সাকিব আল হাসানের না থাকাটা বুঝতেই দিচ্ছেন না বাংলাদেশের বামহাতি স্লো অর্থোডক্স আবদুর রাজ্জাক। চার বছর পর টেস্ট একাদশে ফিরে তিনি যে এতটা বিধ্বংসী হয়ে উঠবেন, সেটা কে ভাবতে পেরেছিল! রাজ্জাক নিজেও হয়তো এতটা ভাবেননি। ক্যারিয়ার সেরা বোলিংটাই করে ফেললেন তিনি। লঙ্কানদের চারজন ব্যাটসম্যানকে পাঠিয়েছেন তিনি সাজঘরে।
সর্বশেষ তার শিকার হলেন উইকেটে জমে যাওয়া ওপেনার কুশল মেন্ডিস। শুরু থেকে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পড়তে থাকলেও একপাশ আগলে রেখে লঙ্কানদের এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন কুশল মেন্ডিস; কিন্তু লাঞ্চ বিরতির পর ব্যাট করতে নেমেই রাজ্জাকের ঘূর্ণির সামনে আর টিকতে পারলেন না।
বিরতি থেকে এসেই প্রথম বলে রাজ্জাককে বাউন্ডারি মারেন মেন্ডিস। পরের বলেই রাজ্জাকের ঘূর্ণি ফাঁদে পড়েন তিনি। বল আউট সুইং করে বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে ফেলে দিয়ে গেলো অফ স্ট্যাম্পের উইকেট। ৯৮ বলে ১০ বাউন্ডারি আর ১ ছক্কায় ৬৮ রান করেন মেন্ডিস।
এরপরের ওভারেই তাইজুলের স্লো এবং লো বলে পরাস্ত হলেন নতুন ব্যাটসম্যান হিসেবে মাঠে নামা নিরোশান ডিকভেলা। তাইজুলের বল মাটি থেকে বলতে গেলে উঠেইনি। লো বলটি গিয়ে সোজা আঘাত হানে স্ট্যাম্পে। ১ রান করেই ফিরতে বাধ্য হলেন লঙ্কান উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান।
এ রিপোর্ট লেখার সময় শ্রীলঙ্কার রান ৩৩ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১১৫। ৯ রান নিয়ে ব্যাট করছেন রোশেন সিলভা। ১ রানে উইকেটে রয়েছেন দিলরুয়ান পেরেরা। ক্যারিয়ারে এর আগে রাজ্জাকের সেরা বোলিং ছিল ৯৩ রানে ৩ উইকেট। এবার ইতিমধ্যেই তিনি নিয়ে ফেলেছেন চারটি উইকেট।
দ্বিতীয় স্পেলে এসেই আরও দুর্বার হয়ে উঠলেন আবদুর রাজ্জাক রাজ। শুরুতেই বাংলাদেশকে ব্রেক থ্রু এনে দিয়েছিলেন তিনি। স্ট্যাম্পিং করিয়েছিলেন দিমুথ করুনারত্নেকে। প্রথম স্পেলে ৫ ওভার বল করার পর মাঝে তাকে বিরতি দিয়ে তাইজুল, মোস্তাফিজ এবং মেহেদী হাসান মিরাজকে দিয়ে বল করার অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
ইনিংসের ২৮তম ওভারে আবারও রাজ্জাকের হাতে বল তুলে দেন রিয়াদ। বোলিং করতে এসে আরও বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন তিনি। পরপর দুই বলে ফিরিয়ে দিলেন শ্রীলঙ্কার অন্যতম সেরা দুই ব্যাটসম্যানকে। দানুশকা গুনাথিলাকা এবং অধিনায়ক দিনেশ চান্ডিমালকে দেখিয়ে দেন সাজঘরে ফেরার পথ। শুধু তাই নয়, দারুণ এক হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও তৈরি করেছিলেন তিনি। যদিও রোশেন সিলভা এসে রাজ্জাককে আর হ্যাটট্রিকটি করতে দিলেন না।
ওভারের প্রথম বলেই রাজ্জাকের করা বলটি হালকা লাফিয়ে উঠেছিল। বুঝতে না পেরে পেছনের পায়ে ভর করে শট খেলেছিলেন গুনাথিলাকা। কিন্তু সেটি উঠে যায় মিড অফে। সেখানে দাঁড়ানো ছিলেন মুশফিক। মাথার ওপর দিয়ে যাওয়া বলটি লাফিয়ে ঠিকই তালুবন্দী করে ফেললেন তিনি। পতন ঘটলো লঙ্কানদের তৃতীয় উইকেটের।
পরের বলে খেলতে নামেন দিনেশ চান্ডিমাল। লঙ্কানদের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। রাজ্জাকের ফুল লেন্থের বল হালকা ইনসুইং করে ভেতরে ঢুকেছিল। ব্যাট পেতে দিয়েছিলেন চান্ডিমাল। কিন্তু টার্ন বুঝতে পারেননি তিনি। ফলে ব্যাট ফাঁকি দিয়ে গিয়ে সোজা বলটি আঘাত হানে স্ট্যাম্পে। বোল্ড হয়ে গেলেন লঙ্কান অধিনায়ক। ৯৬ রানে সফরকারীদের বসিয়ে রেখেই ২ উইকেট তুলে নিলেন রাজ্জাক।
এর আগে আবদুর রাজ্জাকের দেখানো পথে হাঁটলেন আরেক স্পিনার তাইজুল ইসলাম। দলীয় ১৪ রানে প্রথম উইকেট পড়ার পর প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছিলেন কুশল মেন্ডিস আর ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। ৪৭ রানের জুটিও গড়ে ফেলেন তারা দু’জন। তবে তাইজুলের বলে সাব্বির রহমানের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যেতে হলো ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে।
দলীয় ৬১ রানের সময় তাইজুলের দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে সাব্বির রহমানের হাতে ক্যাচ তুলে দেন ধনঞ্জয়া। এ সময় তিনি ব্যাট করছিলেন ১৯ রান নিয়ে।
ম্যাচের শুরুতে চার বছর পর টেস্ট দলে ফিরেই চমক দেখিয়ে দিলেন আবদুর রাজ্জাক রাজ। টস জিতে ব্যাট করতে নামা শ্রীলঙ্কান শিবিরে শুরুতেই আঘাত হানলেন অভিজ্ঞ এই স্পিনার। তার স্পিন ভেলকিতে পরাস্ত করলেন লঙ্কান ওপেনার দিমুথ করুনারত্নেকে।
ইনিংসের ৬ষ্ঠ ওভারের প্রথম বলেই করুনারত্নেকে ফাঁদে ফেলেন তিনি। রাজ্জাকের বলে ফ্লিক করতে ক্রিজ ছেড়ে এগিয়ে আসেন করুনারত্নে। ব্যাট ফাঁকি দিয়ে দুই পায়ের মাঝ দিয়েই বল চলে গেলো উইকেটের পেছনে লিটন কুমারের হাতে। সুযোগটা সঙ্গে সঙ্গেই কাজে লাগিয়ে দিলেন লিটন। ফেলে দিলেন করুনারত্নের বেলস। স্ট্যাম্পিং হয়ে গেলেন তিনি।
১৪ রানের মাথাতেই পড়লো শ্রীলঙ্কার প্রথম উইকেট। সেই উইকেটটি এনে দিলেন অভিজ্ঞ স্পিনার আবদুর রাজ্জাক রাজ।
বাংলাদেশ একাদশ
তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহীম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (অধিনায়ক), লিটন দাস, সাব্বির রহমান, মেহেদী হাসান, আবদুর রাজ্জাক, তাইজুল ইসলাম এবং মোস্তাফিজুর রহমান।
শ্রীলঙ্কা একাদশ
দিমুথ করুনারত্নে, কুশল মেন্ডিস, ধনঞ্জয়া ডি সিলভা, রোশেনা সিলভা, দিনেশ চান্ডিমাল (অধিনায়ক), নিরোশান ডিকভেলা, দানুশকা গুনাথিলাকা, দিলরুয়ান পেরেরা, আকিলা ধনঞ্জয়া, রঙ্গনা হেরাথ, সুরঙ্গা লাকমাল।