ইরানকে মোকাবিলায় মধ্যপ্রাচ্যে আরব দেশগুলোর সঙ্গে নতুন আন্তর্জাতিক জোট তৈরির সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন ইসরায়েলের সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল গাদি আইজেনকোট। আরব দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের এখন সর্বোচ্চ সুসম্পর্ক রয়েছে। তিনি সৌদি ব্যবসায়ী পরিচালিত এক সংবাদমাধ্যমকে বৃহস্পতিবার দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন।
ইসরায়েলের সেনাপ্রধান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সঙ্গে নিয়ে এ অঞ্চলে একটি নতুন আন্তর্জাতিক জোট তৈরির সুযোগ রয়েছে। ইরানের হুমকি বন্ধে অন্যতম একটি কৌশলগত পরিকল্পনা এটি।’
আরবি ভাষার সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া ওই বিশেষ সাক্ষাৎকারের বিষয়বস্তু সঠিক বলে নিশ্চিত করেছে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী। ২০০৫ সালের পর ইসরায়েলের কোনো বাহিনীপ্রধানের দেওয়া প্রথম সাক্ষাৎকার এটি।
সাক্ষাৎকারে আইজেনকোট আরও বলেন, ইরানের মধ্যপ্রাচ্য নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা মোকাবিলায় সৌদি আরবের সঙ্গে সহযোগিতা করতেও প্রস্তুত ইসরায়েল। এ জন্য প্রয়োজনে মধ্যপন্থী আরব দেশগুলোর সঙ্গে অভিজ্ঞতা ও গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় প্রস্তুত তাঁরা।
সৌদি আরবের সঙ্গে সম্প্রতি এমন কোনো তথ্য আদান প্রদান করা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আইজেনকোট বলেন, সৌদি আরবের প্রয়োজন হলেই তাঁরা তথ্য দিতে প্রস্তুত। কারণ, ইসরায়েল ও সৌদি আরবের মধ্যে অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে।
ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েল ও মুসলিম রাষ্ট্র সৌদি আরবের এই এক কাতারে এসে দাঁড়ানোর পেছনে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখছে ইরান প্রশ্নে তাদের অভিন্ন স্বার্থ। এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সুন্নি সম্প্রদায় নিয়ন্ত্রিত মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম শক্তিশালী রাষ্ট্র সৌদি আরব। সৌদি আরব দীর্ঘদিন অনারব শিয়ানিয়ন্ত্রিত ইরানের সঙ্গে বিবাদে জড়িত। সম্প্রতি দুই দেশের মধ্যে দূরত্ব বেড়েছে।
আবার অভিন্ন শত্রু সিরিয়াতে ইরানের প্রভাব নিয়েও বেশ উদ্বিগ্ন ইসরায়েল ও আরব দেশগুলো। কারণ, সেখানে তেহরান ও হিজবুল্লাহ সম্মিলিতভাবে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে সমর্থন করছে। এ ছাড়া উপসাগরীয় আরব দেশগুলো ইয়েমেনে শিয়া বিদ্রোহী হুতি সম্প্রদায়ের প্রতি ইরানের সমর্থনে উদ্বিগ্ন। অন্যদিকে ইরান-সমর্থিত লেবাননের শিয়া সম্প্রদায়ের হিজবুল্লাহ নেতা তাঁদের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর জন্য সৌদি আরব ইসরায়েলকে চাপ দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন।
ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি চলতি সপ্তাহে একই অভিযোগ করেন।
উল্লেখ্য, ২০০৬ সালে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে একটি বিধ্বংসী যুদ্ধ হয়েছিল।
আবার এ ধরনের যুদ্ধের আশঙ্কা আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আইজেনকোট বলেন, ‘লেবাননের হিজবুল্লাহর সঙ্গে দ্বন্দ্বে যাওয়া বা কোনো যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার ইচ্ছা ইসরায়েলের নেই। তবে, সেখানে ইসরায়েলের জন্য কৌশলগত হুমকি আছে, এমন কোনো কিছু মেনে নিতে পারি না। ১১ বছর ধরে উভয় সীমান্তে যে শান্তি বিরাজ করছে, তাতে আমি খুশি। অন্যদিক দিয়ে বিবেচনা করলে দেখা যায়, ইরান সেটাকে উসকে দেওয়ার চেষ্টা করছে।’
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মনে করেন, তাঁর দেশের সঙ্গে আরবের অন্য দেশগুলোর সম্পর্ক ভালো হচ্ছে। তিনি আরব বিশ্বের সঙ্গে এই সম্পর্ককে ‘অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো’ বলে উল্লেখ করেছেন।
তবে এ ব্যাপারে আরব দেশগুলোর পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য আসেনি। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইরান বিষয়ে ইসরায়েল ও আরব জাতিদের অভিন্ন স্বার্থই তাদের কাছে টানছে।