প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি–বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে ইঙ্গিত করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে এসে বলেছিলেন, নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জিতবেই—তথ্য আছে। আজকে আবার সেই তথ্য এসে গেছে। এবার বলছেন, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জিতবে, বেশি ভোটে জিতবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, কোন তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এই কথা বলেন?’
আজ মঙ্গলবার দুপুরে কমরেড মো. তোয়াহার ৩০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এম-এল) এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যিনি বলছেন, তিনি বেশির ভাগ সময় বিদেশেই সময় কাটান, একেক সময় এসে একেক কথা বলেন। দেন না একটি নির্বাচন, তাহলে তো প্রমাণ হয়ে যায়। একটি নির্বাচন দেন, যে নির্বাচনে আপনারা সরকারে থাকবেন না এবং নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে। যে নির্বাচনে জনগণ তার ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে পারবে। প্রত্যেকটি ভোটার গিয়ে যার ভোট সে দেবে। একটু দেয়ালের লিখনটা পড়ুন। জনগণ যখন মতপ্রকাশের সুযোগ পাবে, তখন সে সঠিক মত দেবে।’ ফখরুল বলেন, তিনি বলছেন, আওয়ামী লীগকে পরাজিত করার শক্তি নাকি দেশের কোনো দলের নেই। তবে কি বাইরের কোনো দলের আছে?
গতকাল সোমবার আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রতি মানুষের যে বিশ্বাস এবং ভালোবাসা চলে এসেছে; আওয়ামী লীগকে ভোটে হারানোর মতো কোনো দল বাংলাদেশে নেই। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২০০৮–এর নির্বাচনের চেয়ে বেশি ভোট পাবে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের বাইরে থেকে ঘুরে এসে বলতে হয় না যে আমরা জিতব। আমরা আমাদের দেশের মানুষের চোখের দিকে তাকিয়ে, পালস বুঝে বলতে পারি যে তোমরা (আওয়ামী লীগ) পরাজিত হবে।’ তিনি বলেন, নির্বাচন দিতে হবে। নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। ২০১৪ সালের মতো নির্বাচন দিলে জনগণ তা মেনে নেবে না। ‘ধানাইপানাই’ করে সংবিধানের দোহাই দিলে হবে না।
নিম্ন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধির বিষয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, পত্র-পত্রিকাকে ধন্যবাদ। তারা বলতে দ্বিধা করেনি। সরকারের হাতেই থাকছে নিয়ন্ত্রণ। বিচার বিভাগে যে শৃঙ্খলাবিধি গতকাল করা হয়েছে, তাতে সরকারের হাতেই নিয়ন্ত্রণ থাকছে। এটা একটি ভয়াবহ রকমের বিচ্যুতি, ভয়াবহ রকমের একটি চক্রান্ত। বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করেই তারা ভিন্নমতকে, ভিন্নপথকে নিয়ন্ত্রণ করবে।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগের বিএনপি মহাসচিব বলেন, কল্পিত, মনগড়া আর মনের মাধুরী মিশিয়ে এসব গল্প তৈরি করা হচ্ছে। যে পত্রিকা বা অনলাইন টেলিভিশনের কথা বলা হচ্ছে, সেগুলোর কোনো অস্তিত্ব নেই। এসব ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও মিথ্যা। যাদের পায়ের নিচে মাটি থাকে না, তারা এ ধরনের মিথ্যাচার করে। এসব মিথ্যাচার কারা করে? যারা রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে যায়, তারা এসব মিথ্যাচার করে। রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে পারছে না, তাই মিথ্যা দিয়ে মোকাবিলা করতে চাইছে। মামলা দিয়ে, হামলা করে, গুম করে দিয়ে বিএনপিকে মোকাবিলা করার চেষ্টা করছে সরকার।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আবারও প্রশাসনের হাতে পড়ল
এদিকে প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আবারও প্রশাসনের হাতে গিয়ে পড়ল। কোনোভাবেই একে মুক্ত করা গেল না। দুর্ভাগ্য প্রধান বিচারপতি যখন মুক্তির চেষ্টা করেছেন, তখন তাঁকে পদ হারাতে হলো। পরবর্তী সময়ে দেশ ত্যাগ করতে হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট নির্বাচন-২০১৭–এর জাতীয়তাবাদী পরিষদ প্যানেল পরিচিতি উপলক্ষে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, অধিকার আদায় ও অধিকার রক্ষার সূতিকাগারখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখন পুরোপুরিভাবে একদলীয় চিন্তাভাবনার জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানে জয় পরাজয় লক্ষ্য হবে না, তার চেয়ে বড় লক্ষ্য হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে মানুষের অধিকার রক্ষার লড়াইকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। তিনি বলেন, তবে দুঃখ হয়, এখন আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিবাদ করা হয় না। অন্যায়ের বিরুদ্ধে কোনো সোচ্চার কণ্ঠধ্বনি উচ্চারণ হচ্ছে না। সেখানেও একটি দলের প্রাধান্য বিস্তারের ফলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস হয়ে যেতে বসেছে। তারা গণতন্ত্রের নামে গণতন্ত্রকে হত্যা করছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক আক্তার আহমেদ খানের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) সভাপতি অধ্যাপক এ কে এম আজিজুল হক, অধ্যাপক মামুন আহমেদ, অধ্যাপক ওবায়দুল ইসলাম, সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।