সম্প্রতি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর দেশটির সেনাবাহিনী ও সাধারণ বৌদ্ধ নাগরিকদের নির্যাতন-নিপীড়ন ও হত্যাকাণ্ড থেকে বাঁচতে গত তিন সপ্তাহে প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) এ পরিসংখ্যান দিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারি সূত্র মতে, এর আগে থেকে আরও ৪ থেকে ৫ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে। ফলে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মোট রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ৮ থেকে ৯ লাখে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যদিয়ে শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শীর্ষ দশ দেশের তালিকায় উঠে এসেছে।
ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার ক্ষেত্রে তালিকার শীর্ষে রয়েছে তুরস্ক। দেশটি সর্বোচ্চ ২৯ লাখ মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে। ১৪ লাখ শরণার্থী আশ্রয় দিয়ে তুরস্কের পরেই রয়েছে পাকিস্তান। ১০ লাখ আশ্রয় দিয়েছে লেবানন। ইরানে রয়েছে ৯ লাখ ৭৯ হাজার ৪০০, উগান্ডায় ৯ লাখ ৪০ হাজার ৮০০ ও ইথিওপিয়ায় রয়েছে ৭ লাখ ৯১ হাজার ৬০০। আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা বর্তমান শরণার্থীদের সংখ্যা অনুযায়ী বাংলাদেশ ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। বাংলাদেশের পরেই রয়েছে আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়া।
অন্যদিকে বাংলাদেশেই সবচেয়ে বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও বেশকিছু রোহিঙ্গা রয়েছে। আলজাজিরা এক প্রতিবেদনে জানায়, সৌদি আরবে দুই লাখ, পাকিস্তানে তিন লাখ ৫০ হাজার, মালয়েশিয়ায় দেড় লাখ, ভারতে ৪০ হাজার, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১০ হাজার, থাইল্যান্ডে ৫ হাজার এবং ইন্দোনেশিয়ায় মাত্র ১ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম রয়েছে। ইউএনএইচসিআরের হিসাবে, ২০১৭ সাল পর্যন্ত সারা বিশ্বে ৬ কোটি ৫৬ লাখ মানুষ তাদের নিজ এলাকা থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ হয়েছে। এদের মধ্যে প্রায় ২ কোটি ২৫ লাখ মানুষ এখন শরণার্থী হিসেবে বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে বাস করছে।
বিশালসংখ্যক এ শরণার্থীর অর্ধেকর বয়সই ১৮ বছরের নিচে। মোট উদ্বাস্তু মানুষের মধ্যে প্রায় ১ কোটি মানুষের কোনো রাষ্ট্র নেই। নিজ দেশেই তাদের জাতীয়তা অস্বীকার করা হয়েছে এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান এমনকি চলাফেরার স্বাধীনতা থেকেও তাদেরকে বঞ্চিত করা হয়েছে। বর্তমান বিশ্বে সংঘাত ও নিপীড়নের ফলে প্রতি মিনিটে প্রায় ২০ জন লোক জোরপূর্বক উদ্বাস্তু হচ্ছে। সেই হিসাবে প্রতিদিন প্রায় ৩৪ হাজার মানুষ উদ্বাস্তু হচ্ছে।
বিশ্বের প্রতি ১১৩ জনের ১ জনই এখন উদ্বাস্তু। বিশ্বজুড়ে শরণার্থীদের ৫৫ শতাংশই উদ্বাস্তু হয়েছে তিনটি দেশ থেকে। এর মধ্যে দক্ষিণ সুদান থেকে এসেছে ১৪ লাখ, আফগানিস্তান থেকে ২৫ লাখ ও সিরিয়া থেকে ৫৫ লাখ।