বাণিজ্য মেলা প্রায় শেষের দিকে। দিন যতই গড়াচ্ছে ততই বাড়ছে ক্রেতা সমাগম। বিশেষ করে মেলায় দেশীয় ব্র্যান্ড ওয়ালটন প্যাভিলিয়নে প্রতিদিনই দেখা যাচ্ছে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। চলছে কেনাকাটার ধূম। ক্রেতা সমাগম এবং কেনাকাটা ভালোভাবেই সামলে নিচ্ছেন অভিজ্ঞ কর্মকর্তারা। সার্বিক বিক্রিতে কর্তৃপক্ষও খুশি।
বাণিজ্য মেলা ঘুরে দেখা গেছে, ওয়ালটন প্যাভিলিয়নে হাজার হাজার ক্রেতা-দর্শনার্থীর ভিড়। মেলায় আগত বেশিরভাগ ক্রেতা-দর্শনার্থী অন্তত একবারের জন্য হলেও বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক্স জায়ান্ট ওয়ালটন প্যাভিলিয়নে যাচ্ছেন। তারা কিনছেন কিম্বা দেখছেন প্যাভিলিয়নে সজ্জিত ফ্রিজ, টেলিভিশন, এয়ার কন্ডিশনার, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, বিভিন্ন হোম ও কিচেন অ্যাপ্লায়েন্সেসসহ ওয়ালটনের সাত শতাধিক বৈচিত্রময় মডেলের পণ্য। অনেকেই শুধু পরিদর্শনের উদ্দেশ্যে গেলেও রাইস কুকার, ইন্ডাকশন কুকার, ব্লেন্ডার, গ্যাস স্টোভ, ইস্ত্রি, ইলেকট্রিকস লাঞ্চ বক্স, রুম হিটারসহ বিভিন্ন হোম ও কিচেন অ্যাপ্লায়েন্সেস কিনে ফিরছেন।
গৃহবধূ শাম্মী আক্তার জানান, বাণিজ্য মেলায় বেশি সংখ্যক মডেলের পণ্য পাওয়া যায়। বিশেষ করে, নতুন নতুন প্রযুক্তি ও মডেলের সব পণ্য মিলে। মেলায় অংশ নেয়া সব ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ডের শোরুম ঘুরে দেখলাম- সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মডেলের পণ্য নিয়ে এসেছে ওয়ালটন। এদের পণ্যের দামও তুলনামূলক কম। তাই দেখতে আসলেও অনেক কিছুই কিনে ফেললাম।
ওয়ালটন প্যাভিলিয়ন (নম্বর-২৩) পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, কনজ্যুমার গুডস এর পাশাপাশি এবার প্লাস্টিক মোল্ড, ডাই, এলজিপি, এলডিপি, নাট, বোল্ট, স্ক্রুসহ ইন্ডাস্ট্রিয়াল সলিউশনস প্রদর্শন ও বিক্রি হচ্ছে। পণ্য উৎপাদনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ সাপোর্ট বা মেশিনারিজ, যন্ত্রাংশ ও অন্যান্য সেবা প্রদানকেই ইন্ডাস্ট্রিয়াল সলিউশনস বোঝানো হয়। নিজেদের প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি দেশ-বিদেশের শিল্পোদ্যাক্তাদের টার্গেট করেই ইন্ডাস্ট্রিয়াল সলিউশনস ম্যানুফ্যাকচারিং করছে ওয়ালটন; যা রপ্তানিও হচ্ছে। তিনি জানান, এবারের মেলায় ওয়ালটনের সব পণ্যের বিক্রি বেশ ভালো।
ওয়ালটন প্যাভিলিয়নের সমন্বয়ক শাহ শহীদ চৌধূরী জানান, এবার ৭’শতাধিক মডেলের ইলেকট্রনিক্স, ইলেকট্রিক্যাল, হোম ও কিচেন অ্যাপ্লায়েন্সেস পরিদর্শন ও বিক্রি করছে তারা। এর মধ্যে রয়েছে শতাধিক মডেলের নতুন পণ্য।
মেলা উপলক্ষ্যে ওয়ালটনের ফ্রস্ট, নন-ফ্রস্ট ও ডিপ ফ্রিজে যুক্ত হয়েছে ৪৪ টি নতুন মডেল। এর মধ্যে রয়েছে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি আইওটি বেজড স্মার্ট ফ্রিজ, ২১ মডেলের ফ্রস্ট ফ্রিজ, ৮ মডেলের টেম্পারড গ্লাস ডোর রেফ্রিজারেটর, ৯ মডেলের নন-ফ্রস্ট রেফ্রিজারেটর ও ৬ মডেলের ডিপ ফ্রিজ। সেইসঙ্গে এসেছে আইওটি বেজড স্মার্ট এসি। নতুন এসেছে আয়োনাইজার প্রযুক্তির এসি। যা বিশুদ্ধ বায়ু প্রবাহ নিশ্চিত করে।
এসেছে আগামী প্রজেম্মর কোয়ান্টাম ডট প্লাস প্রযুক্তির স্পেকট্রা-কিউ টিভিসহ বেশকিছু নতুন মডেলের স্মার্ট ও এলইডি টেলিভিশন। আপকামিং মডেল হিসেবে ওয়ালটন প্যাভিলিয়নে প্রদর্শিত হচ্ছে দেশের প্রথম বড় পর্দার মাল্টি-টাচ কম্পো টিভি। ওয়ালটন ল্যাপটপে নতুন যুক্ত হয়েছে সপ্তম প্রজম্মের কোরআই-৫ প্রসেসর সমৃদ্ধ ১৫.৬ ইঞ্চি ডিসপ্লের ল্যাপটপ। রয়েছে শিক্ষার্থীদের উপযোগি সাশ্রয়ী মূল্যের ল্যাপটপও।
ওয়ালটন প্যাভিলিয়নের ইনচার্জ শফিকুল আলম জানান, মেলায় অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ডের তুলনায় ওয়ালটন প্যাভিলিয়নে ক্রেতা সমাগম বেশি। ফলে, বিক্রিও বেশ ভালো। তবে, মেলা শেষের দিকে বিক্রি আরো কয়েকগুণ বাড়বে বলে তার প্রত্যাশা।
গ্রিন মেথডে তৈরি ওয়ালটনের তিন তলা প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়নের নিচতলায় প্রদর্শিত হচ্ছে ফ্রিজ, এসি, এলইডি টেলিভিশনসহ অন্যান্য হোম ও কিচেন অ্যাপ্লায়েন্সেস। এর মধ্যে রয়েছে ২১ মডেলের ফ্রিজার, ৩১ মডেলের নন ফ্রস্ট ফ্রিজ, ৮৬ মডেলের ফ্রস্ট ফ্রিজ, ১০৩ মডেলের এলইডি টিলিভিশন, ২ মডেলের আল্ট্রা এইচডি টেলিভিশন, ২৩ মডেলের এয়ার কন্ডিশনার, ২৪ মডেলের রাইস কুকার, ৫ মডেলের কিচেন কুকওয়্যার, ১৩ মডেলের আয়রন, ৬ মডেলের আইপিএস, ১০ ধরনের অটো ভোল্টেজ স্টাবিলাইজার, ২৪ মডেলের ব্লেন্ডার, ৬ মডেলের ফ্যান, এলইডি বাল্ব, কয়েক মডেলের ওভেন, ইন্ডাকশন কুকার, হেয়ার ড্রায়ার, এয়ার কুলার, ওয়াশিং মেশিন, রিচার্জেবল ও পোর্টেবল ল্যাম্প, জুসার, মাল্টি কুকার, টোস্টার, গ্যাস স্টোভ ও ওয়াটার ডিস্পেন্সার। আরো রয়েছে একটি করে মডেলের ওয়েট মেশিন, ইলেকট্রিক ওভেন, প্রেসার কুকার, ভেজিটেবল (সালাদ) মেকার, ফুড প্রসেসর, ক্লথ ড্রায়ার, স্যান্ডউইচ মেকার, মপ সেট (ফ্লোর ও গাড়ি পরিষ্কারের জন্য), রুম হিটার, স্ট্যান্ড মিক্সার ও বিটারস, এয়ার ফ্রাইয়ার ইত্যাদি। মেলায় এসব পণ্য কিনলেই ক্রেতারা পাচ্ছেন ৮ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড়। পাশাপাশি, টিভি, ফ্রিজসহ অন্যান্য ভারী পণ্যে বিনামূল্যে ক্রেতাদের ঘরে পৌঁছে দেয়ার সুবিধা দিচ্ছে ওয়ালটন।
দ্বিতীয় তলায় আছে ১৭ মডেলের কম্প্রেসর, ২৭ মডেলের ল্যাপটপ, ৪৭ মডেলের স্মার্টফোন, ১০ মডেলের ট্যাব, ১৯ মডেলের জেনারেটর। এর মধ্যে একটি মডেলের জেনারেটর রয়েছে, যা ডিজেল-চালিত। প্রদর্শিত হচ্ছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে ওয়ালটনের তৈরি উচ্চ ক্ষমতার লিফটও। তৃতীয় তলায় রয়েছে আইটি সাপোর্ট, সিসিটিভি মনিটরিং, স্টোর ও কর্মকর্তাদের কক্ষ। উল্লেখ্য, বাণিজ্য মেলায় সেরা ভ্যাটদাতার পুরস্কার চালু হওয়ার পর থেকে প্রতিবছরই সেরা ভ্যাটদাতার সম্মান অর্জন করে আসছে ওয়ালটন। এছাড়াও প্রায় প্রতিবছরই সেরা প্যাভিলিয়নের পুরস্কার পাচ্ছে দেশীয় এই প্রতিষ্ঠানটি।