ব্লুমফন্টেইনে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি জিততে হলে ইতিহাস গড়তে হতো বাংলাদেশকে। গড়তে হতো টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড। ১৯৬ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়ে ৯ ওভার পর্যন্ত দলকে জয়ের পথেই রেখেছিলেন সৌম্য সরকার। বাঁহাতি ওপেনার যতক্ষণ উইকেটে ছিলেন, আশা ছিল বাংলাদেশের। তাঁর আউটের পরই পথ হারাল বাংলাদেশ, এলোমেলো হয়ে গেল মিডল অর্ডার। শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা সাকিবরা হারলেন ২০ রানে।
প্রথম ১০ ওভারে ৩ উইকেটে ৯৭ রান তোলা বাংলাদেশ শেষ ১০ ওভারে করতে পারল ৬ উইকেটে ৭৮। সৌম্যর আউটটাই যেন গড়ে দিল ম্যাচের পার্থক্য। ইমরুল কায়েসকে সঙ্গে নিয়ে ওপেনিংয়ে তাঁর শুরুটা ছিল দুর্দান্ত। অবশ্য ইনিংসের প্রথম বলেই ডেন প্যাটারসনকে মিড অফের ওপর দিয়ে বাউন্ডারি মেরে ইতিবাচক শুরুর প্রথম ইঙ্গিতটা দিয়েছিলেন ইমরুল। দ্বিতীয় ওভারে হেনড্রিকসকে ছক্কা মারেন সৌম্য। কিন্তু দুজনের জুটি টিকেছে ৩.৫ ওভার। ইমরুলকে তুলে নেন হেনড্রিকস। এরপর আউট হওয়ার আগ পর্যন্ত সৌম্য অনেকটা একাই টেনেছেন দলকে।
তৃতীয় ও চতুর্থ ওভারে প্যাটারসন ও হেনড্রিকসকে দুটি করে বাউন্ডারি মারেন সৌম্য। চতুর্থ ওভারে ইমরুল আউট হওয়ার পর সৌম্যর সঙ্গে জুটি বাঁধেন অধিনায়ক সাকিব। যদিও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তিনি। ৮ বলে ১৩ রান করে অভিষিক্ত রবি ফ্রাইলিঙ্কের প্রথম শিকার হন সাকিব। ৭ ওভারে ২ উইকেটে ৬৪ রান নিয়ে তখনো জয়ের পথে ছিল বাংলাদেশ। তৃতীয় উইকেটে মুশফিক-সৌম্যর ১৩ বলে ২৮ রানের জুটি জয়ের আশাটা আরও উজ্জ্বল করেছিল।
কিন্তু ৯.১ ওভারে আন্দিলে ফিকোয়ার বলে সৌম্য এলবিডব্লু হওয়ার পর থেকেই ফিকে হতে শুরু করে জয়ের আশা। অবশ্য সৌম্যর উইকেটটির পেছনে ফিকোয়ার চেয়ে প্রোটিয়া অধিনায়ক জেপি ডুমিনির অবদানই বেশি! এলবিডব্লুর আবেদন নাকচ করে দিয়েছিলেন আম্পায়ার। ডুমিনির রিভিউয়ে কপাল পোড়ে বাংলাদেশের। দলকে লক্ষ্যের প্রায় অর্ধেক পথে টেনে আনতে ২ ছক্কা ও ৫ বাউন্ডারিতে ৩১ বলে ৪৭ রানের ইনিংস খেলেন সৌম্য।
সৌম্য ফিরলেও বাকি কাজটা সেরে ফেলার সামর্থ্য নিশ্চয়ই ছিল পরে ব্যাটসম্যানদের। কিন্তু ৯.২ থেকে ১১.২—এই দুই ওভারে ৯ রানের মধ্যে ফিরে গেলেন মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ। রানের চাপ কমাতে গিয়ে মুশফিক আউট হয়েছেন তাঁর ‘প্রিয়’ স্লগ সুইপ করতে গিয়ে! মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আউট হয়েছেন ক্যাচ তুলে।
৫২ বলে ৯৫ রানের সমীকরণটা মেলাতে উইকেটে ছিলেন মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন ও সাব্বির রহমান। চতুর্থ উইকেট জুটিতে ১৫ বলে ২৩ রানের জুটি গড়েন এ দুজন। কিন্তু সাব্বিরের বোধ হয় ভীষণ তাড়া ছিল! ১৩তম ওভারের তৃতীয় বলে অ্যারন ফাঙ্গিসোকে লং অফের ওপর দিয়ে দেখার মতো এক ছক্কা মারেন সাব্বির। পরের বলে আবারও তুলে মেরেছিলেন। দুর্দান্ত অ্যাক্রোবেটিক ফিল্ডিংয়ে নিশ্চিত ছক্কাকে প্রায় ক্যাচে পরিণত করেছিলেন ডি ভিলিয়ার্স। সাব্বির সে যাত্রায় বেঁচে গেলেও বাঁচতে পারেননি পরের ওভারে। তৃতীয় ওভারে হেনড্রিকসকে অহেতুক চালাতে গিয়ে আকাশে বল তুলে দেন সাব্বির। ২ ছক্কায় ১৬ বলে ১৯ রান করা তাঁর আউটের পরই কার্যত জয়ের আশা শেষ।
পরাজয়ের ব্যবধানটা যা একটু কমিয়েছেন সাইফুদ্দিন। ১ ছক্কা ও ৩ বাউন্ডারিতে ২৭ বলে ৩৯ রান করে অপরাজিত ছিলেন তরুণ এ পেস বোলিং অলরাউন্ডার। বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত করতে পেরেছে ৯ উইকেটে ১৭৫, টি-টোয়েন্টিতে যেটি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তাদের সর্বোচ্চ। এই ‘সর্বোচ্চ’টাও সান্ত্বনা হতে পারছে না বাংলাদেশের। আশা জাগিয়ে শেষ পর্যন্ত যে পুড়তে হচ্ছে পরাজয়ের হতাশায়!