বন্ধুত্বের মধ্যে শুধু প্রেম-ভালোবাসাই থাকে না, পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, সহমর্মিতা, দায়িত্ববোধ থাকে। হুমায়ুন ফরীদি তেমনই ছিল। ওর সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি। কোনটা রেখে কোনটা বলব। মারা যাওয়ার কিছুদিন আগে আরও একবার অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল ফরীদি। ওকে দেখতে গিয়ে চিকিৎসক আমাকে অনুরোধ করে বললেন, ‘যেভাবেই হোক, আপনার বন্ধুকে সিগারেট খাওয়া বন্ধ করতে হবে।’ ফরীদি সাধারণত কারোর কথা শুনত না। তাই সিগারেটের বিষয়ে আমি সরাসরি কিছু বললাম না। একটু কৌশল নিলাম। বললাম, তোর সিগারেট তুই খাবি, মরলে তুই মরবি। তবে মনে রাখিস, তোর এই সিগারেট খাওয়ার কারণে যদি অন্য কেউ কষ্ট পায়, তাহলে তাকেও তোর সম্মান করা উচিত। সেই সম্মানবোধ আমাদের দুই বন্ধুর মধ্যে সব সময়ই ছিল।
আরেকটা উদাহরণ দিলে ঘটনাটা পরিষ্কার হবে। অরণ্য আনোয়ারের একটি নাটকে আমরা দুজনই অভিনয় করছিলাম। ঢাকার বাইরে শুটিং হচ্ছে। আমার গাড়ি নষ্ট থাকার কারণে ইউনিটের গাড়িতে করে শুটিংয়ে হাজির হলাম। লোকেশনে ঢুকতেই গাড়িতে বসে দূর থেকে দেখলাম ফরীদি বারান্দায় চেয়ারে বসে আরাম করে সিগারেট টানছে। ইউনিটের গাড়ির মধ্যে আমি আছি ও ধারণাই করতে পারেনি। গাড়িটি কাছাকাছি চলে এলে আমাকে দেখে চমকে উঠল। ঠিক বড়দের দেখে ছোটরা যেভাবে সিগারেট লুকিয়ে ফেলে, সেভাবেই লুকিয়ে ফেলল ও। ঘটনাটি দেখে হেসে ফেললাম। কিন্তু ওকে বুঝতে দিলাম না। ওই বয়সে এসেও এই যে বন্ধুর প্রতি বন্ধুর সম্মানবোধ, এটা অনেক বড় একটা ব্যাপার।
আমরা একসঙ্গে মঞ্চ, টেলিভিশনে প্রচুর কাজ করেছি। বন্ধুত্বটা তাই গাঢ় ছিল বরাবরই। ওকে নিয়ে আরেকটা ঘটনা বলে শেষ করি, যাঁরা নিয়মিত অভিনয় করেন, তাঁরা সাধারণত শুটিংয়ে যাওয়ার সময় বেশ কিছু জিনিস নিয়ে যান। যেমন বসার চেয়ার, খাওয়ার থালা, পানির মগসহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র। ফরীদিরও ছিল। মজার ব্যাপার হলো, ও প্রতিটি জিনিস কিনেছিল দুটি করে। কারণ, ওর আরেকটি জিনিসের অংশীদার ছিলাম আমি। এই হলো আমার বন্ধু হুমায়ুন ফরীদি।সূত্র: প্রথম আলো