১২ লাখ মানুষের জন্য ২৭ জন ডাক্তার

প্রকাশ: ২০১৭-০৭-১৮ ১০:১৬:৩৫


Hospitalচিকিৎসক সঙ্কটে স্থবির হয়ে পড়েছে বরগুনা জেলার স্বাস্থ্যসেবা। জেলা সদর হাসপাতালসহ ৫টি উপজেলায় ১৬৬ পদের বিপরীতে কাগজে-কলমে কর্মরত রয়েছেন ৩৮ জন। আর এদের মধ্যে অন্তত ১১ জন রয়েছেন প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড এবং অন্যত্র ডেপুটেশনে। ফলে জেলার ১২ লাখ মানুষের জন্য বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ২৭ জন চিকিৎসক। আর এ কারণে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে উপকূলীয় জেলা বরগুনার মানুষ। স্বাস্থ্য বিভাগ কর্মকর্তাদের দাবি, চিকিৎসক সঙ্কটের বিষয়টি একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না।
বরগুনা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বরগুনার প্রায় ১২ লাখ মানুষের উন্নত স্বাস্থ্যসেবার একমাত্র অবলম্বন বরগুনা জেনারেল হাসপাতালটি ১৯৯৭ সালে ১শ’ শয্যায় উন্নীত করা হয়। এরপর শয্যা, ওষুধ ও খাবার ছাড়া, আজও বরাদ্দ দেয়া হয়নি জনবল। হাসপাতালটিতে ৪২ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন ৫ জন চিকিৎসক। যার মধ্যে একজন রয়েছেন প্রশাসনিক কাজের দায়িত্বে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে। অন্যদিকে ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণের জন্য ভবন নির্মাণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। কিন্তু গাইনি, এ্যানেসথেসিয়া, প্যাথলজি, রেডিওলজি, দন্ত, নাক-কান-গলাসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভাগগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে কোনো চিকিত্সক নেই। চিকিৎসকের পাশাপাশি নার্সসহ অন্যান্য লোকবলেরও রয়েছে ব্যাপক সঙ্কট। ফলে দিন দিন রোগীদের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করছে।
শুধু জেলা সদর হাসপাতাল নয়, জেলার অন্য ৫টি উপজেলা হাসপাতালের ১৩৩টি পদের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৩৩ জন চিকিৎসক। যার মধ্যে অন্তত ১০ জন রয়েছেন প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড এবং ডেপুটেশনে। ফলে পুরো জেলার স্বাস্থ্যসেবা বর্তমানে রয়েছে হুমকির মুখে।
বরগুনা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, জেলার আমতলী উপজেলা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-এ ২১ জন চিকিত্সকের বিপরীতে কর্মরত আছে মাত্র ৪ জন সহকারী সার্জন (অস্থায়ী রাজস্ব খাতভুক্ত), একজন ডেন্টাল সার্জন এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। এছাড়া উপজেলার ১০টি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ৪ জন মেডিক্যাল অফিসার এবং ৭ জন সহকারী সার্জন থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে একজনও কর্মরত নেই।
অন্যদিকে তালতলী ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ৭ জন চিকিৎসকের বিপরীতে ২ জন চিকিত্সক কাগজে-কলমে থাকলেও তাদের মধ্যে ডা. সতীন্দ্রনাথ গাইন বর্তমানে অন্ধ এবং অন্যজন গত ৩১ জানুয়ারী স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণের জন্য আবেদন দাখিল করেছেন। পাথরঘাটা উপজেলা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২১ জন চিকিত্সকের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন ৪ জন। কাগজে-কলমে ডা. মানসুরুল ইসলাম নামে আরেকজন চিকিৎসক থাকলেও তিনি ডেপুটেশনে কর্মরত রয়েছেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
তাছাড়া উপজেলার ৭টি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ৭ জন চিকিত্সকের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ২ জন। বেতাগী উপজেলা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২১ জন চিকিত্সকের বিপরীতে কর্মরত রয়েছে মাত্র ৩ জন। এছাড়া উপজেলার ৭টি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ৭ জন চিকিত্সকের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৩ জন। বামনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০ জন চিকিত্সকের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৩ জন। এছাড়া উপজেলার ৪টি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ৪ জন চিকিত্সকের বিপরীতে কর্মরত আছেন ২ জন। বরগুনা সদর হাসপাতালে কর্মরত অফিস সহায়ক জাকির হোসেন বলেন, গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে চিকিত্সক না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে এ হাসপাতালে সিজার হচ্ছে না। অন্য উপজেলা থেকে ডেপুটেশনে চিকিত্সক এনে চলছে জরুরি বিভাগ।
বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. জসিম উদ্দিন হাওলাদার বলেন, চিকিত্সক সঙ্কটের কারণে এ মুহূর্তে হাসপাতালের চিকিত্সা সেবা ঠিকভাবে চালানো যাচ্ছে না। তারপরেও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি যতদূর সম্ভব বরগুনার মানুষকে ভাল স্বাস্থ্য সেবা দেয়ার জন্য। এ ব্যাপারে বরগুনা জেলা প্রশাসক ড. মহা. বশিরুল আলম বলেন, সম্প্রতি বরগুনায় ১০ জন নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত ডাক্তার পদায়ন করা হয়েছে।