সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রিভিউ শুনানিতে আন্তর্জাতিক আইনজীবী নিয়োগের অনুমতি চেয়ে বার কাউন্সিলে আবেদন করেছেন আইনজীবী একলাছ উদ্দিন ভূঁইয়া। তিনি ষোড়শ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিটকারী নয় আইনজীবীর মধ্যে একজন।
সোমবার সকালে রেজিস্ট্রি ডাকযোগে বার কাউন্সিলে এ আবেদন করেন তিনি। আবেদনে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রিভিউ শুনানিতে ভারতীয় সুপ্রিমকোর্টের বিশিষ্ট আইনজ্ঞ অ্যাডভোকেট আগারওয়াল আমবুজ, অ্যাডভোকেট আগারওয়াল অনামিকা গুপ্তা ও অ্যাডভোকেট অধিমোলাম ভেংকটারমনকে নিয়োগের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। আবেদন পাওয়ার ১০ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রার্থনা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, রাষ্ট্রপক্ষ এখনও এ মামলায় রিভিউ আবেদন করেনি। গত ২৮ নভেম্বর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, আমি বলেছিলাম এ মাসের মধ্যে অর্থাৎ নভেম্বরের মধ্যে রিভিউ করব কিন্তু এখন মনে হচ্ছে নভেম্বরের মধ্যে করতে পারব না। তবে গত ২৭ নভেম্বর (সোমবার) আমরা ষোড়শ সংশোধনীর পূর্ণাঙ্গ রায়ের সার্টিফাইড (সত্যায়িত) কপি পেয়েছি। রিভিউ দাখিলের জন্য এখন থেকে আমরা আরও ২৭ দিন সময় পাব।
এদিকে সোমবার অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আশা করছি খুব শিগগিরই রিভিউ দাখিল করতে পারব। রিভিউ দাখিলের আগে মিডিয়াকে জানানো হবে বলেও জানান তিনি।
আবেদন প্রসঙ্গে একলাছ উদ্দিন ভূইয়া বলেন, যতটুকু জেনেছি রাষ্ট্রপক্ষ স্বল্প সময়ে এ মামলার রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করবেন। মামলাটি জনগুরুত্বপূর্ণ। এজন্য তিনজন আন্তর্জাতিক মানের সংবিধান বিশেষজ্ঞ আইনজীবীর জন্য আবেদন করেছি। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। তারা আমাকে এ মামলার বিষয়ে সহযোগিতা করবেন।
গত ৩ জুলাই ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে হাইকোর্টের দেয়া রায় বহাল রেখে সর্বসম্মতিক্রমে চূড়ান্ত রায়টি দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলও খারিজ করে দেন সর্বোচ্চ আদালত।
এরপর গত ১ আগস্ট ৭৯৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশিত হয়। ওই রায়ের পর্যবেক্ষণে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা দেশের রাজনীতি, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি, সুশাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন।
ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে তোপের মুখে থাকা প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা ছুটি নিয়ে দেশত্যাগের ২৮ দিনের মাথায় সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশের হাইকমিশনে গত ১০ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দেন। পরে তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন রাষ্ট্রপতি।
গত ২০ অক্টোবর অ্যাটর্নি জেনারেল জানিয়েছিলেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে দেয়া রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন তৈরি করতে কাজ করছেন অ্যাটর্নি জেনারেলসহ ১১ সদস্যের একটি কমিটি। রায়ের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ হিসেবে ‘রিভিউ’ প্রস্তুতির জন্য এ কমিটি কাজ করছে।
এক আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় গত ১০ আগস্টের সংবাদ সম্মেলন আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, মামলার ফ্যাক্ট অব ইস্যুর সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এমন অনেক অপ্রাসঙ্গিক কথা প্রধান বিচারপতি তার রায়ে বলেছেন। রায়ে জাতীয় সংসদ সম্পর্কে কটূক্তির পাশাপাশি পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশের স্বাধীনতা কোনো একক ব্যক্তির কারণে হয় নাই এমন বক্তব্যকে মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বকে অস্বীকার করার চেষ্টা হিসেবে দেখছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
এরপর গত ১৮ আগস্ট রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করতে সরকার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তিনি বলেন, রায়ের সত্যায়িত কপির জন্য আবেদন করা হয়েছে। রায় ভালোভাবে পড়া হচ্ছে, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই রিভিউ আবেদন করা হবে।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় এবং তার কিছু পর্যবেক্ষণের বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নিতে জাতীয় সংসদে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আদালত তার এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে সংসদে আনা সংবিধান সংশোধন বাতিলের এই রায় দিয়েছে।
এরপর কী আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে, তা স্পষ্ট করা না হলেও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, এই প্রক্রিয়ার কাজ তারা ইতোমধ্যে শুরু করেছেন। আইনমন্ত্রী এর আগে সুপ্রিমকোর্টের এই রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করবেন বলে সংসদেই জানিয়ে বলেছিলেন, তাতে তারা ‘কামিয়াব’ হবে বলে আশাবাদী।