গুম নিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সমালোচনার মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এটা বাংলাদেশের চেয়ে ‘ভয়াবহ’ আমেরিকায়।
সম্প্রতি কয়েকজন ব্যক্তির নিখোঁজ হওয়া নিয়ে আলোচনার মধ্যে বৃহস্পতিবার সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ মানুষের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি তুললে তার প্রতিক্রিয়ায় একথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “(গুম) কী কারণে হচ্ছে, কোথায় হচ্ছে। এটা কি শুধু বাংলাদেশে?
“২০০৯ সালের একটি হিসাব, বৃটেনে দুই লাখ ৭৫ হাজার ব্রিটিশ নাগরিক গুম হয়ে গেল। তার মধ্যে ২০ হাজারের কোনো হদিসই পাওয়া গেল না। আমেরিকার অবস্থা আরও ভয়াবহ।”
বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধান বের করার অন্তরায়ের কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।
“৫৪ হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশে ১৬ কোটি মানুষের বাস। এইটুকু ভৌগলিক সীমারেখার মধ্যে এত মানুষের অবস্থান। অথচ এই সকল উন্নত দেশগুলোর জনসংখ্যা কত। তাদের সব কিছু তো আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন, তারপরও সেই দেশে এতলোক গুম হয়, তার খোঁজ পাওয়া যায় না।”
সেই তুলনায় বাংলাদেশে পরিস্থিতি ভালো দাবি করে তিনি বলেন, “সেই তুলনায় আমরা অবস্থা অনেক বেশি নিয়ন্ত্রণে রেখে যখন কোনো ঘটনা ঘটছে, সাথে সাথে খোঁজ নিচ্ছি।”
বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ২০১৩ সাল থেকে শত শত মানুষকে বেআইনিভাবে গোপন স্থানে আটকে রেখেছে বলে কিছু দিন আগেই অভিযোগ তুলেছিল হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও গুমের অভিযোগ করে আসছে।
সংসদের এই অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের আগে বক্তব্য দিয়ে দাঁড়িয়ে রওশন বলেছিলেন, “মানুষকে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় করছে। এগুলো বানানো কথা না। খবরের কাগজে আছে। কীভাবে অনিরুদ্ধ নিখোঁজ হল। নিখোঁজ হয়ে কোথায় গেল, কে নিয়ে গেল? আমরা জানতে পারিনি।”
বিরোধীদলীয় নেতার বক্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “বিরোধী দলীয় নেতা গুমের কথা বলেছেন। এই গুম তো বহুভাবেই হচ্ছে। অনেকে কিন্তু ফেরতও আসছে। যারা ফেরত আসে বা খুঁজে পাওয়া যায়, তা কিন্তু বড় করে নিউজ হয় না।”
সম্প্রতি নিখোঁজ হওয়ার পর নাটকীয়ভাবে উদ্ধার হওয়া ফরহাদ মজহারের বিষয়টির দিকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের একজন স্বনামধন্য আঁতেল গুম হয়ে গেলেন। পরে দেখা গেল উনি গুম হননি। উনি নিজে নিজেই খুলনায় গেলেন। পরে তাকে খুঁজে পাওয়া গেল।
“এর দোষটা আমাদের? এ ধরনের আরও অনেক ঘটনা তো ঘটে যাচ্ছে। আমি তার নাম-ধাম বলতে চাই না।”
সম্প্রতি নিখোঁজ ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরী ফিরে এলেও নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষক মুবাশ্বার হাসান সিজার ও সাংবাদিক উৎপল দাশের সন্ধান এখনও মেলেনি।
তাদের উদ্ধারে চেষ্টার কথা জানিয়েই পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহিদুল হক কয়েকদিন আগে বলেছিলেন, “নিখোঁজ, গুম, অপহরণ বিষয়গুলো আজকের নয়, এটি ব্রিটিশ আমল থেকেই চলছে। ”