রাখাইনের পূর্বাঞ্চলে নতুন করে জ্বালাও-পোড়াও শুরু করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও তাদের সহযোগী মগ-চাকমারা। ফলে এসব এলাকার কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশের দিকে রওনা দিয়েছে।
পাহাড়-জঙ্গলে তাই ঢল নেমেছে তাদের। দুর্গম পথ মাড়িয়ে আসছে তারা।
শুক্রবার পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
রোহিঙ্গারা জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাখাইনের পূর্বাঞ্চলীয় থানা বুচিডংয়ের টং বাজারের পাশে মৌলভীবাজার এলাকায় রোহিঙ্গা গ্রামে আগুন দিয়েছে সেনারা। এ ছাড়া মংডু বলিবাজার এলাকায়ও আগুন জ্বলতে দেখা যায় এদিন।
গোদামপাড়া এলাকায় নদীর পাশে এক স্থানে প্রায় ১০ হাজার রোহিঙ্গাকে কয়েকদিন ধরে ঘিরে রেখেছে সেনাবাহিনী। তাদের কাছে থাকা সবকিছু কেড়ে নেয়া হয়েছে। তাদের কোথাও যেতে দেয়া হচ্ছে না। ফলে খাদ্য ও পানির তীব্র সংকটে ভুগছে তারা। সেনাবাহিনী কী করবে এ নিয়েও তারা রয়েছে আতঙ্কে।
শুক্রবার এর একটি ভিডিও ফুটেজ পাওয়া গেছে। গোপনে সেখানে থাকা এক রোহিঙ্গা শুক্রবার তার আত্মীয়র কাছে ওই ভিডিও পাঠিয়ে এ অবস্থার বর্ণনা দেয়।
উসমান নামে ৫ বছরের এক ছেলেকে নিয়ে শুক্রবার ভোরে টেকনাফের দমদমিয়া সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে আসেন রাখাইনের মংডু নয়াপাড়ার রোকেয়া।
তিনি বলেন, ‘অনেক কষ্টে আমরা সীমান্ত পার হয়েছি। রাতে রাখাইনের পেরামপুরু থেকে নৌকায় উঠলে ঝড়ো হাওয়ার কবলে পড়ে আমাদের নৌকা ডুবো ডুবো হয়েছিল। বাতাস নৌকাটিকে একেকবার একেক দিকে নিয়ে যাচ্ছিল। তবে আল্লাহর রহমত নৌকা ডোবেনি। আমাদের নৌকায় নারী-শিশুসহ ১৮ জন ছিল। পরে ভোরের দিকে দমদমিয়া এলাকায় আমরা কূলে উঠি।’
রোকেয়া আরও জানান, তার স্বামী মোস্তফাকে কয়েক বছর আগে বিদ্রোহী সন্দেহে ধরে নিয়ে গিয়েছিল সেনাবাহিনী। আর খোঁজ পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, এক মাস আগে আমরা বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হই। এতদিন বিভিন্ন গ্রাম ও পাহাড়-জঙ্গল ঘুরেছি।
তার মতে, আমাদের পেছনে আরও হাজার হাজার রোহিঙ্গা রয়েছে। আসার পথে শুনেছি পাহাড়ের পূর্ব দিকে (বুচিডং) নতুন করে বাড়ি ঘরে আগুন দিচ্ছে মিলিটারি ও তাদের সহযোগী মগ-চাকমারা।
পালিয়ে আসা আরও কয়েকজন রোহিঙ্গার কাছে থাকা মোবাইলে কয়েকটি ভিডিওচিত্র দেখা গেছে। এর একটিতে দেখা যায়, রোহিঙ্গাদের একটি বড় দল গহিন পাহাড়ের খাদে বসে আছে।
এই ভিডিওচিত্রটি মঙ্গলবারের জানিয়ে তারা বলেন, পথ চলতে চলতে ক্লান্ত হয়ে ছড়ার পাশে বসে পড়েছেন তারা। এ দলেও নারী ও শিশুর সংখ্যা বেশি।
আরেক ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে, একটি খালের পাড়ে কয়েকশ’ রোহিঙ্গা। কয়েকদিনের মধ্যে তারা বাংলাদেশে এসে পৌঁছাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এসব রোহিঙ্গা জানান, বুচিডং, নাইনচং, মতিচর, চৌপ্রাং, হরমোলাপাড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে।
টেকনাফ সীমান্তে বিজিবির কড়াকড়ি
কয়েকদিন ধরে টেকনাফের নাফ নদী সীমান্তে বিজিবি তাদের টহল জোরদার করেছে। বিজিবি জওয়ানদের গভীর রাতেও স্পিডবোট ও কাঠের বোটে নাফে টহল দিতে দেখা গেছে। সীমান্তে রোহিঙ্গা পারাপারে নিয়োজিত দালাল ও নৌকার মাঝি-মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন তারা।
বাইরের লোককে উখিয়া-টেকনাফে অবস্থান না করার নির্দেশ
টেকনাফ থানার ওসি মাইন উদ্দিন খান শুক্রবার জানান, ত্রাণ নিয়ে আসা লোকজন যাতে জেলা ত্রাণ তহবিলে ত্রাণসামগ্রী দেন এবং সরাসরি যাতে কেউ ত্রাণসামগ্রী দিতে না পারে এ ব্যাপারে সবাইকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। বাইরের কাউকে উখিয়া-টেকনাফে না থাকার জন্যও বলা হয়েছে। শাহপরীর দ্বীপ এলাকায় বাইরের লোকজনের যাতায়াত একেবারেই বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, এর পর থেকে তাবলিগ জামাতসহ বিক্ষিপ্তভাবে ত্রাণ নিয়ে আসা মানুষের আনাগোনা কমে গেছে।
উখিয়া থেকে এক সংবাদ কর্মী জানান, বুধবার থেকে বাইরের লোকজনের আনাগোনা কমে যাওয়ায় রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে বিশৃঙ্খলা আরও কমেছে। আগত এসব ব্যক্তি বিচ্ছিন্নভাবে নগদ টাকা ও সামগ্রী ভিন্ন জায়গায় বিতরণ করত। ফলে ওইসব স্থানে রোহিঙ্গাদের মাঝে হুড়াহুড়ি শুরু হয়ে যেত।