বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) বিজ্ঞানীরা পাঁচটি নতুন জাতের ধান উদ্ভাবন করেছেন। নতুন জাতগুলো গতকাল বুধবার জাতীয় কারিগরি কমিটির চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে। জাতগুলো হচ্ছে ব্রি ধান ৮২, ব্রি ধান ৮৩, ব্রি ধান ৮৪, ব্রি ধান ৮৫ ও ব্রি ধান ৮৬।
এ জাতগুলো অল্প দিনে উচ্চফলনশীল হওয়ায় দেশের মোট ধান উৎপাদনে এগুলো উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে। এর মধ্যে ব্রি ৮৬ জাতটিতে জৈবপ্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। ধানবিজ্ঞানীরা মনে করছেন, বোরো মৌসুমের সবচেয়ে জনপ্রিয় জাত ব্রি ২৮-এর মতোই জনপ্রিয় হয়ে উঠবে এ জাত। ব্রি ৮২-তে কৃষক পাবেন সবচেয়ে উচ্চ ফলন, যা উৎপাদিত হবে স্বল্পতম সময়ে। এগুলোর মাধ্যমে জাত উদ্ভাবনে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করলেন ব্রির বিজ্ঞানীরা।
ব্রির পরিচালক (গবেষণা) তমাল লতা আদিত্য এ বিষয়ে বলেন, দীর্ঘদিনের পরিশ্রমে ব্রির বিজ্ঞানীরা নতুন পাঁচ জাতের ধান উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছেন। প্রথমবারের মতো একটি জাতে জৈবপ্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।
ব্রির বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, নতুন উদ্ভাবিত জাতগুলো দেশের মাঠে মাঠে কৃষকের মুখে হাসি ফোটাবে।
সদ্য উদ্ভাবিত ব্রি ৮২ রোপা আউশ মৌসুমের স্বল্পকালীন একটি জাত। এর জীবনকাল ১০০ থেকে ১০৫ দিন। এটির গড় ফলন হেক্টরে সাড়ে চার টন থেকে সাড়ে পাঁচ টন পর্যন্ত। উদ্ভাবিত নতুন জাতটির চালে অ্যামাইলোজের পরিমাণ ২৮ শতাংশ। প্রতি দানায় প্রোটিনের পরিমাণ ৭ দশমিক ৬ শতাংশ।
বিজ্ঞানীরা জানান, ব্রি ৮২-এর জীবনকাল হবে রোপা আউশ মৌসুমের প্রচলিত জাত ব্রি ৪৮-এর চেয়েও চার থেকে পাঁচ দিন কম। ফলে এ ধান আবাদের পর আমন আবাদেরও সুযোগ সৃষ্টি হবে।
ব্রি ৮৩ বোনা আউশ মৌসুমের একটি জাত। এর গড় ফলন হেক্টরে চার টন থেকে সাড়ে পাঁচ টন পর্যন্ত, যা প্রচলিত ব্রি ৪৩-এর চেয়েও এক টন বেশি। এ জাতের জীবনকাল ১০০ থেকে ১০৫ দিন। এর চালে অ্যামাইলোজের পরিমাণ ২৬ শতাংশ এবং দানায় প্রোটিনের পরিমাণ ৭ শতাংশ।
ব্রি ৮৪ বোরো মৌসুমের একটি স্বল্পমেয়াদি জাত। একই সঙ্গে এটি উচ্চফলনশীল জিংকসমৃদ্ধও। এর জীবনকাল ১৪০ থেকে ১৪৫ দিন এবং হেক্টরে গড় ফলন ছয় থেকে সাড়ে ছয় টন। চালে অ্যামাইলোজের পরিমাণ ২৫ দশমিক ৫ শতাংশ। দানায় জিংকের পরিমাণ ২৭ দশমিক ৬ শতাংশ এবং প্রোটিনের পরিমাণ ৮ দশমিক ৩ শতাংশ। এর জীবনকাল বোরো মৌসুমের জনপ্রিয় জাত ব্রি ধান ২৮-এর মতোই। এটি আবাদের পর পাট চাষেরও সুযোগ তৈরি হবে। ব্রি ধান ৮৫ রোপা আউশ মৌসুমের নতুন একটি জাত। এ জাতটির গড় ফলন সাড়ে ৪ টন থেকে সাড়ে ৫ টন পর্যন্ত।
ব্রি সূত্রে জানা গেছে, নতুন এই জাতের জীবনকাল বন্যামুক্ত পরিবেশে ১০৬ থেকে ১১০ দিন। এর চালে অ্যামাইলোজের পরিমাণ ২৫ দশমিক ২ শতাংশ। চালের আকার-আকৃতি লম্বা ও মাঝারি চিকন এবং রং সাদা। ভাত ঝরঝরে। দানায় প্রোটিনের পরিমাণ ৮ দশমিক ১ শতাংশ।
ব্রির জৈবপ্রযুক্তি বিভাগ (এন্থার কালচার) ব্যবহারের মাধ্যমে প্রথমবারের উদ্ভাবন করেছে ব্রি ৮৬। সদ্য উদ্ভাবিত এ জাতটির গড় ফলন ছয় থেকে সাড়ে ছয় টন পর্যন্ত। তবে উপযুক্ত পরিবেশ পেলে এর ফলন আট টন পর্যন্ত হতে পারে।
উদ্ভাবিত ব্রি ৮৬-এর জীবনকাল ১৪০ থেকে ১৪২ দিন। এর চালে অ্যামাইলোজের পরিমাণ ২৫ শতাংশ। দানায় প্রোটিনের পরিমাণ প্রায় ১০ শতাংশ। এটি ব্রি ধান ২৮-এর পরিপূরক জাত হবে।
ব্রির মহাপরিচালক মো. শাহজাহান কবীর বলেন, ‘উদ্ভাবিত নতুন পাঁচটি জাতের মধ্যে তিনটি আউশ মৌসুমের ও দুটি বোরো মৌসুমের। আউশ মৌসুমকে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্য রয়েছে সরকারের। সে জন্যই আমরা এবার আউশের ওপর জোর দিয়েছি।’
জাতগুলো গতকাল কারিগরি কমিটিতে চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে।