পোশাক কারখানার স্টক লটের ব্যবসা করতেন সিরাজুল ইসলাম (৩২)। দুই বছর আগে তিনি সুমাইয়া সুলতানাকে (২৪) বিয়ে করেন। বিয়ের এক বছর পর ঢাকার গোলাপশাহ মাজারে টেকনাফের দুই ইয়াবা ব্যবসায়ীর সঙ্গে সিরাজুলের পরিচয় হয়। পরে তাঁদের সঙ্গে সিরাজুলের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে প্রলোভনে পড়ে সিরাজুল জড়িয়ে পড়েন মাদক ব্যবসায়। এতে সহায়তা করেন তাঁর স্ত্রী সুমাইয়া।
টেকনাফের মাদক ব্যবসায়ীরা ব্যবসার সুবিধার্থে এই দম্পতিকে রাজধানীর অভিজাত বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বাসা ভাড়া করে দেন। টেকনাফ থেকে আসা ইয়াবার চালানগুলো ঢাকায় পৌঁছানোর পর ওই ফ্ল্যাটে রাখা হতো। সেখান থেকে রাজধানীর গুলশান, ধানমন্ডি ও উত্তরা এলাকা এবং পার্শ্ববর্তী দোহার ও নরসিংদীতে ইয়াবা সরবরাহ করতেন ওই দম্পতি।
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ওই ফ্ল্যাট থেকে গ্রেপ্তার হওয়ার পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই দম্পতি এসব কথা জানিয়েছেন বলে র্যাব দাবি করেছে। গতকাল রোববার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে একটি বাড়ির পাঁচতলার ফ্ল্যাট থেকে ওই দম্পতিসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১-এর একটি দল। জব্দ করা হয় ১ লাখ ২০ হাজার ইয়াবা বড়ি, রেজিস্ট্রেশনবিহীন একটি মাইক্রোবাস, মুঠোফোন ও ৬ হাজার ২০০ টাকা। আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এসব তথ্য জানান র্যাব-১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম।
ওই র্যাব কর্মকর্তা জানান, জব্দ করা ১ লাখ ২০ হাজার ইয়াবা বড়ির মধ্যে ২০ হাজারটি জব্দ করা হয় ওই দম্পতির ফ্ল্যাটের একটি ব্যাগ থেকে। অবশিষ্ট এক লাখ ইয়াবা বড়ি মাইক্রোবাসে ভেতরে বিশেষ কায়দায় লুকিয়ে রাখা ছিল। জব্দ করা এই মাদকের আনুমানিক মূল্য ২ কোটি ১৬ লাখ টাকা।
র্যাব জানায়, তারা জিজ্ঞাসাবাদে জেনেছে, সিরাজুল ও সুমাইয়া দম্পতি বসুন্ধরার ওই ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন। দুই বছর আগে তাঁদের বিয়ে হয়। সিরাজুল গার্মেন্টসের স্টক লট ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। গত বছরের জুলাই মাসে রাজধানীর গোলাপশাহ্ মাজার এলাকার একটি রেস্টুরেন্টে কক্সবাজারের টেকনাফের দুজন মাদক ব্যবসায়ীর সঙ্গে সিরাজুলের পরিচয় হয়। পরিচয়ের পর তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে টেকনাফের ওই দুই মাদক ব্যবসায়ী সিরাজুলকে ইয়াবা ব্যবসার প্রস্তাব দেন।
লোভে পড়ে এ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন সিরাজুল। আর এ কাজে সহযোগিতা করেন তাঁর স্ত্রী। পরিকল্পনা অনুযায়ী সিরাজুল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি এড়াতে বসুন্ধরার মতো একটি অভিজাত এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে মাদক ব্যবসার কেন্দ্র স্থাপন করেন। ওই ফ্ল্যাটটির ভাড়া দিতেন টেকনাফের দুই মাদক ব্যবসায়ী। এ ছাড়া মাদক বহনের জন্য ব্যবহৃত রেজিস্ট্রেশনবিহীন মাইক্রোবাসটির মালিক টেকনাফের ওই দুই মাদক ব্যবসায়ীর একজন।
বসুন্ধরার ওই বাসাটি মূলত মাদক ট্রানজিট ও বিতরণের জন্য ব্যবহার করা হতো। গ্রেপ্তার হওয়া মফিজুল মাইক্রোবাসের চালক। মাইক্রোবাসটি মাদক পরিবহনে ব্যবহার করা হতো। আর যাত্রী বেশে মাদক পরিবহনের কাজ করতেন গ্রেপ্তার হওয়া শাকের ও জসিম।
টেকনাফের ওই দুই ব্যবসায়ীর পরিচয় জানতে চাইলে র্যাব কর্মকর্তা সারোয়ার বিন কাশেম বলেন, ‘তদন্তের স্বার্থে আমরা ওই ব্যবসায়ীদের নাম প্রকাশ করছি না। আমাদের অভিযান চলছে।’