কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়াকে ঢাকা চেম্বার কখনো সমর্থন করে না। আগামীতেও একই অবস্থানে থাকবে। শনিবার রাজধানীর মতিঝিল ডিসিসিআই কার্যালয়ে প্রাক-বাজেট সংবাদ সংম্মেলনে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি মো. আবুল কাসেম খান এ মন্তব্য করেন। সংবাদ সম্মেলন বক্তব্য রাখেন ডিসিসিআইর সহ-সভাপতি রিয়াদ হোসেন, পরিচালক রেজাউল করিম।
সংবাদ সম্মেলন আবুল কাসেম খান বলেন, ‘অবৈধ টাকা বৈধ করার সুযোগ ডিসিসিআই সমর্থন করে না। তবে যে টাকা বৈধভাবে উপার্জন করা হয়েছে; কিন্তু ট্যাক্স ফাইল করা হয়নি, সেগুলোকে ট্যাক্সের আওতায় আনার সুযোগ দিতে হবে।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এলএনজি গ্যাসের দাম যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করতে হবে। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, আন্তর্জাতিক বাজার অনুযায়ী দাম নির্ধারণ না করে সরকার এই খাতে ভর্তুকি দেবে।’ বর্তমানে দেশে যে দামে গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে, তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দাম নির্ধারণ করারও প্রস্তাব দেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা চেম্বারের পক্ষ থেকে দেশে বেসরকারি এবং বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। এ জন্য করপোরেট কর কমানো দরকার বলে মনে করে ঢাকা চেম্বার। সংগঠনটির নেতারা মনে করেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট পরবর্তী আগামী তিন বছরে করপোরেট করের হার পর্যায়ক্রমে ১০ শতাংশ কমিয়ে আনা যেতে পারে।
আবুল কাসেম বলেন, বাংলাদেশে করপোরেট করের হার অনেক বেশি। এই কর কমপক্ষে পাঁচ শতাংশ কমানো দরকার। সেইসঙ্গে পরের দুই অর্থবছরে আরও পাঁচ শতাংশ কমানো দরকার। তাতে ব্যবসায়ীরা আরও বেশি বিনিয়োগের সুযোগ পাবেন। বিনিয়োগ বাড়লে দেশে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে চট্টগ্রাম বন্দরকর্মীদের দক্ষতা বাড়ানো, যানজট নিরসনে ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেন থেকে আট লেনে উন্নীত করা এখন সময়ের দাবি বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, আগামী বাজেটে করমুক্ত ব্যক্তি আয়কর সীমা আড়াই লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে তিন লাখ টাকা করা দরকার। বর্তমানে আড়াই লাখ থেকে চার লাখ টাকা পর্যন্ত আয় হলে ১০ শতাংশ কর দিতে হয়। চার লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা আয় হলে ১৫ শতাংশ, পাঁচ লাখ থেকে ছয় লাখ পর্যন্ত ২০ শতাংশ এবং ছয় থেকে ৩০ লাখ পর্যন্ত ২৫ শতাংশ এবং ৩০ লাখের বেশি হলে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত আয়কর দিতে হয়। আগামী বাজেটে প্রতিটি ক্ষেত্রে কর পাঁচ শতাংশ কমিয়ে আনার উচিত। তাতে মানুষের জীবনযাত্রার মান আরও উন্নত হবে। এছাড়া আগামী বাজেটে ৪১টি প্রস্তাব তুলে ধরে ডিসিসিআই।
সংবাদ সম্মেলনে আগামী বাজেটে অবকাঠামোগত খাতের উন্নয়নে বরাদ্দ বাড়াতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। পাশাপাশি বাজেটে ট্যাক্স কার্ডহোল্ডাদের সুবিধা-অসুবিধা জানানোর জায়গা হিসেবে একটি বিশেষ সেল গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়।
খেলাপি ঋণ নিয়মের মধ্যে আনতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে সংগঠনের সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, খেলাপি ঋণ সমস্যা সৃষ্টি করে। ছোট ঋণ দেওয়ার সময় যেসব নিয়ম মানা হয় বড় ঋণের ক্ষেত্রেও সে বিষয়ে সতর্ক হতে হবে। এ বিষয়ে এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংককে উদ্যোগ নিতে হবে। ঋণ খেলাপিদের একটি নিয়মের মধ্যে আনতে হবে।
ঋণ দেওয়ার সময় সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়ে ব্যবসায়ী এ নেতা বলেন, যে ঋণ দেওয়া হচ্ছে এটি আদায় হবে কিনা ব্যাংকগুলোকে তা নিশ্চিত হতে হবে। বড় ঋণ না দিয়ে এসএমই ঋণের উপর জোর দেন তিনি।
এদিকে সরকারের অবকাঠামো উন্নয়নে গ্রিন ফিল্ড প্রকল্প কিংবা কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির পলিসি চায় ঢাকা চেম্বার। এই ধরনের কোম্পানিগুলোকে তালিকাভূক্তির ক্ষেত্রে বেধে দেওয়া সময় সীমা (৩ বছর) কমিয়ে আনার প্রস্তাব করেন সংগঠনটির সভাপতি আবুল কাশেম খান। তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) পর্যাপ্ত না আসার জন্য অবকাঠামো অবস্থা বহুলাংশে দায়ী। আমাদের অবকাঠামো খাত যত আধুনিকায়ন হবে তত বেশি এফডিআই এদেশে আসবে। তবে এই খাতের বহু গ্রিন ফিল্ড প্রকল্প কিংবা কোম্পানি টাকার অভাবে কাজ করতে পারছে না। একদিকে সুদের হার ঊর্ধ্বমুখী; অন্য দিকে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলন জটিলতায় পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হচ্ছে না।