দুপুর তখন সাড়ে ১২টা। কচুক্ষেত বাজারে ঠা ঠা রোদের মধ্যে চালের দোকানে অল্পবিস্তর ক্রেতার আনাগোনা। প্রতি কেজি মোটা চাল ৫০ টাকা থেকেও বেড়ে গেছে শুনে দোকানির সঙ্গে ক্রেতাদের মৃদু তর্ক। অগত্যা দোকানিরই জয়। ৫২ টাকা কেজি দরে মোটা চাল কিনে ক্রেতা যখন বাজার থেকে বের হচ্ছেন, তখন বাজারের উল্টো পাশে খাদ্য অধিদপ্তরের ওএমএসের চাল বিক্রির ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে। তাতে লেখা, প্রতি কেজি চাল ৩০ টাকা ও আটা ১৭ টাকা। বাজারের প্রায় অর্ধেক দামে বিক্রি হওয়া সত্ত্বেও সেখানে ক্রেতা নেই।
খোলাবাজারে চাল বিক্রির (ওএমএস) ওই ট্রাকের সামনে গিয়ে দেখা গেল, একজন ক্রেতা তিন কেজি আটা নিচ্ছেন। ট্রাকে থাকা বস্তা থেকে একমুঠো চাল হাতে নিয়ে আবার রেখে দিলেন সুফিয়া খাতুন নামের ওই ক্রেতা। ধবধবে সাদা ওই চাল বাজারদরের চেয়ে কেজিতে ২০-২২ টাকা কম। তারপরও কেন নিচ্ছেন না? জানতে চাইলি তিনি প্রতিবেদকের দিকে বিরক্তিমাখা চোখে তাকিয়ে বললেন, ‘আপনি বাসায় আতপ চাল খান? এগুলা দিয়া আমরা ভাত খাই না। পিঠা বানানো ছাড়া আতপ চালের কোনো কাজ নাই।’
ওএমএসের চাল বিক্রি শুরু হওয়ার প্রথম দিনে বেশির ভাগ স্থানে ক্রেতাদের সাড়া প্রায় এমনই ছিল। প্রতিবেদকেরা রাজধানীর ১০টি স্থানে ওএমএস কার্যক্রম সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করে প্রায় একই চিত্র দেখতে পান।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, ‘এই আতপ চালের মান খুবই ভালো। শুরুতে ক্রেতারা এটা বুঝতে পারছে না। দু-তিন দিনের মধ্যে ক্রেতারা এই চাল বেশি বেশি করে কিনবে। তারাই বলবে এটা অনেক ভালো চাল।’ যারা আতপ নিতে চায় না, সেদ্ধ চাল চায়, তাদের জন্য কোনো সুযোগ রাখা হবে কি না—জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এই আতপ চালই মানুষ খুঁজে খুঁজে কিনবে। ওএমএসে সেদ্ধ চাল দেওয়া যাবে কি না, তা এখনই আমি বলতে পারব না।’
গতকাল রোববার দুপুরে রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় কথা হয় চালের ট্রাকের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মাসুমা আক্তারের সঙ্গে। বিকল্প না থাকায় তিনি আতপ চালই কিনেছেন।
তবে আতপ চাল দেখে না কিনেই ফিরে গেছেন অনেকে। জুরাইনের ফারহানা আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই চালের ভাত কিছু নির্দিষ্ট এলাকার মানুষ খায়। ঢাকার বেশির ভাগ এলাকার মানুষ এই চালের ভাত খায় না।
খোলাবাজারে এভাবে আতপ চাল বিক্রির নজির সাম্প্রতিক সময়ে নেই বলে জানালেন সূত্রাপুর এলাকার একজন ওএমএস ডিলার নুর মোহাম্মদ। তিনি বলেন, এ নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে অসন্তোষ আছে। অনেকেই এসে চাল না নিয়েই ফিরে গেছেন।
গতকাল সকাল থেকে ঢাকার তেজগাঁও, আজিমপুর, সূত্রাপুর, জুরাইন, মিরপুর এলাকায় খোলাবাজারে চাল বিক্রির চিত্রটা ছিল একই রকম।
খোলাবাজারে চাল বিক্রি ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আলমগীর সৈকত বলেন, ঢাকায় গতকাল বরাদ্দ দেওয়া সব চালই বিক্রি হয়ে গেছে। তবে আতপ চাল নিয়ে অনেকেই আপত্তি করেছেন। কিন্তু সব মিলে চালের পরিমাণ কম থাকায় তা বিক্রি হয়ে গেছে।
রাজশাহী থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানিয়েছেন, শহরের ১৫টি জায়গায় ১৫ জন পরিবেশক এই চাল বিক্রি শুরু করেছেন। কিন্তু ক্রেতাদের তেমন সাড়া নেই। পরিবেশকেরা বলছেন, প্রথম দিন তাই ক্রেতারা জানতে পারেননি।
বরিশাল অফিস জানিয়েছে, আতপ চাল সরবরাহ করায় আগ্রহী হচ্ছেন না ক্রেতারা।