মিয়ানমারের জনসংখ্যা বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশের কম। তবে দেশটিতে এইচআইভি নিয়ে বসবাস করা মানুষ (পিউপিল লিভিং উইথ এইচআইভি) বাংলাদেশের চেয়ে ১৯ গুণ বেশি। বাংলাদেশে নতুন আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে ইতিমধ্যে ৫৫ জন এইচআইভি সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়েছে। প্রকৃত সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার হাজার। রোহিঙ্গাদের মধ্যে সচেতনতামূলক ব্যবস্থা না নিলে কক্সবাজারসহ সারা দেশে এইচআইভি/এইডস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জাতীয় এইডস/এসটিডি নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ইহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশের চেয়ে মিয়ানমারে এইচআইভির প্রকোপ বেশি। জাতিসংঘের এইডসবিষয়ক পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে আমরা উদ্বেগজনক তথ্য পেয়েছি। এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্ত করা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা মনে করছেন কয়েক হাজার এইচআইভি রোগী রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে আছে।
জাতীয় কর্মসূচি থেকে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৫৫ জন এইডস রোগী শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে একজন মারা গেছে। আর পুরোনো রোহিঙ্গাদের মধ্যে এইডস রোগী আছে ১০ জন। এই ৬৫ জন এখন সরকারের জাতীয় কর্মসূচি থেকে চিকিৎসা পাচ্ছে।
জাতিসংঘের এইডসবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ইউএনএইডসের সর্বশেষ তথ্য বলছে, মিয়ানমারে এইচআইভির প্রকোপ বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি। মিয়ানমারে জনসংখ্যা ৫ কোটি ২০ লাখ, এর মধ্যে এইচআইভি নিয়ে বসবাসকারী মানুষ ২ লাখ ৩০ হাজার। সেই হিসাবে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১০ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে এইচআইভি নিয়ে বসবাস করছে এমন রোহিঙ্গার সংখ্যা ৪ হাজার ৪২৩ জন। ২০১৬ সালে বাংলাদেশে নতুনভাবে দেড় হাজার মানুষ সংক্রমিত হয়েছিল, মিয়ানমারে এই সংখ্যা ছিল ১১ হাজার।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক ও জাতীয় এইডস/এসটিডি নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির ব্যবস্থাপক মো. বেলাল হোসেন বলেন, রোহিঙ্গা শিবিরে কর্মরত সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্যকর্মীদের এইচআইভি বিষয়ে বিশেষ নজর রাখতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসা রোহিঙ্গাদের এইচআইভি আক্রান্ত বলে সন্দেহ হলে তাদের টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলা হাসপাতাল এবং কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠাতে বলা হয়েছে। সন্দেহভাজনদের মধ্য থেকে এ পর্যন্ত ৫৫ জন শনাক্ত হয়েছে। এদের ৪০ জন মিয়ানমারেই এইডসের চিকিৎসা নিত।
সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, এইচআইভি পরীক্ষার সুযোগ তিনটি সরকারি হাসপাতালে থাকলেও স্বেচ্ছায় রোহিঙ্গারা সেখানে আসছে না। ইহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, ‘জোর করে এইচআইভি পরীক্ষা করা যায় না। করলে তা হবে মানবাধিকারের লঙ্ঘন। আমরা বুঝতে পারছি যে সংক্রমিত মানুষ বেশি। কিন্তু সকলকে শনাক্ত করা ও চিকিৎসার আওতায় আনা যাচ্ছে না।’
ঝুঁকি মোকাবিলায় সরকার ইতিমধ্যে কিছু ব্যবস্থাও নিয়েছে। রোহিঙ্গাদের বিয়ে না করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। রোহিঙ্গা শিবিরগুলোর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একজন করে এইচআইভি-বিষয়ক স্বাস্থ্যকর্মী দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। এই স্বাস্থ্যকর্মীর পোশাক হবে ভিন্ন। ওই স্বাস্থ্যকর্মীর সঙ্গে যেন রোহিঙ্গারা এইচআইভি নিয়ে কথা বলে, সে জন্য শিবিরগুলোতে কর্মসূচি হাতে নেওয়ার কথা ভাবছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।