মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডারের 'উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন' করার পরিকল্পনা ঘোষণা করার পর এর নিন্দা জানিয়েছে চীন, রাশিয়া এবং ইরান। পেন্টাগনের এক নীতিনির্ধারণী কৌশলপত্রে বলা হয়, আমেরিকা এখন যে পরমাণু বোমা বানাবে তা হবে ছোট আকারের, এবং তা মূলত রাশিয়ার হুমকি মোকাবিলা করার জন্যই ।
এর কারণ হলো, রাশিয়া মনে করছে মার্কিন পরমাণু বোমাগুলো এত বড় আকারের যে তা আসলে কখনো ব্যবহার করা হবে না, তাই এগুলোকে তারা হুমকি বলে মনে করছে না। এ কারণেই যুক্তরাষ্ট্র এখন ঠিক করেছে তারা নতুন ধরনের এবং ছোট আকারের পারমাণবিক বোমা বানাবে।
এসব ছোট আকারের বোমার ক্ষমতা হবে ২০ কিলোটন বা তার কম। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এর ধ্বংসক্ষমতাও প্রচণ্ড। ১৯৪৫ সালে জাপানের নাগাসাকিতে যে বোমাটি ফেলা হয়েছিল তার ক্ষমতা ছিল এ রকমই - এবং তাতে ৭০ হাজারেরও বেশি লোক মারা গিয়েছিল।
তবে গবেষণা সংস্থাগুলোর মতে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে পরমাণু অস্ত্র আছে ৬ হাজার ৮০০, রাশিয়ার ৭ হাজার, ফ্রান্সের ৩০০, যুক্তরাজ্যের ২১৫, চীনের ২৭০, ভারতের ১৩০, পাকিস্তানের ১৪০, ইসরাইলের ৮০, আর উত্তর কোরিয়ার আছে ২০টি । সব দেশই এসব তথ্যের ব্যাপারে কড়া গোপনীয়তা বজায় রাখে। তবে যেটুকু জানা যায়, তা হলো - পৃথিবীর মাট ৯টি দেশের হাতে এখন ৯ হাজার পরমাণু বোমা আছে - যদিও স্নায়ুযুদ্ধের অবসানের পর এ সংখ্যা আগের চেয়ে কমে গেছে।
পরমাণু বোমাগুলো অনেক ক্ষেত্রে বসানো আছে ক্ষেপণাস্ত্রের মাথায়। তা ছাড়া আছে বিভিন্ন সামরিক বিমানঘাঁটিতে বা অস্ত্রের গুদামে। বিভিন্ন দেশে এখন শত শত পারমাণবিক বোমা বসানো-ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা আছে। আমেরিকান ক্ষেপণাস্ত্রগুলো বসানো আছে বেলজিয়াম, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, এবং তুরস্কে - সব মিলিয়ে এগুলোর সংখ্যা প্রায় ১৫০।
অন্তত ১৮০০ পরমাণু বোমা আছে যেগুলো খুব স্বল্প সময়ের নোটিশে নিক্ষেপ করা যাবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সব পরমাণু-শক্তিধর দেশই এখন তাদের অস্ত্রগুলোর আধুনিকায়ন করছে, বা করার পরিকল্পনা করছে। সবচেয়ে বেশি পরমাণু বোমা আছে যুক্তরাষ্ট্র আর রাশিয়ার হাতে। এ দুটি দেশের হাতে আছে ১৫ হাজার বোমা - তবে এই হিসেবে এমন বোমাও ধরা হয়েছে যেগুলো এখন 'অবসরে' যাচ্ছে অর্থাৎ এগুলো অচিরেই খুলে ফেলা হবে। স্টকহোমের একটি শান্তি গবেষণা ইন্সটিটিউট বলছে, ১৯৮০ দশকে পারমাণবিক বোমা বা ওয়ারহেডের সংখ্যা ছিল প্রায় ৭০ হাজার।
পরমাণু অস্ত্র আছে এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ভারত, পাকিস্তান ও উত্তর কোরিয়ার হাতে। ইসরাইলের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র আছে বলে মনে করা হলেও তারা কখনো এ কথা স্বীকার বা অস্বীকার কোনোটাই করেনি।
ভারত, ইসরাইল আর পাকিস্তান কখনো পরমাণু অস্ত্র-বিস্তার রোধ চুক্তি বা এনপিটিতে সই করেনি। উত্তর কোরিয়া সই করেও ২০০৩ সালে এ থেকে বেরিয়ে যায়। এই চুক্তি অনুযায়ী স্বীকৃত পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হচ্ছে মাত্র পাঁচটি স্বাক্ষরকারী দেশ - আমেরিকা, রাশিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স, ও চীন। এই চুক্তিতে অস্বীকৃত দেশগুলোর পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা, বেলারুশ, কাজাখস্তান ও ইউক্রেন তাদের পরমাণু কর্মসূচি পরিত্যাগ করেছে।
বলা হয় আমেরিকা রাশিয়া ও ব্রিটেন তাদের পরমাণু অস্ত্রে সংখ্যা কমাচ্ছে। ইসরাইল ও ফ্রান্সের অস্ত্রের সংখ্যা অপরিবর্তিত আছে। অন্যদিকে চীন, পাকিস্তান, ভারত ও উত্তর কোরিয়া তাদের পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যা বাড়াছে বলে মার্কিন বিজ্ঞানীদের একটি ফেডারেশন বলেছে। সূত্র: বিবিসি বাংলা।