকভাবে অপব্যবহার না করা হয়।’
‘কিন্তু সরকার ইতালীয় নাগরিক তাভেল্লা সিজার হত্যাকাণ্ডে তাদের চিরায়ত অভ্যাস অনুযায়ী অপরাজনীতিরই আশ্রয় নিলেন, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানচ্ছি। সরকারের এ ধরনের পদক্ষেপ তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে প্রতিহিংসার অনলে পুড়িয়ে ধ্বংস করার দুরভিসন্ধি ছাড়া আর কিছুই নয়’, বলেন রিপন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘কিছুদিন ধরে কয়েকটি পত্র-পত্রিকায় বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার বরাতে বিএনপির ক’জন নেতাকে জড়িয়ে যে মনগড়া প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে আমরা তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এ সব প্রতিবেদনে ‘একজন কথিত বড় ভাইয়ের’ হুকুমদাতা হিসেবে উল্লেখ করার পর গতকাল (মঙ্গলবার) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যমুনা টিভিকে তথ্য জানান যে, ‘বিএনপি নেতা কাইয়ুম সেই ‘বড় ভাই’। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বরাতে বিডি নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমও একই সংবাদ প্রচার করায়, আমাদের পূর্বে জানানো আশঙ্কাই প্রমাণিত হল যে, সরকার বিদেশী খুনে বিএনপির কোনো কোনো নেতার নাম জড়িয়ে দলটিকে হয়রানি করবে।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা খুব স্পষ্ট করে দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল হিসেবেই তার রাজনীতি পরিচালনা করে। এ দল হত্যা-খুনের রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়।’
‘বিএনপি সরকারের সকল অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী নীতির প্রতিবাদ গণতান্ত্রিক পন্থায় করে থাকে এবং শুধু অবাধ ভোট ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়েই জনগণের রায় নিয়ে দেশ পরিচালনা করেছে এবং ভবিষ্যতেও একই পন্থায় ক্ষমতায় আসতে চায়’, যোগ করেন তিনি।
রিপন বলেন, ‘কোনো চোরাগলি, ষড়যন্ত্রের পথ বেয়ে বিএনপি ক্ষমতায় আসার নীতিকে ঘৃণা করে।’
বাংলাদেশে বিরাজমান রাজনৈতিক ব্যবস্থায় গত কয়েক দশক ধরে পালাক্রমে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ দেশ শাসন করে এসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটি সত্য যে, বিএনপি ও আওয়ামী লীগ পরস্পরের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। কিন্তু বিএনপি তার প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিকভাবেই মোকাবেলা করে আসছে। অথচ শাসক দল তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দেশে-বিদেশে ভিন্নভাবে বিকৃত করার অপপ্রয়াস নিয়েছে। দেশে যখন নির্দলীয় সরকারের অধীনে দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার দাবি ক্রমেই জোরালো হচ্ছে তখন সেই দাবিকে পাশ কাটানোর লক্ষ্যে বিএনপিকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন এবং এর নেতাদের সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করার একটি অপচেষ্টা শাসক দলের মধ্যে লক্ষ্য করা যাচ্ছে।’
‘এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও বিএনপিকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে পরিচিত করানোর একটি অপচেষ্টা শাসক দলের পক্ষ থেকে ছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের আদালত গত ৭ জুলাই এক রায়ে সুষ্পষ্টভাবে জানিয়েছেন যে, বিএনপি কোনোভাবেই একটি সন্ত্রাসী সংগঠন নয়,’ বলেন তিনি।
দেশের শত বছরের পুরনো ঐতিহ্য ধারণ করে সকল ধর্মাবলম্বী মানুষ সুখে-শান্তিতে ধর্মাচার পালন করে আসছেন উল্লেখ করে রিপন বলেন, ‘গত আশুরা উপলক্ষে ঢাকার হোসেনী দালানে যে জঘন্য, পৈশাচিক হামলার ঘটনা ঘটেছে সেটির তীব্র নিন্দা ও সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিচারের দাবি আমাদের দল ইতোমধ্যেই করেছে।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের ঘনিষ্ঠ সমর্থক দৈনিক পত্রিকা হিসেবে পরিচিত দৈনিক জনকণ্ঠে ২১ অক্টোবর ‘তাজিয়া মিছিল থেকে নাশকতার পরিকল্পনা’ শীর্ষক একটি দীর্ঘ প্রতিবেদনে নানা ষড়যন্ত্রের কথা প্রকাশিত হয়েছিল। অথচ ২৪ অক্টোবর হোসেনী দালানে শিয়া সম্প্রদায়ের ওপর যে বর্বরোচিত হামলার ঘটনা কিভাবে ঘটল তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বলা হয়।’
রিপন বলেন, ‘দেশের সার্বিক নিরাপত্তা ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্ব সরকারের। ওই পত্রিকার তথ্য অনুযায়ী সরকারি গোয়েন্দা সংস্থা যদি আগেভাগেই সব অবহিত থেকে থাকে তাহলে এ ধরনের নাশকতা রোধ করা কেন সম্ভব হল না?’
নিছক ‘ব্লেম গেম’ খেলে বিরোধী দলকে সন্ত্রাসী সাজানোর খেলা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ভিতকে ক্রমেই কাঁপিয়ে দিচ্ছে উল্লেখ তিনি বলেন, ‘সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান- ‘ব্লেম গেম’ খেলা বন্ধ করুন। বিরোধী দল ও তার নেতৃত্বকে সন্ত্রাসী সাজানোর অপচেষ্টা অপরাজনীতির বিষবৃক্ষকেই শুধু শক্তিমান করবে। তাতে সরকার সাময়িকভাবে লাভবান হতে পারে বটে, কিন্তু এ দেশের মানুষের সকল গণতান্ত্রিক অর্জন তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে বিদেশে, নিরাপত্তাহীনতার প্রশ্নে দেশে বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, দেশের মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়বে। এ পরিস্থিতি কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।’
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে সবাই আমরা দল-মত-ধর্ম নির্বিশেষে একযোগে কাজ করতে চাই বাংলাদেশের সমৃদ্ধির স্বার্থে। এখানে কোনো সংকীর্ণ দলবাজী নয়, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্মূল করার নীলনকশা থেকে সরকারকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানাই।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যে চারজনকে ধরা হয়েছে তারা বিএনপি কেউ না। আমরা চাই প্রকৃত রহস্য উন্মোচন হোক, কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যে বলির পাঠা না হয়।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, ‘বিএনপি কোনো হত্যা, খুনের রাজনীতি বিশ্বাস করে না। সুতরাং এখানে যদি কোনো নিরপেক্ষ তদন্ত হয় সেখানে বিএনপির নেতাকর্মীর কোনো হত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা পাবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার জিয়াউর রহমান, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, সহ-দফতর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি, শামীমুর রহমান শামীম, আসাদুল করিম শাহীন, নির্বাহী কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, তকদির হোসেন জসিম প্রমুখ।