২৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা ছেড়ে ২৪ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে ঈদ-উল-আযহা উদযাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে যোগ দেবেন জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে। সেখানে ব্যস্ত সময় কাটবে টানা ছয় দিন। ১ অক্টোবর নিউইয়র্ক ছেড়ে, স্থানীয় সময় ২ অক্টোবর লন্ডনে সংক্ষিপ্ত যাত্রাবিরতি করবেন। আর ৩ অক্টোবর দেশে ফিরে সিলেট হয়ে ঢাকায় পৌঁছাবেন। এর মধ্যে দিয়েই শেষ হবে ১১ দিনের ব্যস্ত সফর।
এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সফরসূচি চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-০১৫ উড়োজাহাজটি প্রধানমন্ত্রীসহ তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে ঢাকা ছাড়বে ২৩ সেপ্টেম্বর সকাল পৌনে ১০টার দিকে। ফ্লাইটটি ওইদিনই ঢাকার সময় রাত পৌনে ১০টার দিকে (স্থানীয় সময় বিকেলে পৌনে চারটায়) লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে অবতরণ করবে। হিথ্রোতে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত ও বিদায় জানাতে উপস্থিত থাকবেন যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. আবদুল হান্নান। বিমানবন্দরে তিন ঘণ্টারও বেশি সময়ের ট্রানজিট নিয়ে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের বিএ১৮১-এ চেপে বসবেন প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীরা। আর স্থানীয় সময় ২৩ সেপ্টেম্বর রাত ৮টায় (বাংলাদেশ সময় ২৪ সেপ্টেম্বর সকাল ৬টায়) পৌঁছাবেন নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরে।
জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে গিয়ে এবছর নিউইয়র্কের পার্ক এভিনিউস্থ হোটেল ওয়ার্ল্ডফ অ্যাস্টোরিয়ায় অবস্থান করবেন প্রধানমন্ত্রী।
পরের দিন ২৪ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে উদযাপিত হবে ঈদ-উল-আযহা। ওই দিন সন্ধ্যায় নিউইয়র্কে বাংলাদেশি কমিউনিটির বিশিষ্টজনসহ নানাদেশের অভ্যাগত অতিথিদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী তার ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন নগরীর পূর্ব এলমার্স্টস্থ লাগরডিয়া বিমানবন্দরের হোটেল ম্যারিয়টে।
আর ২৫ সেপ্টেম্বর শুরু হবে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭০তম অধিবেশনে অংশগ্রহণ। ওই দিন স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ১০ মিনিটে জাতিসংঘ সদর দফতরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে যোগ দেবেন অধিবেশনে পোপ বেনেডিক্টের বিশেষ বক্তৃতায়। এরপরপরই সকাল ১১টা থেকে শুরু হবে ২০১৫ পরবর্তী উন্নয়ন এজেন্ডা গ্রহণের লক্ষ্যে জাতিসংঘ শীর্ষ সম্মেলন। সাধারণ অধিবেশন হলে এই শীর্ষ সভায় বক্তব্য রাখবেন সদ্য বিদায়ী সাধারণ পরিষদ প্রেসিডেন্ট উগান্ডার রাষ্ট্রপতি ইউবেরি মুসেভেনি, বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী লার্স লোকে রাসমুসেন ও জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন।
ওই দিনই দুপুরে প্রধানমন্ত্রী যোগ দেবেন তার আবাসিক হোটেলের কার্নেগি হলে অনুষ্ঠেয় বিজনেস কাউন্সিল ফর ইন্টারন্যাশনাল আন্ডারস্ট্যান্ডিং (বিসিআইইউ)’র গোলটেবিল আলোচনায়। এতে বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আর বিকেলে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘গার্লস লিড দ্য ওয়ে’ শীর্ষক বিশ্ব নেতৃত্বের ফোরামে বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী। বিকেল ৫টায় এই অনুষ্ঠানে প্রশ্নোত্তর পর্বেও অংশ নেবেন তিনি।
এর মধ্য দিয়েই শেষ হবে দিনের কর্মসূচি। আর ২৬ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায় জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিষয়ক সংলাপে কো-চেয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার সঙ্গে থাকবেন বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী চার্লস মাইকেল।
বিকেল তিনটায় প্রধানমন্ত্রী যোগ দেবেন সাউথ সাউথ কোঅপারেশন বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের গোলটেবিল আলোচনায়। জাতিসংঘ সদর দফতরের কনফারেন্স রুম-৬এ অনুষ্ঠেয় এই আলোচনায় সভাপতিত্ব করবেন চীনা প্রেসিডেন্ট জি জিনপিং। দিনের পরের ভাগে সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক ছাড়াও দেখা হবে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে। দুটি বৈঠকই হবে প্রধানমন্ত্রীর আবাসিক হলের মিটিং কক্ষে।
সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় প্রধানমন্ত্রী তথ্য প্রযুক্তিখাতে টেকসই উন্নয়ন অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করবেন। আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (আইটিইউ)’র পক্ষ থেকে এই অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে থাকবে বিশেষ নৈশভোজ।
২৭ সেপ্টেম্বর সকালে জাতিসংঘ সদর দফতরে ২০১৫ পরবর্তী বিশ্বের উন্নয়ন এজেন্ডা নিয়ে চলমান প্লেনারিতে বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওইদিন সকালের অধিবেশনের ২১তম বক্তা হিসেবে স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টা (ঢাকার সময় রাত সাড়ে আটটা)র দিকে প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা থাকতে পারে বলেই জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্র।
প্লেনারি সেশনে বক্তব্যের পাশাপাশি ওইদিন সকাল ৯টা থেকে শুরু হবে বিশ্ব নেতাদের অংশগ্রহণে নারী পুরুষ সমতা ও নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ক বৈঠক। এতেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখবেন।
বিকেল সাড়ে তিনটায় প্রধানমন্ত্রী ছুটে যাবেন নিউইয়র্ক হিলটন মিডটাউন হোটেলে। সেখানে তাকে সংবর্ধনা জানাবে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি কমিউনিটি। বিকেল ৫টায় এই অনুষ্ঠান সম্পন্ন করে ফের নিজ আবাসিক হোটেলে ফিরবেন। আর সন্ধ্যা ৭টায় প্রধানমন্ত্রী যাবেন সিপ্রিয়ানি লা স্পেশিয়ালিতায়। সেখানে তিনি গ্রহণ করবেন জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির পক্ষ থেকে তাকে দেওয়া বিশেষ অ্যাওয়ার্ড চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তৃতার পাশাপাশি থাকবে দুই মিনিটের একটি ভিডিও প্রেজেন্টেশনও। এরপর বিশেষ নৈশভোজেও অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী।
২৮ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টায় ফের জাতিসংঘ সদর দফতরে যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে ইন্দোনেশিয়ান লাউঞ্জ ওয়েস্ট ফয়ারে বিশ্বের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের অভ্যর্থনা জানাবেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন।
ওই দিনই জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের ৭০তম অধিবেশনের মূল পর্বের উদ্বোধনী অধিবেশন শুরু হবে সকাল ৯টায়। সাধারণ অধিবেশন হলে এই অধিবেশনে প্রথম বক্তব্য রাখবেন ব্রাজিলের রাষ্ট্রপ্রধান, এরপর যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্র, পোল্যান্ড ও চীনা রাষ্ট্রপ্রধানরা বক্তব্য রাখবেন।
ওইদিন দুপুরে নর্থ ডেলিগেট লাউঞ্জে জাতিসংঘ মহাসচিবের দেওয়া মধ্যাহ্নভোগে বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সঙ্গে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রীও।
বিকেল ৩টায় বিশ্ব শান্তি রক্ষা বিষয়ক শীর্ষ সম্মেলনে কো-চেয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন ও বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে যুক্তরাষ্ট্র, ইথিওপিয়া, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, নেদারল্যান্ডস, পাকিস্তান, রুয়ান্ডা, উরুগুয়ের রাষ্ট্র কিংবা সরকার প্রধানরা বক্তব্য রাখবেন।
ওই দিনই বিকেল ৫টায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হবে।
পরের দিন ২৯ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধানমন্ত্রী যোগ দেবেন সন্ত্রাস ও চরমপন্থা বিরোধী শীর্ষ সম্মেলনে। যার মূল বক্তা হওয়ার কথা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার। সদর দফতরের ট্রাস্টিশিপ কাউন্সিলে এই সম্মেলনে অংশ নেওয়ার পর বিকেল ৪টায় প্রধানমন্ত্রী অংশ নেবেন বাংলাদেশের আয়োজনে এমডিজি টু এসডিজি- অ্যা ওয়ে ফরোয়ার্ড শীর্ষক সাইড ইভেন্টে। এতে নেদারল্যান্ডস’র রাজা, বেনিনের প্রেসিডেন্ট, জাপানের প্রধানমন্ত্রী, সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী, সাধারণ অধিবেশনের প্রেসিডেন্টসহ আরো অনেকে বক্তব্য রাখবেন। সমাপনী ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ওই সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী যাবেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন কার্যালয়ে। সেখানে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সাংবাদিক সম্মেলন করার কথা রয়েছে তার।
৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ। ওই দিন স্থানীয় সময় আনুমানিক সকাল ১১টার (বাংলাদেশ সময় রাত ৯টার) দিকে প্রধানমন্ত্রী অন্যান্য বছরের মতোই বাংলায় তার ভাষণ দেবেন।
স্থানীয় সময় ৬টায় প্রধানমন্ত্রী বৈঠক করবেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের সঙ্গে। সদরদফতরে মহাসচিবের কার্যালয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
১ অক্টোবর প্রত্যুষে প্রধানমন্ত্রী হোটেল ছাড়বেন। আর জন এফ কেনেডি বিমানবন্দর থেকে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের বিএ-১৭৮ এ লন্ডনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করবেন সকাল ৮টায়।
লন্ডনের স্থানীয় সময় রাত ৮টার দিকে হিথ্রো পৌঁছানোর পর যাবেন লন্ডনের ব্রুক স্টিটস্থ হোটেল ক্লারিজে। পরের দিন ২ অক্টোবর বিকেলে লন্ডনে বাংলাদেশি কমিউনিটির একটি কর্মসূচিতে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই রাতেই তিনি দেশের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করবেন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশের ফ্লাইট বিজি ০০২ উড়াল দেবে। যা বাংলাদেশ সময় ৩ অক্টোবর বেলা ১২টার দিকে পৌঁছাবে সিলেটের ওসমানি বিমানবন্দরে। আর সেখান থেকে ফের রওয়ানা দিয়ে বেলা দেড়টার দিকে তিনি ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন।