স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, সরকার চলতি বছরের মধ্যেই সারা দেশে ১০ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেবে। শুধু নিয়োগ দিয়েই শেষ হবে না। তাদের পদায়নও করা হবে।
রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে অ্যাওয়ার্ড বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ আশ্বাস দেন।
মন্ত্রী বলেন, যেসব হাসপাতাল গত বছরেও শীর্ষে অবস্থান করেছিল তারা এবারও তালিকায় রয়েছে। দেশের অন্য হাসপাতালগুলোকেও এর আওতায় আনতে হবে। তবে তালিকায় শুধু শীর্ষে থাকলেই হবে না। তাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। তালিকায় স্থান পাওয়া হাসপাতালগুলোর সঠিকতা যাচাইয়ের জন্য তিনি আকস্মিক পরিদর্শন করবেন বলে ঘোষণা দেন। হাসপাতাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার প্রতি জোর দিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ না থাকলে সেখানে কাজ করা যায় না।
স্বাস্থ্য খাতে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির জনবল সংকটের কথা স্বীকার করে মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে সারা দেশের স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ৪০ হাজার পদ শূন্য রয়েছে। বিশাল জনবল শূন্য থাকায় অনেক ক্ষেত্রেই কাঙ্ক্ষিত সেবা দেয়া যাচ্ছে না। শুধু লোক থাকলেই হবে না। তাদের কাজে লাগাতে হবে। এজন্য তারা পরিচালনা করছেন তাদের ভূমিকা বেশি নিতে হবে। একজন নেতৃত্ব দিয়ে পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে পারে। তিনি ঝিকরগাছা ও যশোরের কেশবপুর হাসপাতালের উদাহরণ দেন।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক স্বাস্থ্যবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি ডা. বারডন জং রানা এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দেশের স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজে গতি আনতে শীর্ষ সেবাদানকারীদের পুরস্কৃত করছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছর সরকারি বিশেষায়িত, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা, উপজেলা ও কমিউনিটি হাসপাতালগুলোকে পুরস্কৃত করেছে। গত বছর স্বাস্থ্যসেবায় শীর্ষে উঠে আসে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। আর ২০১৫ সালে শীর্ষে থাকা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল তৃতীয় স্থানে নেমে এসেছে।
তালিকায় থাকা টারশিয়ারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় দিনাজপুরের এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ২০১৫ সালে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ তৃতীয় স্থানে ছিল। দ্বিতীয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থাকলেও এ বছর তালিকায় স্থান নেই।
বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোর মধ্যে শীর্ষ তালিকায় স্থান পেয়েছে নিউরো সায়েন্স ইন্সটিটিউট হাসপাতাল। বিভাগীয় পর্যায়ে দেশের আটটি বিভাগের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে খুলনা ও রাজশাহী। জেলা পর্যায়ে জাতীয় পর্যায়ে শীর্ষে রয়েছে নরসিংদী ১০০ শয্যা হাসপাতাল, দ্বিতীয় নরসিংদী জেলা হাসপাতাল, তৃতীয় যশোরের ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল, পাবনা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল ও কুড়িগ্রাম জেলা হাসপাতাল। সিভিল সার্জন পর্যায়ে শীর্ষ পাঁচের মধ্যে রয়েছে যশোর, চুয়াডাঙ্গা, পঞ্চগড়, ঝিনাইদহ ও নরসিংদী।
উপজেলা পর্যায়ে জাতীয় পর্যায়ে শীর্ষ পাঁচ হাসপাতালের মধ্যে প্রথম অবস্থান রয়েছে যশোরের চৌগাছা কেশবপুর, বরিশালের উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পাবনার ঈশ্বরদী ও কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। কমিউনিটি হেলথ সার্ভিসের মধ্যে শীর্ষ পাঁচ বরগুনার আমতলী, বামনা, ভোলার মনপুরা, বরিশালের উজিরপুর ও খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বিজয়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানের হাতে ক্রেস্ট ও সনদ তুলে দেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ছয়টি মানদণ্ড হাসপাতালগুলোর সেবার মান যাচাইয়ের মাধ্যমে শ্রেষ্ঠত্ব নির্বাচন করা হয়েছে। মানদণ্ড ছয়টি হচ্ছে- স্বাস্থ্য সেবা; ওষুধপত্র, যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি; স্বাস্থ্যকর্মী; অর্থায়ন; স্বাস্থ্য তথ্য ব্যবস্থা এবং নেতৃত্ব ও সুশাসন। হাসপাতালগুলোর মূল্যায়নে মোট ৩০০ নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে। তিন ভাগে এ নম্বর বরাদ্দ ছিল।