যশোরের চৌগাছায় নকশিকাঁথায় হাতের কাজ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন গরীব ও দুস্থ নারীরা। সংসারের কাজের ফাঁকে এ কাজ করে বাড়তি আয়ের সুযোগ পাচ্ছেন তারা। সুতা আর সুঁচের খেলায় তৈরি করছেন নকশা করা কাঁথা, শাড়ি, ওয়ালমেট, বিছানার চাদর এবং ওড়না। এরই মাধ্যমে তারা আর্থিক সচ্ছলতার পাশাপাশি বুনছেন ভবিষ্যতের স্বপ্ন।
জানা যায়, উপজেলার পৌর এলাকা ও এর আশপাশের ১১টি গ্রামের ৯ শতাধিক নারী হাতের কাজ করে বাড়তি আয় করছেন। নকশিকাঁথায় নিপুণ বুনোন ও শাড়িতে জরি আর পুঁথি বসানোর কাজ করে সংসারে অভাব ঘোচানোর পাশাপাশি স্বাবলম্বী হচ্ছেন এসব নারী। সাংসারিক কাজের ফাঁকে এ কাজ করছেন তারা। টাকার অভাবে লেখাপড়া প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়া ছাত্রীদের মধ্যে অনেকেই এ পেশার সাথে যুক্ত হয়ে নিজেরাই তাদের লেখাপাড়ার খরচ চালিয়ে নিচ্ছেন। আবার স্বামীহারা অনেক নারী থেমে যাওয়া সংসারের চাকা ঘোরাতে নেমে পড়েছেন এ কাজে।
এ ব্যাপারে পৌর এলাকার কারিকার পাড়ার বন্ধু হস্তশিল্পের পরিচালক আঞ্জুমান আরা বেগম বলেন, একাজ শুরু না করলে আজ হয়তো অনেক অসহায় মহিলাকে মানুষের কাছে হাত পেতে সন্তানের জন্য খাবার যোগাড় করতে হতো।
তিনি বলেন, উপজেলার হোগলডাঙ্গা গ্রামের সনিয়া খাতুন ও বেবি খাতুন চৌগাছা মৃধাপাড়া মহিলা ডিগ্রী কলেজের ছাত্রী। মনমতপুর গ্রামের মিতা খাতুন ও চাঁদপুর গ্রামের লাখি খাতুন হাজী মর্তুজ আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণীর ছাত্রী। সুমি খাতুন ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী। সংসারে অভাব থাকায় তাদের লেখাপড়া প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়ে। এই শিল্পের সাথে যুক্ত হয়ে তারা নিজেরাই লেখাপড়ার খরচ যোগাচ্ছে। এদের মতো আরও অনেক শিক্ষার্থী এ কাজের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে।
এ শিল্পের রামভদ্রপুর গ্রামের গ্রুপ প্রধান রোকেয়া বেগম বলেন, তার সাথে থেকে ৫০ জন নারী প্রতিদিন কাঁথা, শাড়ি ও বিছানার চাদরের নকশার কাজ করছেন। সাত দিনের মধ্যে কাজ শেষে সেগুলো জমা দিয়ে পারিশ্রমিক নিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, একটি শাড়ি নকশার কাজ করতে একজন নারীর সময় লাগে এক সপ্তাহ। এতে মজুরি পাই ৫শ’ থেকে ৭শ’ টাকা। একটি কাঁথার কাজ শেষ করতে এক মাস সময় লাগে। এতে মজুরি পাই ৯শ’ থেকে ১২শ’ টাকা।
তিনি আরও বলেন, আসন্ন শীতকে সামনে রেখে মহাব্যস্ত হস্তশিল্পের নারীরা। দম নেয়ার সময় নেই তাদের। চৌগাছার নারীদের হাতের নকশা করা এ সব কাঁথা, বিছানার চাদর, শাড়ি ও ওয়ালমেট চলে যাচ্ছে যশোর, খুলনা, বরিশাল, সিলেটসহ রাজধানী ঢাকায়। এছাড়া দেশের বাইরেও যাচ্ছে এসব পণ্য। নকশি করা এ সব কাঁথা প্রতিটি বিক্রি হয় পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকায় আর প্রতিটি শাড়ি বিক্রি হয় আট থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত।
এ কাজের গ্রুপ প্রধান ঝরনা বেগম বলেন, প্রথমে কাপড়গুলোতে রকমারি ডিজাইনের সিল বসিয়ে কাঁথা, শাড়ি ও বিছানার চাদরগুলো নারীকর্মীদের কাছে দেয়া হয়। তারা এগুলোতে সুতার বুনন, জরি ও পুঁথি বসানোর কাজ করেন। হাতের কাজ করা এসব কাঁথা, শাড়ি ও বিছানার চাদরের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
গ্রামীণ উন্নয়ন সংস্থার স্বত্বাধিকারী মাহাবুবুল আশরাফ বাবুল মিয়া বলেন, চৌগাছার পৌর এলাকা ও এর আশপাশের ১১টি গ্রামের অবহেলিত নারীরা নকশি কাঁথায় হাতের কাজ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। এখানকার হাতের কাজ করা পণ্যের সারাদেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।