দেশের ইলেকট্রনিক পরিশোধ (ই-পেমেন্ট) ব্যবস্থাকে আরও বেশি সুদৃঢ় করতে প্রথমবারের মতো আইন হচ্ছে। এ-সংক্রান্ত আইনের একটি খসড়া তৈরি করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আইন লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ তিন বছরের জেল ও ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ আইনের আওতায় ইলেকট্রনিক আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নিতে হবে। পরিশোধ ব্যবস্থার আধুনিকায়নের ফলে সৃষ্ট ঝুঁকি নিরসনের লক্ষ্যে নতুন আইন করার এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, ব্যাংকের সব ধরনের ইলেকট্রনিক পরিশোধ, মোবাইল ব্যাংকিং ও ই-ওয়ালেটসহ এ জাতীয় লেনদেন ইলেকট্রনিক পেমেন্ট সিস্টেম আইনের আওতায় থাকবে। আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, এসব মাধ্যমে কোনো অননুমোদিত লেনদেন হলে তার দায় নিতে হবে প্রতিষ্ঠানকে। অর্থাৎ, গ্রাহকের অনুমোদন ছাড়া কোনো লেনদেন হলে প্রতিষ্ঠানকে দায় নিতে হবে। আবার একবার পরিশোধের নির্দেশ দেওয়ার পর তা বাতিল করা যাবে না। এর মানে কারও অনুকূলে পরিশোধের নির্দেশ দেওয়ার পর যদি মনে হয় ভুল হচ্ছে, তা বাতিল করা যাবে না। অবশ্য পরিশোধের নির্দেশনাটি ভুল প্রমাণিত হলে অন্য পরিশোধের সঙ্গে তা সমন্বয় করা যাবে।
ইন্টারনেট ব্যবহার করে এক অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য অ্যাকাউন্টে লেনদেন, ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ বা অ্যাপভিত্তিক অর্থ পরিশোধ ব্যবস্থাকে ই-পেমেন্ট বোঝানো হয়। আর বিকাশ, রকেটসহ এ জাতীয় মাধ্যম ব্যবহার করে পরিচালিত লেনদেন মোবাইল ব্যাংকিং হিসেবে পরিচিত। ই-ওয়ালেট বলতে ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাইরে অ্যাপভিত্তিক অর্থ রাখার একটি ব্যবস্থা। যেখানে টাকা জমা রেখে অনলাইনে লেনদেন করা যায়। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে অনলাইনে লেনদেন করতে হলে ইন্টারনেট ব্যাংকিং সুবিধা থাকতে হয় অথবা ওই অ্যাকাউন্টের বিপরীতে ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড থাকতে হয়। ওয়ালেটে তার দরকার হয় না। মোবাইল ফোন, ট্যাব বা ল্যাপটপে নির্দিষ্ট অ্যাপের মাধ্যমে এক অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য অ্যাকাউন্টে গ্রাহক নিজেই অর্থ স্থানান্তর করতে পারেন।
প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, ইলেকট্রনিক পরিশোধ ব্যবস্থা পরিচালনাকারী ও সেবাদানকারীর লাইসেন্স প্রদান ও তদারকির ক্ষমতা বর্তমানের মতো বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে থাকবে। এসব প্রতিষ্ঠানের দায়-দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। একই সঙ্গে পরিশোধ ব্যবস্থার কার্যক্রম, আউটসোর্সিং, এজেন্ট নিয়োগ এবং ফি ও চার্জ নির্ধারণের বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এসব প্রতিষ্ঠান কোন প্রক্রিয়ায় লেনদেন করবে, তহবিল স্থানান্তরের শর্ত এবং চেক ক্লিয়ারিংসহ সার্বিক বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ, দুর্নীতিসহ অপরাধমূলক লেনদেন কমাতে নগদ লেনদেন কমাতে চায় সরকার। বর্তমানে কার্ড ও অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরভিত্তিক লেনদেন বাড়ছে। অনেক প্রতিষ্ঠান কেনাকাটায় পস ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পরিশোধ ব্যবস্থা চালু করেছে। চাহিদা বিবেচনায় এরই মধ্যে ৬টি ব্যাংক আন্তঃব্যাংক ইন্টারনেট ব্যাংকিং চালু করেছে। ১৮টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে। এখন এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আন্তঃলেনদেন চালুর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ ছাড়া আরটিজিএস, ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ এবং ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে লেনদেন হচ্ছে। এসব মাধ্যম ব্যবহার করে ব্যবসা ও বাণিজ্য প্রসার হলেও লেনদেনের নানা ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। এসব বিবেচনায় নিয়ে আইন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে রেগুলেশন অন ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার-২০১৪ এবং বাংলাদেশ পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট সিস্টেমস রেগুলেশন-২০১৪ এর মাধ্যমে এ-সংক্রান্ত কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করা হচ্ছে। সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইনের ৪৯(১) এর (ঙ) ধারায় বাংলাদেশ ব্যাংককে পেমেন্ট সিস্টেম পরিচালনা বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এই ধারায় বলা আছে, দেশের ক্লিয়ারিং ব্যবস্থা বা পেমেন্ট সিস্টেমের সুষ্ঠু পরিচালনার স্বার্থে এ-সংক্রান্ত যে কোনো কার্যক্রম গ্রহণের জন্য সাধারণভাবে সব বা কোনো বিশেষ ব্যাংক-কোম্পানিকে নির্দেশ দিতে পারবে। আলাদা আইন করার এ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে সার্বিক বিষয়ে উল্লেখ থাকবে।