সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহার পদত্যাগের পর কে নতুন প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছেন, তা নিয়ে সব মহলেই চলছে আলোচনা। দেশের সচেতন মহলের দৃষ্টি এখন বঙ্গভবন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং সুপ্রিম কোর্টের দিকে।
গুঞ্জন রয়েছে চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে কিংবা ফেব্রুয়ারির প্রথমে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হতে পারে।
প্রধান বিচারপতি হিসেবে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞাকেই, নাকি আপিল বিভাগের অন্য কোনো বিচারপতিকে ওই পদে বসানো হবে- তা জানতে সবাই উদগ্রীব।
আগামী ৩১ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি সিনহার মেয়াদ শেষ হবে। কোনো প্রধান বিচারপতির চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার কয়েকদিন আগেই পরবর্তী প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে থাকে।
আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পদ শূন্য ঘোষণা করে চলতি সপ্তাহে বা আগামী মাসে নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে। প্রধান বিচারপতি পদে নিয়োগের জন্য জ্যেষ্ঠতা অনুসারে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা এবং আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নাম শোনা যাচ্ছে। তবে ঝোঁক বেশি দ্বিতীয় জ্যেষ্ঠ বিচারপতির দিকে।
প্রধান বিচারপতি নিয়োগ বিশ্লেষণে দেয়া যায়, আপিল বিভাগের সিনিয়র বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করার প্রথা যেমন রয়েছে তেমনি তাকে ডিঙিয়ে অপেক্ষাকৃত কনিষ্ঠ বিচারপতিকেও নিয়োগ দেয়ার নজির রয়েছে।
সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট আপিল বিভাগের যে কোনো বিচারপতিকেই প্রধান বিচারপতি পদে নিয়োগ দিতে পারেন। এ কারণে পুরো বিষয়টি এখন প্রেসিডেন্টের ওপর নির্ভর করছে।
এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, খুব শিগগিরই প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হবে। সেই সঙ্গে হাইকোর্ট বিভাগেও কিছু বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হবে।
কত দিনের মধ্যে বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হবে এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, বিচারপতি নিয়োগের প্রক্রিয়া চলবে চলতি জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারির প্রথম পর্যন্ত।
কে হতে পারেন দেশের পরবর্তী প্রধান বিচারপতি এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শ.ম রেজাউল করিম বলেন, প্রধান বিচারপতি নিয়োগ রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার। তিনি সাংবিধানিক ক্ষমতার অধীনে উপযুক্ত ব্যক্তিকেই প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দিবেন।
তবে আমাদের প্রত্যাশা প্রধান বিচারপতি নিয়োগে যেন কোনরূপ আইনের ব্যত্যয় না ঘটে এবং অনাকাঙ্ক্ষিত বির্তক সৃষ্টি না করে। সে বিষয়টি মহামান্য রাষ্টপতি সদয় বিবেচনা রাখবেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, প্রধান বিচারপতি কে হবেন তা প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল। প্রেসিডেন্ট কাকে এ পদে বসাবেন তা তিনিই জানেন। সংবিধান ৯৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষমতা কেবল প্রেসিডেন্টের।
তিনি আরও বলেন, স্বাভাবিকভাবে আপিল বিভাগের সিনিয়র বিচারপতি প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পেয়ে থাকেন। আমি মনে করি এবারও সিনিয়রটি লঙ্ঘন হবে না। সিনিয়রিটির ভিত্তিতে নিয়োগ হলে বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিই পরবর্তী ২২তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পাবেন।
সুপ্রিম কোর্ট সূত্রে জানা গেছে, আপিল বিভাগে বর্তমানে পাঁচজন বিচারপতি রয়েছেন। ক্রম অনুযায়ী দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো, আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা সবার ওপরে, দ্বিতীয় সিনিয়র বিচারক হলেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এবং তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন বিচারপতি মো. ইমান আলী। এছাড়া ক্রম অনুযায়ী আরও রয়েছেন বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।
বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা ২০১৮ সালের ১০ নভেম্বর অবসরে যাবেন। বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর এবং বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ২০২৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর অবসরে যাবেন। বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর এবং বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দায় ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি অবসরে যাবেন।
উল্লেখ, ২ অক্টোবর প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার ছুটিতে যাওয়ার পর ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবে মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা দায়িত্ব পালন করছেন। গত ১০ নভেম্বর প্রধান বিচারপতির পদ থেকে এসকে সিনহা পদত্যাগ করলে বিষয়টি নিয়ে আদালতসহ দেশব্যাপী আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয় কে হচ্ছেন পরবর্তী প্রধান বিচারপতি।