৫০ লাখেই বউ মিলবে বউ বাজারে
প্রকাশ: ২০১৫-১০-৩১ ১৭:৪৭:৫৩
বাজারে গেলে কী না পাওয়া যায়! রোজকার প্রয়োজনের নানা জিনিস কিনতে সকাল- বিকেল ঝুলি নিয়ে আপনি বাজারে হাজির হন। রান্নার পাঁচফোড়ন থেকে সেলাইয়ের সুতো, লাউ শাক থেকে খলসে মাছ– বাজারে কী না মেলে, তা নিয়ে শব্দ খরচ করে লাভ নেই। কথায় বলে, পয়সা ফেললে বাঘের দুধও মেলে। তা-ই বলে বউ! বুলগেরিয়ার কনে বাজারের কথা না জানলে গানটা ঠাট্টাই থেকেই যেত।
ইউরোপের দেশ বুলগেরিয়া। সেখানকার একটি জায়গার নাম স্টারা জাগোরা। গ্রাম হলেও আদতে শহরতলি। একটা বড় মাঠ। একদিকে ঘোড়া কেনাবেচার আসর বসেছে। আরেকদিকে বেশ ভিড়। চলুন, এবার সেই স্টারা জাগোরা এলাকায় যাওয়া যাক।বাজারের একদিকে অনেক মানুষের ভিড়। কিন্তু কোনো দোকান বসেনি। কেউ জিলিপিও ভাজছে না, বেলুনও বিক্রি হচ্ছে না। ‘হরেক মাল ১০টাকা’ গোছের কোনো দোকান নেই। হাট বসেছে, অথচ দোকানপাট নেই। এমন হয় নাকি! তার থেকে বেশি আশ্চর্যের, এই বাজারে আসা মানুষজনের হাবভাব! দারুণ ফিটফাট কয়েকজন যুবক। আর ফাটাফাটি সাজগোজ করা কয়েকজন তরুণী।
কোথাও একট অদৃশ্য সাইনবোর্ড ঝুলছে– কনে বাজার! আজব বাজারের কাহিনি বলার আগে এর নেপথ্যে থাকা রোমা সম্প্রদায়ের কথা বলতে হবে। বুলগেরিয়ার খুব ছোট এক জনগোষ্ঠী রোমা, তারা রক্ষণশীল খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ। সংখ্যায় মাত্র ১৮ হাজার। স্হানীয় ভাষায় এদের বলা হয় কালাইদঝি। পেশায় এরা প্রধানত তাম্রকার। ধর্মীয় আচার আচরণ পালন শুধু নয়, জীবনচর্যায় রোমা সম্প্রদায়ের মানুষ খুব গোঁড়া। এদের সমাজে ছেলেমেয়েদেব মধ্যে অবাধ মেলামেশার সুযোগ নেই। তারা একটু বড় হলেই বিধিনিষেধের বেড়াজালে আটকা পড়ে। মেয়েদের বয়স পনেরো হলে স্কুলে যাওয়া বন্ধ। অভিভাবকদের আশঙ্কা, মেয়েদের দিকে কেউ কুনজর দিতে পারে! অর্থাৎ, মন দেয়া-নেয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু বিবাহ নামের প্রথাটি আছে রোমা সমাজে।
পাত্রী বাছাইয়ের রীতি ভারী অদ্ভুত। বরের জন্য কনে বাছাই করতে বসে পাত্রীর বাজার। স্টারা জাগোরায় বছরে চারবার এই মেলা বসে– বসন্ত ও গ্রীষ্মে দু’বার করে। বাবা-মায়ের সঙ্গে দারুণ সেজেগুজে বাজারে হাজির হন তরুণীরা। পাত্রপক্ষের নজর টানতে খুবই আকর্ষণীয় পাত্রীদের সাজসজ্জা। পরনে ঝলমলে পোশাক, হাইহিল জুতো আর মিনি স্কার্ট। মাসকারা, ফিতে, ক্লিপ– নানা আয়োজন। বিভিন্ন ধরনের গয়নায় মোড়া পাত্রীর অঙ্গ। তাঁদের চাহনিতে গাঢ় আবেদন।পাত্রীরা লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। বাজারে আসে পাত্রপক্ষ। ধরা যাক, একজন পাত্রের একটি মেয়েকে পছন্দ হল। ছেলেটি তাঁর কাছে যায়। দু’জনে কিছুক্ষণ কথা বলে। অভিভাবকরা নিজেদের মধ্যে আলাপচারিতা সেরে নেন। মুখে মুখেই বায়োডাটা বিনিময় হয়ে যায়। যদি পছন্দ হয় ভালো, না হলে পাত্রপক্ষ আবার অন্য পাত্রীর দিকে হাঁটা দেয়। পাত্রী পছন্দ হলে শুরু হয় দরাদরি। মেয়েটি রূপে লক্ষ্মী গুণে সরস্বতী হলে দাম বাড়ে, না হলে কমে। একেবারে বাজারের কায়দায় ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে দরাদরি শুরু হয়।সাধারণভাবে ১৩ থেকে ২০ বছরের মধ্যে বিয়ে হয় রোমা কন্যাদের। বয়স কম হলে দাম বেশি, দ্বিতীয় বিয়ে হলে দর কম– এমন নানা খুঁটিনাটি বিষয় দেখেশুনে সিদ্ধান্তে পৌঁছয় দু’পক্ষ। বুলগেরিয়ার মুদ্রার নাম লেভ। ১ লেভ সমান প্রায় ০.৫৬ ডলার। বুলগেরীয় অর্থনীতি সঙ্কটে পড়ায় পাত্রীর দাম গড়ে ১০-২০ হাজার লেভের মধ্যে ওঠানামা করছে। তার মানে পছন্দমতো বউ ঘরে আনার জন্য বাংলাদেশী টাকায় ১০ লাখের মতো টাকা খসাতে হচ্ছে অভিভাবকদের!
ইউরোপের অর্থনীতি যখন চাঙ্গা ছিল, তখন সুন্দরী ও গুণবতী পাত্রীর দাম চড়েছে প্রায় ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত! আমাদের দেশে যৌতুকের প্রথা এখনও দিব্যি টিকে রয়েছে। ‘পাত্রী চাই’ বিজ্ঞাপনে ফর্সা মেয়েদের কদর। এগিয়ে থাকা বা তথাকথিত আধুনিকতার খোলস আমাদের গায়ে এঁটে রয়েছে। তাই স্মার্টফোন কিংবা হাল ফ্যাশনের পোশাক প্রমাণ করে না, সমাজ কতটা আধুনিক হলো। মোটা মাইনের চাকুরে কিংবা ডাক্তার হোক বা আইটি পাত্র, তাদের অভিভাবকেরা পাত্রীর জন্য পণ চাইতে কসুর করেন না– ছেলে মানে যে হিরের টুকরো! রক্ষণশীল রোমা সম্প্রদায় চাকা উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছে। রোমা পিতারা কন্যাদায়গ্রস্ত নন– পুত্রদায়গ্রস্ত! ছেলের বিয়ে দিয়ে বউ ঘরে আনতে তাদেরই পকেট বেশি খসে!
সানবিডি/ঢাকা/রাআ