নিজের মেধা আর দক্ষতা দিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সাফল্যের সাথে মোকাবেলা করছেন সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইন্সপেক্টর মহসীনুল কাদির। পেশাদারিত্বের কারণে আশুলিয়া থানা জয় করে এখন তিনি সাভার মডেল থানায়।
তিনি বলেন, সাভারে যত ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে তার নেপথ্যেই রয়েছে বড় এক শ্রেণীর স্বর্নব্যবসায়ি! নিজেদের নিয়োগ করা লোক দিয়েই ঘটানো হচ্ছে একের পর এক ছিনতাইয়ের ঘটনা। আর এ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে মাদকসেবীদের। যাদের অধিকাংশই আবার হেরোইনসেবী!- অবাক করার মতোই এমন তথ্যের ‘বোমা’ ফাটালেন সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মহসীনুল কাদির।
তিনি জানান, ‘আমরা ছিনতাইয়ের ঘটনায় ইতোমধ্যে সাতজন ‘নামকরা’ স্বর্ন ব্যবসায়িকে আটক করেছি। অন্যরাও রয়েছেন নজরদারীতে’। চলতি বছরের ২৪ জুন আশুলিয়া থানা থেকে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে সাভার মডেল থানায় যোগদান করেন মহসীনুল কাদির। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে এমন তথ্যই উঠে আসে সাথে আলাপচারিতায়।
‘যদি চ্যালেঞ্জের কথা বলেন তাহলে বলবো আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় আশুলিয়ার চাইতে সাভারে চাপ তুলনামূলক কম। তবে এখানে অপরাধের মাত্রা হিসেবে মাথা ব্যাথার কারণ ‘ছিনতাই’। আমি যোগদানের পর দেখলাম, এখানে মূল সমস্যাটাই ছিনতাই। ঘর থেকে বের হতে ছিনতাই। শপিং থেকে বের হতে গিয়ে ছিনতাই। ছিনতাই যেন এখানে একটি ব্যাধি। যার নেপথ্যে কারণই আবার মাদক।
ওত পেতে থাকলাম। যে করেই হোক ছিনতাইকারী চক্রকে ধরতে হবে। একজন দু’জন করে ধরা পড়লো। আমরা ২৭ জনকে গ্রেপ্তার করলাম। তদন্তের গভীরে গিয়ে দেখলাম, এসব ছিনতাইয়ের নেপথ্যেই রয়েছেন এক শ্রেণির স্বর্ণব্যবসায়ি। যাদের মধ্যে ৮ জনই স্বর্নালংকার ব্যবসায়ি’- যোগ করেন ওসি মহসীনুল কাদির।
এবার আসি ছিনতাই প্রসঙ্গে। চক্রটি পেছনে অনুসন্ধান সূচনা করলাম। তদন্তের মাঝ পথেই আসতে থাকলো গা শিউরে করা নানা ধরনের তথ্য। ছিনতাইয়ের জন্যে খুন, জখম। আর যার নেপথ্যে আবার কি’না প্রতিষ্ঠিত এক শ্রেনীর স্বর্ণ ব্যবসায়ি! শুরুতেই বুঝতে পারছিলাম এর জন্যে চাপে পড়তে হবে। প্রকৃত অর্থেই আসতে থাকলো নানা ধরনের চাপ। এমনকি প্রলোভনসহ নানা ধরনের হুমকি। স্বর্ন ব্যবসায়িদের আটক যাবে না-এমন বাহানা নিয়েও আসলেন অনেকে।
তদন্তের গোড়াতেই বিষয়টি ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) শাহ মিজান শাফিউর রহমান স্যারকে জানালাম। স্যার আশ্বস্ত করে বললেন, এগিয়ে যেতে। চাপ যা আসে তা মোকাবেলা করার মতো সাহস ও সহযোগীতা দুটোই দিলেন। আমিও নাছোড়বান্দা। পেশাদার ছিনতাইকারীদের প্রথমে ১৬১ ধারায় জবানবন্দী প্রদানের পর পরই নেমে গেলাম অভিযানে।
যাদের গ্রেপ্তার করেছি। তদন্তের স্বার্থে এই মূহৃর্তে তাদের নাম প্রকাশ করছি না। কারণ কেঁচো খুড়তে কেউটে-ও বের হয়ে আসতে পারে। একজন ছিনতাইকারীকে ধরে রিম্যান্ডে এনে ধিরে ধিরে এর গভীরে গিয়ে আমরা জানতে পারি সমাজের মুখোশধারীদের রূপ।
জিজ্ঞাসাবাদে একাধিক স্বর্ণ ব্যবসায়ি আমাকে বলেছে, ব্যবসায় মন্দা। তার ওপর যারা বন্ধকী কারবার করেন সেটাও মন্দা। লোভের ফাঁদে পড়েই তারা পা রেখেছেন ছিনতাইয়ের মতো ঘৃণিত অপরাধের জগতে। কারণ মাত্র ২ থেকে ৫ হাজার টাকা দিয়ে যদি এক ভরি স্বর্ণালংকার পাওয়া যায় তো মন্দ কি!- এমন লোভ থেকেই তারা এ পথে এসেছেন বলে কেউ কেউ স্বীকার করেছেন। মজার কথা মাদকসেবীদের ছিনতাই করাতে করাতে শখের বসেও খোদ দু’একজন ব্যবসায়িও সরাসরি ছিনতাইয়ের সাথে যুক্ত হয়েছেন।
ছিনতাইয়ের পর স্বর্ণালংকার গলিয়ে তা আবার বিক্রি করেছেন। লাভের ওপর লাভ! তাহলে এই অপরাধের শেকড় কি উৎপাটন করা হবে সহসাই?
‘কাজটা খুবই জটিল। এখন কিন্তু ছিনত্াইয়ের ঘটনা আর আগের মতো নেই। আমরা চেষ্টা করছি। আমিনবাজার, ভাকুর্তা, রানা প্লাজার পেছনে, এমনকি সাভার ডিবি অফিসের পাশেও রয়েছে হেরোইনের আস্তানা। এসব গুড়িয়ে দিতে হবে। আমরা দিচ্ছিও। আশা করছি হেরোইন উৎখাত করতে পারলে ছিনতাইয়ের ঘটনা-ও নিয়ন্ত্রনে আসবে। যোগ করেন ওসি মহসীনুল কাদির।
তিনি বলেন, আমার জীবনে অনেক বাধা বিপত্তি এসেছে। আমি সেগুলোকে মোকাবেলা করেছি আমার সাহস আর ব্যক্তিত্ব দিয়ে। তবে আমার একটা নীতি আছে। সেটাই আমার সংস্কার। সেই নীতি থেকে কিন্তু মহসীনকে টলানো যাবে না। আমি আমার প্রিন্সিপালে অনড়। তবে হ্যাঁ আমার জীবনে অনুপ্রেরণা দুই নারী। একজন আমার মা। অন্যজন আমার স্ত্রী। তাদের মমতা আর ভালোবাসাই আমার জীবনের প্রেরণা। জীবনের সব প্রতিকূলতা তাদের ভালোবাসার কাছে তুচ্ছ-অকপটেই উত্তর মহসীনুল কাদিরের।
ভিন্ন সত্বাতেও আজ প্রতিষ্ঠিত মহসীনুল কাদির। আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর পরিচয় ছাপিয়ে অনেকের কাছে তার পরিচয় জনপ্রিয় গায়ক, গীতিকার আর সুরকার। গান গেয়েই মূর্হুমূর্হু হাতে তালিতে মঞ্চ কাঁপান তিনি। আদতে তিনি একজন পুলিশ কর্মকর্তা।
১৯৯২ সালে পুলিশ বিভাগের যোগ দেন মহসীনুল কাদির। গীতিকার, সুরকার হিসেবে-ও ইতোমধ্যে ভিন্ন পরিচয় গড়েছেন তিনি। সুযোগ পেলে গান গেয়ে মঞ্চ-ও মাতান। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকেও তিনি সক্রিয়। সেখানে তার পেশাগত কোন পরিচয় নেই। তিনি বলেন, আমি ব্যক্তি মহসীন। তবে পুলিশ বাহিনীতে আমার পরিচয় আমি পুলিশ ইন্সপেক্টর। পরিচয়টা একান্তই পেশাদারিত্বের। আমার ডিপার্টমেন্ট আস্থা রাখে আমার কাজে। এটাই বড় কথা।
ভিন্ন পরিচয়কে বিনীতভাবে আড়াল করে তিনি নিজেই বললেন, আমি আইনের রক্ষক। আমার কাছে পেশাদারিত্বইই শেষ কথা। আর যেসব পরিচয়ের কথা বললেন সেগুলো আমার একান্তই। পেশার সাথে কোন সম্পৃক্ত নয়।
মহসীনুল কাদির বলেন, আসলে আমার জন্ম সাংস্কৃতিক পরিবারে। রক্তে রয়েছে গান। আমি গান গাই, লিখি আর সুর দেই। বলতে পারেন গান আর বই আমার অবসরের সঙ্গী। সাড়া জাগানো লেখকদের বই, রাজনীতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য, ধর্ম বর্ণ। কোন বিষয়ই বাদ পড়ে না জ্ঞানের ভান্ডার বই থেকে।
এস এম মনিরুল ইসলাম, সাভার