কর (মূল্য সংযোজন কর-ভ্যাট) ফাঁকির টাকা দিতেই হচ্ছে বেসরকারি মোবাইল অপারেটর কোম্পানি আজিয়াটা লিমিটেডকে। এ সংক্রান্ত চূড়ান্ত দাবিনামা জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
বুধবার প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে চূড়ান্ত দাবিনামা জারি করেছে এনবিআর। এর আগে রবি ৯২৪ কোটি টাকা কর ফাঁকি দিয়েছিল।
তবে রবির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আইনগতভাবে এনবিআর এ দাবি করতে পারে না। উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে তাদের হয়রানি করা হচ্ছে। তারা এনবিআরের চেয়ারম্যানের কাছে বিষয়টির শুষ্ঠু সুরাহার চেয়ে আবেদন করবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতাধীন বৃহৎ করদাতা ইউনিটের (এলটিইউ-ভ্যাট) পক্ষ থেকে কর ফাঁকির বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে একাধিকবার রবিকে চিঠি দেয়া হয়। চিঠিতে ১৫ দিনের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হলেও দুই মাস পরেও তারা কোনো জবাব দেয়নি। তাই ভ্যাট আইন অনুযায়ী চূড়ান্ত দাবিনামা জারি করা হয়েছে।
এলটিইউ তথ্য অনুসারে, রবি ২০১২-১৬ সাল পর্যন্ত রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। যা এলটিইউএর নিজস্ব নিরীক্ষায় উদঘাটিত হয়েছে।
বুধবার এলটিইউ-ভ্যাট থেকে ৯২৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা পরিশোধে রবির প্রধান কার্যালয়ের ঠিকানায় পৃথক পাঁচটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। এসব চিঠিতে কোম্পানিটির ভ্যাট ফাঁকির বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হয়। আইন ও বিধি বহির্ভূতভাবে রেয়াত গ্রহণ, ইন্টারচার্জ, মার্জ ফি (রবি ও এয়ারটেল একীভূতকরণ) এবং উৎসে ভ্যাট সঠিকভাবে পরিশোধ না করে রবি এ ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে রবির হেড অব রেগুলেটরি সাহেদ আলম জাগো নিউজকে বলেন, ভ্যাট পরিশোধের চালান দেয়ার দায়িত্ব বিটিসিএলের। কিন্তু এলটিইউ সেখানে না গিয়ে আমাদের হয়রানি করছে। এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমরা এনবিআরের চেয়ারেম্যানের কাছে এ বিষয়ে আবেদন করবো। যেন তিনি সুষ্ঠু সুরাহা করেন।
তিনি আরও বলেন, চিঠি দিয়ে আমাদের সময় দেয়া হয়নি। ফলে আমরা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাইনি।
এলটিইউ-ভ্যাট সূত্র জানায়, এলটিইউ'র আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রতিবছর নিরীক্ষা করা হয়। এ জন্য কারিগরি, তথ্য-প্রযুক্তিজ্ঞানে অভিজ্ঞ ও আইনগত বিষয়ে পারদর্শী এনবিআরের অপেক্ষাকৃত চৌকস কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে বিশেষায়িত টিম গঠন করা হয়। এ নিরীক্ষার অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠানের আমদানির তথ্য যাচাই, ব্যাংক হিসাব বিবরণী, ডিলারের সঙ্গে লেনদেনের তথ্য যাচাই, কোন দরে বিক্রি হচ্ছে আর কোন দরে ভ্যাট অফিসকে দেখানো হচ্ছে, কাঁচামাল কোথা থেকে আসে কিংবা যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ হচ্ছে কিনা- এসবের সঙ্গে প্রতি মাসে দাখিল হওয়া রিটার্নের তথ্য মিলিয়ে দেখা হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে আকষ্মিক উপস্থিত হয়ে প্রতিষ্ঠানের কাছে রক্ষিত কাগজপত্র পর্যালোচনা করা হয়।
দাবিনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০১২-১৬ পর্যন্ত ইন্টারকানেকশন চার্জ বাবদ রবির কাছে বিটিসিএলের ৪০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। এর মধ্যে কিছু টাকা চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করেছে রবি।
নিয়মানুযায়ী, এ অর্থের ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট পরিশোধের কথা থাকলেও সেটি করেনি প্রতিষ্ঠানটি। সে হিসেবে ৫ কোটি ২২ লাখ টাকা ভ্যাট দাবি করেছে এলটিইউ-ভ্যাট।
অন্যদিকে রবি আজিয়াটা ও এয়ারটেল একীভূত করা হলেও মার্জ ফি ও স্পেকট্রাম চার্জের বিপরীতে ৯১ কোটি টাকা ভ্যাট পরিশোধ করেনি।
অপর দাবিনামায় উলে্লখ করা হয়, ২০১৩ জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিধি বহির্ভূতভাবে ১১৬ কোটি ৪০ লাখ রেয়াত নিয়েছে রবি আজিয়াটা। নিরীক্ষাকালীন সময়ে প্রতিষ্ঠানটি ব্যাটারি, ক্যাবল, প্রিন্টেড বোর্ড, রাউটার, সুইচ আমদানির সময় রেয়াত নিয়েছে। অথচ এসব ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী আমদানিতে রেয়াত নেই। এছাড়া রবি এসব পণ্য যথাযথভাবে ক্রয় হিসাব পুস্তকে এন্ট্রি করেনি। ফলে এ রেয়াত অবৈধ। তাই রবিকে রেয়াতের অর্থ ফেরত দিতে বলা হয়েছে।
অন্য আরেকটি দাবিনামার বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি এসএপি সফটওয়্যার পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির প্রদেয় ভ্যাটের পরিমাণ ৩ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকা। কিন্তু পরিশোধ করেছে ২ হাজার ৯৭৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রায় ৫৫৩ কোটি টাকার ভ্যাট কম দিয়েছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির কাছে রক্ষিত তথ্যভাণ্ডার থেকে পাওয়া তথ্যে ১৫৮ কোটি টাকার উৎসে ভ্যাট ফাঁকির তথ্যও বের হয়ে আসে। সব মিলিয়ে এসএপি সফটওয়্যার বাবদ ৫৫৩ কোটি ও উৎসে ভ্যাট বাবদ ১৫৮ কোটি টাকাসহ মোট ৭১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা ভ্যাট পরিশোধ করেনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রবি আজিয়াটার ভাইস প্রেসিডেন্ট (কমিউনিকেশনস অ্যান্ড কর্পোরেট রেস্পন্সিবিলিটি) ইকরাম কবীর জাগো নিউজকে বলেন, দাবিনামার বিষয়ে নিজেদের মধ্য আলাপ-আলোচনা চলছে। পরে (সংবাদ মাধ্যম) আনুষ্ঠানিক জানানো হবে।