দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এর আগে তিনটি ম্যাচ জিতলেও, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলীয় ইনিংস ছিল ২৫১ রানের। এবার নিজেদেরই ছাড়িয়ে গেলো মাশরাফির দল। কিম্বার্লির ডায়মন্ড ওভালে নিজেদের রেকর্ডও ভঙ্গ করলো বাংলাদেশ। এই মাঠে আগে দুই ম্যাচ খেলে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোর ছিল ১৯৮। এবার সব ছাড়িয়ে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৭৮ রান করলো বাংলাদেশ।
টেস্ট সিরিজে একের পর এক সমালোচনার তিরে বিদ্ধ হচ্ছিলেন মুশফিকুর রহীম। ভুল সিদ্ধান্ত, ম্যানেজমেন্ট এবং দল নিয়ে বেফাঁস মন্তব্যের জের ধরে নেতৃত্ব হারানোর পর্যায়ে পর্যন্ত চলে এসেছেন তিনি। তবে মাঠের বাইরের আলোচনা-সমালোচনা বাইরে কিভাবে রাখতে হয় সেটা খুভ ভালোভাবেই দেখিয়ে দিয়েছেন মুশফিকুর রহীম।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রথম সেঞ্চুরি করলেন মুশফিক। খেললেন হার না মানা ১১০ রানের অসাধারণ এক ইনিংস। ১১৬ বলে খেলা ইনিংসটি তিনি সাজালেন ১১টি বাউন্ডারি এবং ২টি ছক্কায়। এছাড়া ইমরুল কায়েসের ৩১, সাকিবের ২৯, লিটনের ২১, মাহমুদউল্লাহর ২৬ রানের ইনিংসগুলো বাংলাদেশকে মোটামুটি একটা সম্মানজনক স্কোর গড়তে সহায়তা করে।
টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা দারুণ করেছিলেন দুই ওপেনার লিটন কুমার দাস এবং ইমরুল কায়েস। প্রথম থেকেই পাওয়ার প্লের সদ্ব্যবহার করে মারমুখি ভঙ্গিতে খেলে যাচ্ছিলেন লিটন ও ইমরুল। তবে এই দু’জনের জুটিকে খুব বেশিদুর যেতে দেননি দক্ষিণ আফ্রিকার তরুণ পেসার কাগিসো রাবাদা।
তাদের গড়া ৪৩ রানের জুটি ভাঙেন তিনি। লিটন দাসকে ২১ রানে সাজঘরে পাঠান এ পেসার। ইমরুল ৩১ রান করে সাজঘরে ফিরে যান। ইমরুল যখন ফেরেন তখন দলীয় রান ৬৭।
এর আগে অনেকদিন পর বাংলাদেশের যে কোনো ফরমেটে ওপেনিংয়ে দেখা যায়নি পরিচিত দুই মুখ তামিম ইকবাল এবং সৌম্য সরকারকে। তাদের পরিবর্তে ওপেনিং করতে এসেছিল ইমরুল কায়েস এবং লিটন কুমার দাস।
দুই ওপেনারের বিদায়ের পর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়ে ৫৯ রানের জুটি গড়েন সাকিব এবং মুশফিক। তাদের এই জুটিতে ভর করেই ১০০ রান পার করে ফেলে বাংলাদেশ। এরই মধ্যে ওয়ানডে ইতিহাসে পঞ্চম ক্রিকেটার হিসেবে ২০০ প্লাস উইকেট এবং ৫ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন সাকিব আল হাসান। তবে তাকে বেশি দুর যেতে দেননি স্পিনার ইমরান তাহির। মাত্র ২৯ রান করেই তাহিরের ঘূর্ণিতে হাশিম আমলার হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরে যান বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে নামার আগে পাঁচ হাজার রান থেকে মাত্র ১৭ রান দুরে ছিলেন সাকিব আল হাসান। ইনিংসের ২০ তম ওভারে প্রিটোরিয়াসকে থার্ডম্যানে ঠেলে দিয়ে একটি রান নিয়ে সাকিব পৌঁছে যান ৫ হাজারি ক্লাবে। সাকিবের আগে ৫ হাজার এবং ২০০ প্লাস উইকেট নেয়া অন্য চার ক্রিকেটার হলেন সনাৎ জয়সুরিয়া, শহিদ আফ্রিদি, জ্যাক ক্যালিস এবং আব্দুল রাজ্জাক।
টেস্ট সিরিজে অসাধারণ বল করেছিলেন কাগিসো রাবাদা। তবে ওয়ানডেতে এসে প্রথম দিকে কিছুটা খেই হারিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। যদিও সাব্বির এবং নাসিরের উইকেট তুলে নেয়ার মধ্যে দিয়ে প্রথম ওয়ানডেতে তিন উইকেট নিয়েছেন এই প্রোটিয়া ফাস্ট বোলার।
ইনিংসের ৪৬তম ওভারের দ্বিতীয় বলে বেশ খানিকটা উঠিয়ে মেরেছিলেন সাব্বির রহমান; কিন্তু বলটি বাউন্ডারি পার না হয়ে সুইপার কাভার অঞ্চলে প্যাটারসনের হাতের ধরা পড়েন। ফলে ১৯ রান নিয়ে সাজঘরে ফিরতে হয় এই টাইগার ব্যাটসম্যানকে।
আর ৪৮তম ওভারের দ্বিতীয় বলে রাবাদার শর্টবলকে পুল করতে গেলে মিড উইকেটে আমলার হাতে ধরা পরেন নাসির। নাসিরের সংগ্রহ ছিল ১১। এর আগে সাব্বিরের আউট হবার পরই দূর্দান্ত এক সেঞ্চুরি করেছেন মুশফিকুর রহিম। ১০৮ বল খেলে ক্যারিয়ারের পঞ্চম ওয়য়ানডে সেঞ্চুরি করেন তিনি।
এদিকে বাংলাদেশের ইনিংসের শুরু থেকেই বাউন্স দিতে শুরু করেন দক্ষিণ আফ্রিকান পেসাররা। তাতে যখন খুব একটা সুবিধা পাচ্ছিলেন না, তখন ব্যাটসম্যানদের বিভ্রান্ত করার জন্য শুরু করলেন স্লোয়ার দেয়া।
পেসারের গতিময় বল যখন গতি কমিয়ে ব্যাটসম্যানের সামনে আসে, তখন বিভ্রান্ত হতেই যেন বাধ্য হন ব্যাটসম্যানরা। বেশ কয়েকবারই টাইগার ব্যাটসম্যানদের এমন বিভ্রান্ত হতে দেখা গিয়েছে। আর মাহমুদউল্লাহ তো প্রিটোরিয়াসের স্লোয়ারে উইকেটই দিতে বাধ্য হলেন!
ইনিংসের ৩৯তম ওভারের প্রথম বলটিরই গতি কমিয়ে স্লোয়ার দেন প্রিটোরিয়াস। ফলে বিভ্রান্ত হয়ে ক্রিজ ছেড়ে অনেকটা বেরিয়ে এসে বলটি মাঝ ব্যাটে খেলতে চান মাহমুদউল্লাহ। ব্যাটে ঠিকভাবে লাগাতে পারেননি। স্লোয়ারের কারণে ব্যাটের মাঝ ব্লেডে লেগে বলটি সোজা উপরে উঠে যায়। সেটিকেই ক্যাচে পরিণত করেন ক্রিজের খুব কাছে থাকা ডেভিড মিলার।