বিশ্ববাজারে ডলারের দাম বাড়ছে, নেপথ্যে কে?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক আপডেট: ২০১৮-০৭-২১ ২০:৫৯:১৫


ডলার শক্তিশালী হওয়ার বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোলান্ড ট্রাম্প খুশি নাও হতে পারেন। তবে এই ডলারের উল্লম্ফন যে তারই কারণে হচ্ছে তা বলা যেতে পারে।
বিশ্বের প্রধান ছয় মুদ্রার বিপরীতে ডলারের মূল্যসূচক ডিএক্সওয়াই বলছে, গত কয়েকমাস ধরে প্রধান প্রধান মুদ্রার বিপরীতে ডলার শক্তিশালী হয়েছে। মাত্র তিন মাসে সূচকটি প্রায় ৭ শতাংশ বেড়েছে। গত বৃহস্পতিবার যা এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চে পৌঁছায়।
১৯৬০ দশকের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সর্বনিম্ন বেকারত্বের হার, ধীরে ধীরে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যাওয়া ও স্থিতিশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ঘাড়ে চেপে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশটিতে সুদের হার বাড়াতে শুরু করে। আর এ কারণে ২০১৫ সালের শেষ সময় থেকে ডলার শক্তিশালী হতে থাকে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই বছর ফেডারেল রিজার্ভ দুইবার সুদের হার বাড়িয়েছে। বছর শেষে আরও দুইবার বাড়ানো হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে; যা ডলারের প্রতি বিদেশিদের আরও আকৃষ্ট করতে পারে। কারণ ইউরোপ ও জাপানের মুদ্রানীতি এক্ষেত্রে অনেকটা নমনীয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্টরা সাধারণ ডলারের সমালোচনা করেন না। তবে ট্রাম্প সেই রীতি ভেঙেছেন। তিনি ডলার শক্তিশালী হওয়ার বিষয়ে কয়েকবার প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছেন।
যদিও এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে কিনা তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
সিএনবিসি টেলিভিশনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছেন ডলার শক্তিশালী হলে আমেরিকার রপ্তানি পণ্যে প্রভাব পড়বে। বিষয়টি নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন। চীন ও ইউরোপের দেশগুলো মুদ্রাবাজারে কারসাজি করে যুক্তরাষ্ট্রকে বেকায়দায় ফেলছে।
তিনি সুদহার বাড়ানোর ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সমালোচনা করেও প্রথা ভেঙেছেন।
ট্রাম্প বলেছেন, সুদ হার বাড়িয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্ববাজারে কম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে উপস্থাপন করছে।
তবে বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীরা বলছেন ট্রাম্প প্রশাসনের কর কর্তনের প্রভাবে ফুলছে ডলার। যা অর্থবছরের ঘাটতি বাড়িয়ে দিচ্ছে। সেই সঙ্গে সরকারকে আরও দেনার মুখে ঠেলে দিচ্ছে। ফলস্বরূপ চীন, ইউরোপ, মেক্সিকোর পণ্যে বসানো হচ্ছে কর।
টরন্টোতে অবস্থিত ক্যাম্ব্র্রিজ গ্লোবাল পেমেন্টস নামে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কৌশলবিদ কার্ল চামোতা বলছেন, কঠোর মুদ্রানীতি ও ঢিলেঢালা ফিসকল পলিসি পরিচালনার মাধ্যমে ট্রাম্প ডলারের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে সঠিক অবস্থানে আছেন।
গত বছরের ডিসেম্বরে দেড় ট্রিলিয়ন ডলারের কর কর্তন বিল পাস করে কংগ্রেস। এরপর মার্চে এক দশমিক ৩ ট্রিলিয়নের ব্যয় বিল কার্যকর হয়। যা অর্থবছরের ঘাটতি আরও বাড়িয়ে দেয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে।
জুনে দেয়া কংগ্রেসের বাজেট অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এর ফলে আগামী ২০২০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ঋণমাত্রা ভয়াবহ পর্যায়ের দিকে যাচ্ছে; যা হবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সর্বোচ্চ।
এদিকে ভোগ্যপণ্যের বার্ষিক মূল্যস্ফীতি যখন ২ দশমিক ৯ শতাংশে অবস্থান করছে, তখন ফেডারেল রিজার্ভ স্বল্পমেয়াদী সুদ হার বাড়িয়ে দিচ্ছে। একইসঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী বন্ডের সুদও বিদেশি পুঁজি টানছে; যা ঘাটতি বাড়িয়ে ডলারকে শক্তিশালী করছে।
নিউ ইয়র্কে টিডি সিকিউরিটিজের ঊর্ধ্বতন গবেষক মাজেন ইছা বলছেন, মার্কিন অর্থনীতি চাঙ্গা হওয়াকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সে অনুযায়ী সুদের হার বাড়িয়েছে। তবে এটা অতিরিক্ত মূল্যস্ফীতি ঘটাতে পারে। সেই সঙ্গে শ্রম বাজারকে আরও কঠোর করতে পারে।
বিশ্লেষকরা যুক্তরাষ্ট্র ও তার প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদারের মধ্যে বাণিজ্য নীতির উপর উত্তেজনা বৃদ্ধির কারণে ডলার শক্তিশালী হচ্ছে বলেও মনে করেন। তারা বলছেন, বিনিয়োগকারীরা যারা ডলারে কেনাবেচা করেন, তারা পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে স্থানীয় বাজার মুদ্রায় লাভবান হবেন।
এতে করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য কিছু দেশের কোম্পানিগুলো খুব কমই বৈশ্বিকভাবে প্রতিযোগিতা করতে পারছে। কারণ আমদানি শুল্ক পণ্যের ব্যয় আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। ভোক্তা পর্যায়েও বাড়ছে ওই পণ্যের দাম। এতে উদীয়মান বাজার থেকে ওইসব পণ্যের চাহিদাও কমে যাচ্ছে।
শুক্রবার সিএনবিসির সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প জানান, তিনি চীনের ৫০ হাজার কোটি ডলারের পণ্যে শুল্ক বসাতে প্রস্তুত ছিলেন; যা দুই প্রান্তের বাণিজ্য যুদ্ধের সম্ভাবনা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
মাজেন ইছা বলেন, প্রকৃতপক্ষে যা বাস্তবায়ন হচ্ছে, তা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য অনেক কিছুর প্রয়োজন; যা বাজারের কাজ; অর্থনীতির কাজ। আপনি চাইলে সেটা করতেও পারেন আবার নাও করতে পারেন।
তবে ট্রাম্পের কথা অনুযায়ী ডলার পেছনের দিকে মোড় নিলেও তার প্রভাব স্থায়ী হবে না বলে তিনি মনে করেন।