অবিলম্বে খালেদাকে এসব সুবিধা দেওয়ার দাবি জানিয়ে দলটি বলেছে, অন্যথায় তার কিছু হলে দায়ভার সরকারকে বহন করতে হবে।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদসহ বিএনপির পাঁচজন আইনজীবী শনিবার নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন। এরপর রাতে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের বৈঠক শেষে এই অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, “আপনারা শুনে বিস্মিত হবেন, তাকে (খালেদা জিয়া) সম্পূর্ণ নির্জন কারাগারে রাখা হয়েছে। পরিত্যক্ত যে কেন্দ্রীয় কারাগার ছিল যেটাতে এখন কেউ বাস করে না, যার ঘর-বাড়িগুলো পড়ে যাচ্ছে, স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে গেছে, সেই কারাগারে তাকে সম্পূর্ণ একা একজন প্রিজনার হিসেবে রাখা হয়েছে।
“তাকে কোনো ডিভিশন এখন পর্যন্ত দেওয়া হয় নাই। আমরা অবিলম্বে তাকে ডিভিশন দিয়ে তার প্রাপ্য যে মর্যাদা ও সকল সুযোগ সুবিধা দেবার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।”
ফখরুল বলেন, জেল কোড অনুযায়ী সাবেক প্রধানমন্ত্রী বা সাবেক বিরোধী দলের নেতা সঙ্গে সঙ্গে ‘ডিভিশন’ পাবেন।
“এটার জন্য কোনো অনুমতির দরকার নেই, আদালতের দরকার নেই। জেল কোডে বলা আছে তিনি ডিভিশন পাবেন। অথচ বেগম খালেদা জিয়াকে ডিভিশন দেওয়া হয়নি। অবিলম্বে ডিভিশন দিন। অন্যথায় সরকারকে দায়ী থাকতে হবে জেল কোড ভঙ্গ করার জন্য।”
বৃহস্পতিবার দুর্নীতি মামলার রায়ের আগে আদালতের পথে খালেদা জিয়া
জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলায় বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হওয়ার পর তাকে নেওয়া হয় ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পুরনো ভবনে, যেখানে তিনিই এখন একমাত্র কয়েদি।
কারা কর্মকর্তারা জানান, কারাগারের মূল ভবনের নিচতলার একটি কক্ষে খালেদা জিয়াকে রাখা হয়েছে। ওই কক্ষ এক সময় একজন কারা কর্মকর্তা ব্যবহার করতেন।
খালেদা জিয়াকে সেখানে নেওয়ার কারণ ব্যাখ্যায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছিলেন, খালেদা জিয়ার ‘বয়স, সামাজিক মর্যাদা ও অবস্থান’ বিবেচনা করেই পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে তাকে রাখা হয়েছে।
“তিনি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বড় একটি রাজনৈতিক দলের চেয়ারপারসন। … সবকিছু বিবেচনা করেই সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
খালেদা জিয়া জেলকোড অনুযায়ী কারাগারে সব সুবিধা পাবেন বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথম শ্রেণির বন্দির (ডিভিশন-১) মর্যাদা পাবেন খালেদা জিয়া।
কারা বিধির ৬১৭ ধারা অনুযায়ী সর্বোচ্চ ডিভিশন পাওয়া কয়েদিরা একটি পত্রিকা ও টেলিভিশন দেখার সুযোগ পান। বাড়তি পত্রিকা চাইলে কিনে নিতে হয়। চাহিদা অনুযায়ী বই পড়ার সুযোগও তারা পান। সাত দিনে একবার চিঠি লিখতে পারেন, তবে তা কারা কর্তৃপক্ষের ‘সেন্সরের’ মধ্যে দিয়েই যাবে।
খালেদা জিয়াকে এসব সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না বলে বিএনপির অভিযোগের বিষয়ে জানতে কারা অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন, উপ মহাপরিদর্শক তৌহিদুল ইসলাম, সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবিরকে একাধিবার ফোন করলেও তাদের সাড়া পাওয়া যায়নি। কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে কারাগারের সামনে গিয়েও ভিতরে যাওয়ার অনুমতি মেলেনি।
কারা কর্তৃপক্ষ এখনও খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ‘কোনো ব্যবস্থা নেয়নি’ বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব। তার গৃহপরিচারিকা ফাতেমা বেগমকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে থাকতে না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
ফখরুল বলেন, “৭৩ বছরের একজন বয়স্ক মানুষ তার যে সার্বক্ষণিক পরিচারিকা যেটা জেল কোডের মধ্যে রয়েছে, সেই পরিচারিকাকেও তার সঙ্গে থাকতে দেওয়া হয়নি। এই বিষয়গুলো সম্পূর্ণ অমানবিক।”
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত জ্যেষ্ঠ নেতাদের এই বৈঠক হয়। রাত ৮টার দিকে বৈঠক থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের এসব বলেন মির্জা ফখরুল।
খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার পর জ্যেষ্ঠ নেতারা একসঙ্গে বসলেন এই প্রথম। লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য মোবাইলে নেতাদের শোনানো হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থেকে খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি ‘নির্দলীয়’ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যেতে বলেছেন।
সভায় ‘মিথ্যা মামলায়’ খালেদা জিয়াকে সাজা দেওয়ার নিন্দা জানানোর পাশাপাশি দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ সারাদেশে গ্রেপ্তার নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবি জানানো হয় বলে জানান তিনি।
প্রতিকূলতার মধ্যেও ‘শান্তিপূর্ণভাবে’ প্রতিবাদ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ায় নেতা-কর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আইনজীবীদের মাধ্যমে দেশনেত্রী কোনো বক্তব্য বা বার্তা দেননি। আইনজীবীরা আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করেছেন।”
বৈঠকে বিএনপি নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ও যুগ্ম মহাসচিবরা ছিলেন। খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আইনি পদক্ষেপ এবং আন্দোলনের কর্মকৌশল নিয়ে সেখানে বিস্তারিত আলোচনা হয় বলে জানা গেছে।
বৈঠকে সভাপতির আসনটি খালি রাখা হয়। সভাপতির আসনের এক পাশে বসেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং অপর পাশে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মাহবুবুর রহমান, রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর, হাফিজউদ্দিন আহমেদ, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, মীর নাসির, খন্দকার মাহবুব হোসেন, রুহুল আলম চৌধুরী, মাহমুদুল হাসান, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আজম খান, নিতাই রায় চৌধুরী, গিয়াস কাদের চৌধুরী ও শওকত মাহমুদ ছিলেন।
চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের মধ্যে সাবিহউদ্দিন আহমেদ, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, গাজী মাজহারুল আনোয়ার, আনহ আখতার হোসেইন, জয়নুল আবদিন ফারুক, কামরুল ইসলাম, এস এ কাইয়ুম, সুজাউদ্দিন, আবদুল রশিদ, শাহিদা রফিক, গোলাম আকবর খন্দকার, হাবিবুর রহমান হাবিব, আতাউর রহমান ঢালী, এনামুল হক চৌধুরী, সুকোমল বড়ুয়া, শাহজাহান মিঞা, বিজন কান্তি সরকার, তৈমুর আলম খন্দকার, আবদুস সালাম, মোহাম্মদ শাহজাদা মিয়া, আমিনুল হক, মামুন আহমেদ, আবদুল হালিম ডোনার ও আবদুল হাই শিকদার বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও হারুনুর রশীদ এবং বিশেষ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন ও প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বৈঠকে অংশ নেন।