পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে ব্যাংকের বাড়তি বিনিয়োগ (Over Exposure) সমন্বয়ের সময়সীমা দুই বছর বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেছেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি বাড়াতে পুঁজিবাজারের বিকাশ ও স্থিতিশীলতা খুব জরুরী।
ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সরকারের প্রভাবশালী অন্যতম নীতিনির্ধারক তোফায়েল আহমেদ এ পরামর্শ দেন। শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেলে এই অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী ইউনিলিভার ও নেসলেসহ বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে নিয়ে আসার তাগিদ দেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোনো কোম্পানি পুঁজিবাজারে এলে সাধারণ মানুষ ওই কোম্পানির অংশীদার হতে পারে। দেশীয় অনেক কোম্পানি আসছে, তাই সাধারণ মানুষ এসব কোম্পানির অংশীদার হতে পারছে। কিন্তু বহুজাতিক কোম্পানিগুলো অনেক মুনাফা করলেও সাধারণ মানুষ তার ভাগীদার হতে পারছে না।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আহসানুল ইসলাম টিটু। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এম খায়রুল হোসেন।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমাদ, ডিএসইর চেয়ারম্যান সাবেক বিচারপতি সিদ্দিকুর রহমান, সাবেক পরিচালক কাজী ফিরোজ রশিদ এমপি, ব্যবস্থাপনা পরিচালক অধ্যাপক স্বপন কুমার বালা।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সেবা খাতে ৫৪ শতাংশ ও শিল্প খাতে ৩৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে। এই প্রবৃদ্ধি বাড়াতে প্রয়োজন বিপুল বেসরকারি বিনিয়োগ। শেয়ারবাজার এই বিনিয়োগের জোগান দিতে পারে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ২০১০ সালের আগে অসংখ্য সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা তাদের অবসরের টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছেন। অনেক ব্যবসায়ীও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এ বাজারে বিনিয়োগ করেন তখন। কিন্তু বাজার পরিস্থিতি অনুকূল না থাকায় তারা বিপুল লোকসান দিয়েছেন। এদের বড় অংশই বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। অবশ্য গত পাঁচ বছর বিভিন্ন উদ্যোগ ও আইনি পদক্ষেপ নেওয়ায় বাজার কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছে। এখন এই স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে হবে। এর জন্য ব্যাংকগুলোকে ২০১৬ সালের মধ্যে বাড়তি বিনিয়োগ সমন্বয়ের চাপ না দিয়ে এর সময় ২ বছর বাড়ানো উচিত।
উল্লেখ, ব্যাংক কোম্পানি আইনের সর্বশেষ সংশোধনীতে আরোপিত শর্তের কারণে পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের বিনিয়োগের সক্ষমতা কমে গেছে। আগে প্রতিটি ব্যাংক তার আমানতের ১০ শতাংশ পর্যন্ত পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারতো। ২০১৩ সালের সংশোধনী অনুসারে এখন ব্যাংকগুলো নিজ নিজ রেগুলেটরি মূলধনের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারে। আইনের এই সংশোধনীর ফলে আগের আইনে বিনিয়োগ করা কয়েকটি ব্যাংকের বিনিয়োগের পরিমাণ সীমার বাইরে পড়ে গেছে। এ ব্যাংকগুলোর উপর ২০১৩ সালের জুনের মধ্যে বাড়তি বিনিয়োগ সমন্বয়ের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এটি করতে হলে ব্যাংকগুলোকে বিপুল পরিমাণ শেয়ার বিক্রি করতে হবে। কিন্তু মন্দা বাজারে সেটি সম্ভব হচ্ছে না। এরা শেয়ার বিক্রি করলে তার চাপে বাজারে শেয়ারের দাম অনেক কমে যেতে পারে এমন আশংকা অন্যান্য অনেক বিনিয়োগকারী হাত গুটিয়ে বসে আছে। এতে বাজার মন্দার বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে।
এসইসি চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এম খায়রুল হোসেন অনুষ্ঠানে বলেন, আন্তর্জাতিক ফোরামে বিএসইসির অবস্থান ‘‘এ’’ ক্যাটাগরিতে উন্নীত হওয়ায় এ বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ও আগ্রহ বেড়েছে।
তিনি দাবি করেন, উন্নত মনিটরিং সেল, সার্ভিল্যান্স সফটওয়্যার, ডিমিউচুয়ালাইজেশনসহ বেশকিছু সংস্কারের ফলে শেয়ারবাজার এখন যেকোনো সময়ের তুলনায় স্থিতিশীল।
ডিএসই সভাপতি সাবেক বিচারপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা ও নিরাপদ বিনিয়োগের জন্য সচেতনতা খুব জরুরী। ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন এ বিষয়ে কাজ করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য কাজ করবে অ্যাসোসিয়েশন। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বাজার সম্পর্কিত সচেতনতা বাড়াতে এফবিসিসিআইয়ের সহযোগিতায় ৬৪টি জেলায় সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
অনুষ্ঠানে বিএসইসির কমিশনার আমজাদ হোসেন, আবদুস সালাম, নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান, ডিএসইর সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী, আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ফায়েকুজ্জামান এবং ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের সদস্যসহ বিপুল সংখ্যক ব্রোকার উপস্থিত ছিলেন।