উবার, পাঠাওসহ অন্যান্য ‘রাইড শেয়ারিং’ সার্ভিস পরিচালনার জন্য প্রতিষ্ঠান ও গাড়ির মালিককে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কাছ থেকে তালিকাভুক্তি সনদ নেয়ার বিধান রেখে ‘রাইড শেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা, ২০১৭’ এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম প্রেস ব্রিফিংয়ে এ অনুমোদনের কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘রাইড শেয়ারিংয়ের কার্যক্রম এটা অলরেডি শুরু হয়ে গেছে। উবার বা বিভিন্ন এজেন্সি কার্যক্রম চালাচ্ছে, এটাকে আইনি কাঠামোতে আনার জন্য এ নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।’ নীতিমালায় আটটি অনুচ্ছেদ রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘রাইড শেয়ারিং সার্ভিস পরিচালনার জন্য বিআরটিএ’র কাছ থেকে রাইডশেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানকে এনলিস্টমেন্ট (তালিকাভুক্তির) সার্টিফিকেট (সনদ) নিতে হবে। মোটরযানের মালিকও এ সার্টিফিকেট গ্রহণ করবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাইড শেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের টিআইএন (ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার) থাকতে হবে। আর যদি কোম্পানি হয় তবে পাবলিক-প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির যে শর্তাবলি সেগুলো মেনে চলতে হবে।’ নীতিমালা অনুযায়ী যাত্রী চাহিদা, সড়কের নেটওয়ার্কের ক্যাপাসিটি রাইডিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা ইত্যাদি মিলে আওতা বিআরটিএ নির্ধারণ করবে। রাইড শেয়ারিং সার্ভিস প্রতিষ্ঠানের সার্ভিস এলাকায় অফিস থাকতে হবে বলে জানান শফিউল আলম।
কোনো প্রতিষ্ঠান রাইড শেয়ারিংয়ের সঙ্গে যুক্ত হতে বিআরটিএ’র নির্ধারিত সংখ্যক মোটর মোটরযান নিয়োজিত করতে হবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘রাইড শেয়ারিং কার্যক্রমের জন্য গাড়ির সংখ্যার একটা সিলিং (সীমা) দেয়া আছে। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ ডিটিসিএ অনুমোদিত এলাকার জন্য কমপক্ষে ১০০টি, চট্টগ্রাম মহানগরীর জন্য ৫০টি ও দেশের অন্যান্য মহানগর শহর এলাকার জন্য কমপক্ষে ২০টি কার বা বাহন থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘নীতিমালা অনুযায়ী রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের আওতায় ব্যক্তিগত মোটরযান যেমন- মোটরসাইকেল, মোটরকার, জিপ, মাইক্রোবাস এবং অ্যাম্বুলেন্স অনুর্ভুক্ত হতে পারে।’ রাইড শেয়ারিং সার্ভিসে ব্যবহৃত মোটরযানের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যেমন রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট, ফিটনেস, ট্যাক্স টোকেন, এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট হালনাগাদ থাকতে হবে বলে জানান তিনি।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও বলেন, ‘রাইড শেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের তালিকাভুক্তির সনদ পাওয়ার পর রাইডশেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, মোটরযানের মালিক ও চালকের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি করতে হবে। যেখানে সব পক্ষের অধিকার ও দায়-দায়িত্বের বিষয়ে উল্লেখ থাকবে। মোটরযান মালিক বা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান এক মাস আগে নোটিশের মাধ্যমে চুক্তি বাতিল করতে পারবে।’
নির্ধারিত স্ট্যান্ড ও অনুমোদিত পার্কিং স্থান ছাড়া কোনো রাইড শেয়ারিং মোটরযান যাত্রী সংগ্রহের উদ্দেশ্যে যেখানে-সেখানে অপেক্ষমাণ থাকতে পারবে না বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে। এ নীতিমালার অধীনে একজন মোটরযান মালিক মাত্র একটি মোটরযান রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের আওতায় পরিচালনার অনুমতি পাবেন জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, ‘ব্যক্তিগত মোটরযান রেজিস্ট্রেশন গ্রহণের পর এক বছর পার না হলে রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের আওতায় সেবা দিতে নিয়োজিত হতে পারবে না।’
তিনি বলেন, ‘বিআরটিএ’র ওয়েব পোর্টালে রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানের আওতায় সব মোটরযানের তালিকা শ্রেণিবদ্ধভাবে একটি মেন্যুতে রাখতে হবে। যাত্রীর অভিযোগ জানানোর সুযোগ রাখার কথাও বলা হয়েছে নীতিমালায়।’ শফিউল আলম বলেন, ‘নীতিমালার কোনো শর্ত ভঙ্গ করলে প্রতিষ্ঠানের এনলিস্টমেন্ট সনদ বাতিল ও কার্যক্রম বন্ধ করাসহ দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট নেয়ার পদ্ধতি
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের রাইড শেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট ছাড়া কোনো সার্ভিস পরিচালনা করা যাবে না। রাইড শেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানকে এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেটের জন্য অনলাইনে বিআরটিএর কাছে আবেদন করতে হবে। আবেদনের সঙ্গে এনলিস্টমেন্ট ফি এক লাখ টাকা দিতে হবে। এছাড়া ট্রেড লাই লাইসেন্স, ই-টিআইএন, ভ্যাট ও অন্যান্য কাগজপত্র দাখিল করতে হবে।’
এনলিস্টমেন্ট ফি সরকার সময়ে সময়ে কমবেশি করতে পারবে জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, ‘আবেদনপত্র পাওয়ার পর কর্তৃপক্ষ যাচাই-বাছাইয়ের করে অনলাইনে এক বছরের জন্য (প্রতিষ্ঠানকে) এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট দেবে। মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন মাস আগে নবায়নের জন্য আবেদন করতে হবে। নবায়ন ফি প্রতি বছরে ১০ হাজার টাকা।’ ‘এনলিস্টমেন্ট সনদ হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হলে এক হাজার টাকা দিয়ে প্রতিলিপি সংগ্রহ করা যাবে। রাইডশেয়ারিং সেবা দেয়া প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা বা অন্য কোনো পরিবর্তনের কারণে এনলিস্টমেন্ট সনদে বর্ণিত বিবরণে কোনো সংশোধনী আনা প্রয়োজন হলে এক হাজার টাকা ফি দিয়ে তা সংশোধন করা যাবে।’