আসন্ন রোজা উপলক্ষে রবিবার থেকে ঢাকাসহ সারাদেশে স্বল্প মূল্যে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) পণ্য বিক্রি শুরু করবে। এই কর্মসূচির আওতায় রাজধানীসহ দেশজুড়ে ভোজ্য তেল, চিনি, ডাল, ছোলা এবং খেজুর বিক্রি করা হবে। টিসিবি’র তথ্য কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির সংবাদ মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, এবার একজন ভোক্তাকে ৫৫ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ চার কেজি চিনি, ৫৫ টাকা দরে সর্বোচ্চ চার কেজি মশুর ডাল (মাঝারী সাইজ), প্রতিলিটার ৮৫ টাকা দরে সর্বোচ্চ পাঁচ লিটার সয়াবিন তেল, প্রতিকেজি ৭০ টাকা দরে সর্বোচ্চ পাঁচ কেজি ছোলা এবং প্রতিকেজি ১২০ টাকা দরে সর্বোচ্চ এক কেজি খেজুর দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ১৮৪টি ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে দেশব্যাপী এসব পণ্য বিক্রি করা হবে। এর মধ্যে ঢাকায় ৩২টি ট্রাক, চট্টগ্রমের ১০টি ট্রাক, এবং অন্যান্য বিভাগীয় শহরে পাঁচটি ও জেলা সদরে দুইটি করে ট্রাকে পণ্য বিক্রি করা হবে।
ঢাকা শহরের যেসব স্থানে টিসিবির ভ্রাম্যমাণ ট্রাক থাকবে- সচিবালয় গেট, প্রেস ক্লাব, কাপ্তান বাজার, বিক্টোরিয়া পার্ক, সাইন্সল্যাব মোড়, নিউমার্কেট তথা নীলক্ষেত মোড়, শ্যামলী অবথা কল্যাণপুর, ঝিগাতলা মোড়, খামার বাড়ি, কলমীতলা বাজার, কচুক্ষেতের রাজনীগন্ধা সুপার মর্কেটের সামনে, আগারগাঁও তালতলা ও নির্বচন কমিশন অফিস, রাজলক্ষী কমপ্লেক্স উত্তরা, মিরপুর-১ নং মাজার রোড, শন্তিনগর বাজার, মালিবাগ বাজার, বাসাবো বাজার, বনশ্রীর আইডিয়াল স্কুল, বাংলাদেশ ব্যাংক চত্বর, মহাখালী কাঁচাবাজার, শেওড়াপাড়া বাজার, দৈনিক বাংলা মোড়, শাহজাহানপুর বাজার, জকিরাপুল বাজার ও আইডিয়াল জোন, মতিঝিল বকচত্বর, খিলগাঁও তালতলা বাজার, রামপুরা বাজার, মিরপুর-১০ গোলচত্বর, আশকোনা হাজি ক্যাম্প, মোহাম্মদপুর টাউনহল কাঁচাবাজার, দিলকুশা ও মাদরটেক নন্দীপাড়া কৃষি ব্যাংকের সামনে।
এছাড়াও টিসিবির দুই হাজার ৭৮৪ জন ডিলার ও নিজস্ব ১০টি খুচরা বিক্রয় কেন্দ্রের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয় কার্যক্রম চলবে। শুক্র ও শনিবার ছাড়া সপ্তাহের ৫ দিন নির্ধারিত স্থানে এসব পণ্য বিক্রি করা হবে।
এদিকে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পবিত্র ও সংযমের মাসকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে। এবার আসন্ন রমজান ও বৃষ্টিকে পুঁজি করে ইতোমধ্যেই বাড়তে শুরু করেছে কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম। এর মধ্যে পেঁয়াজ উল্লেখযোগ্য। ডলারের মূল্য বৃদ্ধি ও বৃষ্টির কারণে নিত্যপণ্যেও দাম বাড়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
তাই এবার রমজান মাস শুরুর আগেই বাজার মনিটরিং করতে মাঠে নামবে দেশের চারটি সংস্থার গোয়েন্দারা। নিত্য পণ্যের অবৈধ মজুদ, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি মনিটর করবে তারা। এ বছর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবে বলে নিশ্চিত করেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রমজানে কারসাজি করে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ালে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা গেছে, বাজার মনিটরের জন্য মাঠে নামানো টিমে দেশের চারটি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য ছাড়াও র্যাব, পুলিশ ও আনসারের সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত থাকছেন। অবৈধ মজুদের সন্ধান পেলে মজুদকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ বিষয়ে ‘জিরো টলারেন্স’ অবস্থান নিয়েছে সরকার।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাজার মনিটরিংয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, ২০০৭ সাল থেকে ঢাকা শহরের বাজার তদারকির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ১৪টি মনিটরিং টিম রয়েছে। প্রতিটি কমিটিতেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, ঢাকা জেলা প্রশাসন, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, এফবিসিসিআই, বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশিন ও ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত থাকেন। জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে গঠিত এই ১৪টি মনিটরিং টিম সারা বছর কাজ করলেও রোজার সময় তাদের কাজের গতিকে আরও জোরদার করা হয়।