উল্টো পথে গাড়ি নিয়ে এসে ফের পুলিশের হাতে ধরা খেলেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মাফরুহা সুলতানা।
আগের দিন রোববার রাজধানীর হেয়ার রোডে একই কাজ করে ধরা পড়েন এই সচিবের একই গাড়ি চালক।
সোমবার ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের বাংলামোটর এলাকায় অভিযানে ধরা পড়েন সেই চালক।
এ সময় সচিব মাফরুহা সুলতানা গাড়িতে থাকলেও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।
মাফরুহা সুলতানার গাড়ির চালক বাবুল মোল্লা রোববার মামলা দেয়ার সময় সার্জেন্টকে বলেছিলেন, নতুন কোনো আইন হয়েছে নাকি? সোমবার আবার তাকে উল্টো পথে আসার কারণ জানতে চাওয়া হলেও তিনি দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের কিছু বলেননি।
সোমবার গাড়ি চালক বাবুল মিয়ার বিরুদ্ধে মামলার পাশাপাশি গাড়িকে জরিমানা করা হয়। পরে তার গাড়ি ঘুরিয়ে সোজা পথ দিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয় পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ, যুগ্ম কমিশনার ট্রাফিক দক্ষিণ মফিজউদ্দিন আহমেদ, উপকমিশনার দক্ষিণ রিফাত আহমেদ শামীমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সাড়ে ৬৫টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টার অভিযান পরিচালিত হয়।
এ সময় সমবায় সচিবের গাড়ি ছাড়াও পুলিশের এসপি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তার গাড়িসহ বেশ কিছু মোটরসাইকেলকে জরিমানা করা হয়।
মামলা ও জরিমানা করেও উল্টো পথে গাড়ি চলাচল বন্ধ করা যাচ্ছে না- এ বিষয়ে দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, রোববারের অভিযানের পর সোমবারও উল্টো পথে গাড়ি চলার বিষয়টি দুঃখজনক।
সোমবারও রাজধানীর হেয়ার রোডে উল্টো পথে গাড়ি চলাচল করতে দেখা যায়। রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা যুগান্তরকে বলেন, উল্টো পথে গাড়ি চলাচলের অপরাধে সোমবারও অনেক গাড়ির মালিক ও চালককে জরিমানা করা হয়েছে। দেশের ভিআইপিদের গাড়িই উল্টো পথে বেশি চলাচল করে। তারা সচেতন না হলে মামলা ও জরিমানা করেও এ সমস্যা সমাধান করা যাবে না।
রোববার রাজধানীর সুগন্ধার সামনে উল্টো পথে চলা গাড়ি ও মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে অভিযানে নামে পুলিশ। এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়। দুই ঘণ্টার কিছু বেশি সময়ের অভিযানে মোট ৫৭টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা ও সাতটি গাড়ির কাছ থেকে রেকার বিল আদায় করা হয়।
যার মধ্যে ৪০টির বেশি ছিল সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের। উল্টো পথে চলা শাস্তি পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ছিল প্রতিমন্ত্রী, এমপি, সচিব, প্রকৌশলী, রাজনীতিবিদ, পুলিশ, সাংবাদিক, বিচারক ও ব্যবসায়ীদের গাড়ি।
অভিযানের পর উল্টো পথে গাড়ি চলাচল অব্যাহত থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (দক্ষিণ-রমনা) মেহেদি হাসান বলেন, মঙ্গলবারও আমরা অভিযান চালাব। তবে কোথায় অভিযান চালাব, সেটা এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। এ ধরনের অভিযানের সংখ্যা আমরা আরও বাড়াব এবং অভিযানে পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা থাকবেন।
উল্টো পথে গাড়ি চলাচল নিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, পরিচয় যাই হোক, আইন অমান্য করে উল্টোপথে গাড়ি চালালে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, তথাকথিত প্রভাবশালীরা আইনকে তোয়াক্কা না করে উল্টোপথে গাড়ি চালান। আর এতে চলাচলে বাধা দিলে পুলিশকেও নাজেহাল হতে হয়। এতে অনেক সময় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। তার পরও আমরা শক্ত অবস্থানে রয়েছি। আইন অমান্য করলে শাস্তি পেতে হবে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পুলিশ কমিশনার বলেন, কয়েক সপ্তাহ আগে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মিডিয়াতে স্পষ্টভাবে বলেছেন, কোনো মন্ত্রী-এমপির গাড়িও উল্টাপথে চলতে পারবে না। যদি আইন অমান্য করেন, তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।