সাবেক বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে দুদককে দেয়া সুপ্রিম কোর্টের চিঠির বৈধতার প্রশ্নে জারিকৃত রুলের উপর কাল মঙ্গলবার রায় দেবে হাইকোর্ট। বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের ডিভিশন বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করবেন।
এর আগে মামলার শুনানিতে অ্যামিকাসকিউরি হিসাবে বক্তব্য রাখেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। তিনি বলেন, বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি রক্ষার দায়িত্ব বার ও বেঞ্চের। উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগে সংবিধানে আইনের কথা বলা আছে। আইন করে যোগ্য ও দক্ষ বিচারক নিয়োগ করা দরকার। এ পর্যায়ে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম বলেন, আপনারা যখন বিরোধী দলে থাকেন তখন এক ধরনের কথা বলেন। আবার যখন সরকারি দলে যান তখন ভিন্ন কথা বলেন।
এ পর্যায়ে বার সভাপতি বলেন, আমি যখন আইন সম্পাদক ছিলাম তখন কিন্তু বিচারক নিয়োগের আইন প্রণয়ের বিষয়ে কথা বলেছি। বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম বলেন, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিচারক নিয়োগে একটি নীতিমালা করা হয়েছিলো। তখন বার সভাপতি বলেন, ওই সময়ে সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি ছিলেন ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। কিন্তু তিনি যখন আইনমন্ত্রী হলেন তখন তিনি বিচারক নিয়োগে কোন আইন প্রণয়ন করলেন না। এ সময় বিচারপতি জয়নুলের পক্ষে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন ও দুদকের পক্ষে খুরশীদ আলম খান শুনানি করেন।
সুপ্রিম কোর্টের চিঠির বিষয়ে অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন শুনানিতে বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যদি স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করত তাহলে এই চিঠির প্রয়োজন হত না। তিনি বলেন, প্রথমে তথ্য সরবরাহ না করলেও পরবর্তীকালে সুপ্রিম কোর্ট বিচারপতি জয়নুলের সকল তথ্য দুদককে দিয়েছে। ফলে ওই চিঠির আর কোন কার্যকারিতা নেই। আদালত বলেন, এটা নিয়ে মিডিয়ায় লেখালেখি হয়েছে। তাই হয়তো পরে তাদের বোধদয় হয়েছে।
এ পর্যায়ে আদালত তার কাছে জানতে চান যে, সুপ্রিম কোর্টের সকল প্রশাসনিক ক্ষমতা প্রধান বিচারপতির হাতে। তাই যেকোনো প্রশাসনিক আদেশ তো তার নির্দেশেই হবার কথা। জবাবে জয়নুল আবেদীন বলেন, প্রধান বিচারপতির নির্দেশক্রমে এ চিঠি দেওয়া হলো, এমন কথাতো চিঠিতে বলা হয়নি। এ চিঠি সুপ্রিম কোর্ট বা প্রধান বিচারপতির আদেশ নয়। আর চিঠি লেখার পরও দুদক চুপ করে বসে থাকেনি। তারা অনুসন্ধান অব্যাহত রেখেছে। তিনি বলেন, এ জাতীয় কোনো চিঠি প্রধান বিচারপতির নির্দেশে দিয়েছে কিনা সেটা সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞাসা করা দরকার ছিলো। হাইকোর্টে আসা ঠিক হয়নি।
আদালত বলেন, সুপ্রিম কোর্টের কথা শুনলেইতো সকলেই ভয় পায়। তাই হয়তো- তারা আসেনি। জবাবে জয়নুল আবেদীন বলেন, আদালতের কথা শুনে ভয় পেলে চলবে না। দুদক চেয়ারম্যানের সরকার/বিরোধী দল/আদালত কাউকেই ভয় পাওয়া উচিত নয়। যদি পান তাহলে ওই ব্যক্তির চেয়ারম্যান পদে থাকা উচিত নয়। আদালত বলেন, এখনতো দেখছি বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব কে করবে সেটি নিয়েও দুর্নীতি হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি জয়নুল আবেদিনের বিরুদ্ধে কোন রকম ব্যবস্থা গ্রহন করা সমীচিন হবে না মর্মে-দুদককে দেয়া সুপ্রিম কোর্টের চিঠি কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে গত ১০ অক্টোবর রুল জারি করে হাইকোর্ট।