জোনাথান সুইফটের বই গালিভারস ট্রাভেলসে বেটে-খাটো মানুষদের পরিচয় পাওয়া যায়। জাহাজডুবির পর ঢেউয়ে ভেসে লিলিপুট নামের একটি দ্বীপ দেশের তীরে ওঠে লেমুয়েল গালিভার। সেখানে তার দেখা হয় লিলিপুটের বাসিন্দাদের সঙ্গে। তাদের উচ্চতা ১৫ সেন্টিমিটারের বেশি নয়। সুইফটের লিলিপুট রাজ্য একটা কল্পনা হলেও এর সঙ্গে তুলনীয় একটা গ্রাম ইরানের পূর্বাঞ্চলে আজও দেখা যায়। গ্রামটির নাম মাখুনিক। ১৫শ’ বছরের পুরনো এ গ্রামটি আফগানিস্তান-ইরান সীমান্ত থেকে ৭৫ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ের আড়ালে অবস্থিত। এখন থেকে ১০০ বছর আগেও মাখুনিক নামের এ গ্রামের অধিবাসীরা উচ্চতায় মাত্র ১ মিটারের মতো ছিল (প্রায় ৩ ফিট)। ইরানিদের গড় উচ্চতার চেয়ে এরা প্রায় ৫০ সেন্টিমিটার খাটো। খবর বিবিসির।
গত শতাব্দীর চল্লিশের দশক পর্যন্ত গ্রামটির কথা জানাই ছিল না বিশ্ববাসীর। এমনকি ইরানের অন্যান্য অঞ্চলের মানুষেরও জানা ছিল না- তাদের বাড়ির কাছেই রয়েছে এমন একটি বিস্ময় জাগানো গ্রাম। ১৯৪৬ সালে গ্রামটির অস্তিত্ব আবিস্কার করে একদল প্রতœতত্ত্ববিদ। গ্রামটি আবিষ্কারের পর বিভিন্ন সময়ে সেখানে হাজির হয়েছেন নতুন কিছু আবিষ্কারের নেশায়। বরাবরই নতুন নতুন বিস্ময়ের দেখা পেয়েছেন তারা। এখানকার বাড়িগুলোর আকার খুব ছোট। বাড়িগুলোর আকারই বলে দেয়, সেখানকার মানুষ ছোট আকৃতির ছিল। এর প্রমাণ মেলে পরে। ২০০৫ সালে এখানে ২৫ সেন্টিমিটার উচ্চতার একটি মমি করা দেহ পাওয়া যায়। এ আবিষ্কারে এমন বিশ্বাসে হাওয়া দেয় যে, মাখুনিকসহ ১৩টি গ্রাম একসময় ’বেটে মানুষদের শহর ছিল’।
২০০৬ সালের এক জরিপ মতে, বর্তমানে গ্রামটিতে ৭০০ মানুষের বাস। এরা কেউই তাদের পূর্বপুরুষদের মতো নয়। তবে পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্য মেনে তাদের ঘরবাড়ি আগের মতোই রয়ে গেছে। মাখুনিকের মানুষেরা কী কারণে বেটে ছিলেন সে প্রশ্নেরও উত্তর খুঁজেছেন বিজ্ঞানীরা। এটা করতে গিয়ে বিভিন্ন মত দিয়েছেন তারা। সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য মতটি হল এ গ্রামের মানুষ কয়েকটি কারণে লম্বা হতে পারেনি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণ হল, শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় আমিষ ও ভিটামিনের অভাব ও সেখানকার পারদযুক্ত পানি পান করা।
এছাড়া নিজেদের আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে বিয়ে করা।