প্রতিবন্ধী নারীদেরও যৌন চাহিদা আছে
প্রকাশ: ২০১৭-১২-১০ ০০:১৩:৪৪
ইরানে বর্তমানে এক কোটিরও বেশি মানুষ শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে সঙ্গী করে জীবন-যাপন করছেন। কিন্তু এই অসুস্থ মানুষদের ঘিরে যে সংস্কৃতি সেখানে বিরাজমান আছে সেটি লজ্জাজনক। সামাজিকভাবে রক্ষণশীল ইরানে এই বিশেষ মানুষদের স্বাভাবিক যৌন-চাহিদার বিষয়টিকে ঘিরে রয়েছে এক ধরনের কুসংস্কার; তাদের কোন যৌন চাহিদা থাকতে পারে না। প্রতিবন্ধী নারীদের ক্ষেত্রে এই কুসংস্কারের মাত্রাটা আরো বেশি।
উত্তর ইরানের ছোট একটি গ্রামে বসবাস করেন ৪১ বছর বয়সী প্রতিবন্ধী নারী মিত্র ফারজানাদেহ। স্বাভাবিক যৌন-চাহিদার ব্যাপারে তার নিজের অভিজ্ঞতা ও হতাশার কথা তুলে ধরেছেন ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসির কাছে।
‘অামি একজন নারী। আমার শরীরের ৭৫ শতাংশ বিকলাঙ্গ। হ্যাঁ, আমার ভালোবাসার অভিজ্ঞতা আছে। আমি সব সময় বলি যে ভালোবাসায় পড়েনি অথবা অভিজ্ঞতা নেই তার জীবনটা খামারের ভেতর আবদ্ধ একটা জীবনের মতো- প্রাণহীন।’
‘আমার বয়স যখন ১১ বছর তখন আমি বুঝতে পারি প্রতিবেশি এক যুবকের প্রতি আমার বিশেষ ভালো লাগা কাজ করছে। এই অনুভূতি আমার কাছে বোধগম্য ছিল না।’
‘ওই দিনগুলোতে, আমি নিজেকে মানুষ মনে করতাম না। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা ও বিকলাঙ্গতার কারণে আমি মনে করতাম না আমার বেঁচে থাকার অধিকার আছে। আমি অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর মুহূর্তটির জন্য অপেক্ষা করতাম।’
‘১৪ বছর ধরে আমার ভালোবাসাকে নিজের মধ্যে কবর দিয়ে রেখেছিলাম। এটি আমার নিজের মধ্যে আবদ্ধ ছিল। আমার এই ভালোবাসা তার কাছে ও আমার পরিবারকে জানিয়েছিলাম। সে আমার ভালোবাসাকে সাদরে গ্রহণ করেছিল, কিন্তু আমার পরিবার তা মেনে নেয়নি।’
‘এটা কয়েক বছর ধরে আমার জীবনে নরকে পরিণত করেছে। কিন্তু তার প্রতি আমার ভালোবাসা আমাকে শিখিয়েছে কীভাবে নিজেকেও ভালোবাসতে হয়; এটা আমার নিজের মধ্যে সঞ্চারিত হয়েছে। গত ৩০ বছর ধরে আমি ওই মানুষটিকে ভালোবাসি; যদিও আমরা কখনোই একত্রিত হতে পারি নাই।’
‘সত্য হচ্ছে আমার শারীরিক প্রতিবন্ধকতা। আমি একজন নারী। অন্য একজন নারীর মতো সব চাহিদা ও অনুভূতি রয়েছে আমারও।’
‘আমি চাই রাতে আমার ভালোবাসার মানুষটা তার কাঁধে টেনে নেবে আমাকে, মাথার চুলে হাত বুলিয়ে দেবে। দুঃখজনক হলো আমাদের সমাজের অনেক মানুষ মনে করেন, আমার মতো মানুষেরা ভালোবাসতে পারেন না অথবা তাদের কেউ ভালোবাসতে পারে না। এই বিষয়টি আমাকে পীড়া দেয়।’
‘ঘটনা হচ্ছে আমি যাকে ভালোবাসি বাবা তার সঙ্গে আমাকে থাকার অনুমতি দেয়নি। এটা আমাকে যন্ত্রণা দেয়। আমার মতো অনেক প্রতিবন্ধী মানুষ ভুগছেন কারণ, আমাদের যৌন ও মানসিক চাহিদাকে দমন করা হচ্ছে।’
আমি বিশ্বাস করি, আমাদের নিজেদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনাটা জরুরি। আমাদেরও যৌন চাহিদা, সক্ষমতা ও সীমাবদ্ধতা আছে।
বিশ্বাস করতে হবে পরিপূর্ণ জীবন-যাপনের অধিকার আমাদেরও আছে। শারীরিক অক্ষমতা জয় করে জীবন উপভোগ করার অধিকার আছে। আমরা যখন এটি বিশ্বাস করতে শুরু করবো তখন আশ-পাশের মানুষজন আমাদের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাবে।
‘আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি যে, অনেক সময় প্রতিবন্ধী মানুষদের যৌন শক্তি সুস্থ মানুষের চেয়েও বেশি হতে পারে। কারণ স্বাভাবিক উপায়ে শক্তি প্রদর্শন আমাদের জন্য অনেক সময় অসম্ভব হয়ে পড়ে। এই উদ্বৃত্ত শক্তিই যৌন শক্তি হিসেবে প্রকাশিত হতে পারে।’
‘আমি মনে করি যদি একজন প্রতিবন্ধী নারীর যৌন চাহিদা পূরণ হয় না, তবে তা খুব ক্ষতিকর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’ সংক্ষেপিত। বিবিসি