ধর্ষণের শিকার ভারতের ১০ বছর বয়সী এক শিশু গত আগস্টে মেয়ে শিশুর জন্ম দিয়েছে। পুলিশ বলছে, নিজের দুই চাচার কাছে ধর্ষণের শিকার হয়েছিল শিশুটি। সন্দেহভাজনের বিরুদ্ধে পুলিশ অভিযোগ দায়ের করেছে। এ নিয়ে শিশুটিকে ধর্ষণের দায়ে তার দুই চাচার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়। শিশুটির প্রথম চাচাকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করেছে পুলিশ এবং তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়েছে।
সদ্যজাত শিশুর ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়। ফরেনসিক পরীক্ষায় প্রথম চাচার ডিএনএ’র সঙ্গে শিশুটির ডিএনএ’র মিল না পাওয়া যাওয়ায় পুলিশ দ্বিতীয় চাচাকে খুঁজতে থাকে।
ভারতের চন্ডিগরের জ্যেষ্ঠ পুলিশ সুপার নিলাম্বরী বিজয় বিবিসিকে বলেন, ‘পুলিশ এখন শিশুটির দ্বিতীয় চাচার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করছে; যিনি শিশুটির প্রথম চাচার ছোট ভাই।’ তিনি বলেন, ‘এটি সত্য যে শিশুটির ডিএনএ নমুনা (দ্বিতীয়) চাচার সঙ্গে মিলে গেছে।’ মঙ্গলবার চন্ডিগরের স্থানীয় একটি আদালতে মামলার পরবর্তী শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। শিশুটিকে নিপীড়ন করায় প্রথম চাচা কারাগারে থাকবেন।
বিবিসির নয়াদিল্লি প্রতিনিধি গীতা পান্ডে বলেন, ‘১০ বছর বয়সী শিশুটির ভয়াবহ এই ঘটনা ভারতীয় এবং বিশ্ব গণমাধ্যমে কয়েক সপ্তাহ ধরেই শিরোনাম হয়ে আসছে।’ চলতি বছরের জুলাইয়ের মাঝের দিকে শিশুটি পেটে ব্যথা অনুভব করে। পরে তার বাবা-মা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। শিশুটি গর্ভবতী বলে সেই সময় চিকিৎসক নিশ্চিত করে।
চন্ডিগরের স্থানীয় আদালত শিশুটির গর্ভপাতের আবেদন খারিজ করে দেন। শিশুটি সন্তান প্রসবের খুব কাছাকাছি সময়ে পৌঁছানোর কারণে আদালত গর্ভপাতের আবেদনে সাড়া দেননি। ওই সময় চিকিৎসকদের একটি প্যানেল শিশুটির গর্ভপাত করানো হলে জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে বলে পরামর্শ দেয়। শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে গর্ভপাতের আবেদন গড়ালে সেখানেও খারিজ হয়ে যায়।
ভারতের আইনে ২০ সপ্তাহের বেশি সময়ের গর্ভবতী কোনো মাকে গর্ভপাতের অনুমতি দেয়ার সুযোগ নেই। চিকিৎসকরা নিশ্চিত করেন যে, এই সময়ের পরে গর্ভপাত ঘটালে ঝুঁকির মুখে পেড়ে মায়ের জীবন।
শিশুটি তার গর্ভবতী হওয়ার ব্যাপারে জানেন না এবং তাকে বলা হয়েছে যে তরা পেটে একটি পাথর হয়েছে। যে কারণে সে ব্যথা অনুভব করছে। গত আগস্টে সে সন্তানের জন্ম দিয়েছে এবং সদ্যজাত শিশুটিকে দেখাশোনা করার জন্য শিশু কল্যাণ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
শিশুটি প্রাথমিকভাবে পুলিশ ও শিশু কল্যাণ কর্মীদের জানিয়েছে যে, গত সাত মাসে সে তার প্রথম চাচার কাছে বেশ কয়েকবার ধর্ষণের শিকার হয়েছে। শিশুটির প্রথম চাচাকে গ্রেফতার করা হয়েছে; যার বয়স ৪০ বছর।
ভিডিওতে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছে সে এবং একেবারে পরিষ্কারভাবে তার চাচার বিরুদ্ধে নিপীড়নের অভিযোগ করেছে। মেয়েটির বাবা বিবিসিকে বলেছেন, শিশুটির প্রথম চাচা তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেনি। পুলিশ অবশ্য বলছে, অভিযোগ স্বীকার করেছেন তিনি।
কিন্তু ডিএনএ পরীক্ষার ফল সদ্যজাত শিশুটির সঙ্গে মিলেনি। পরে পুলিশ এ ঘটনায় অন্য সন্দেহভাজনদের খুঁজতে থাকে এবং গত সেপ্টেম্বরে শিশুটির দ্বিতীয় চাচাকে গ্রেফতার করে।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ভারতের বিভিন্ন আদালতে বেশ কিছু পিটিশন দায়ের করা হয়। এদের অনেকগুলোতেই ধর্ষণের শিকার শিশুর গর্ভপাতের অনুমতি চাওয়া হয়।
তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিশুরা শারীরিক পরিবর্তন বুঝতে সক্ষম না হওয়ায় গর্ভবতী হওয়ার বিষয়টি ধরা পড়ে অনেক দেরীতে। চলতি মাসের শুরুর দিকে মুম্বাইয়ের একটি আদালত ৩২ সপ্তাহের গর্ভবতী ১৩ বছরের এক শিশুকে গর্ভপাতের অনুমতি দেন। পরে শিশুটি একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেয়। জন্মের দুদিন পরই শিশুটি মারা যায়।
গত মে মাসে ভারতের হরিয়ানায় একই ধরনের একটি ঘটনা ঘটে ১০ বছর বয়সী এক শিশুর ক্ষেত্রে। সৎ বাবার কাছে ধর্ষণের শিকার শিশুটিকে গর্ভপাতের অনুমতি দেন আদালত। সে প্রায় ২০ সপ্তাহের গর্ভবতী ছিল।