দুই মাস আগে অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে নতুন স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮ অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে স্বর্ণালঙ্কার ব্যবসায়ীদের মধ্যে বহুল প্রত্যাশিত এ নীতিমালা শিগগির কার্যকর হবে বলে আশার সঞ্চার হয়েছিল। তবে এরপর আর কোনো অগ্রগতি নেই। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্নিষ্ট ব্যবসায়ীরা হতাশা প্রকাশ করেছেন।
এই নীতমালা দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির ৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল গতকাল বুধবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে সচিবালয়ে তার দপ্তরে দেখা করে। বৈঠকে প্রতিনিধিরা বলেন, দীর্ঘ ৪৭ বছর পর দেশে স্বর্ণ নীতিমালা হয়েছে। অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর তা দ্রুত মন্ত্রিসভার বৈঠকে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপনের কথা ছিল। এসব প্রক্রিয়া শেষে তা দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়। তবে এখনও তা ঝুলে আছে।
হতাশা ব্যক্ত করে তারা অর্থমন্ত্রীকে আরও জানান, তারা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করেও এ বিষয়ে অগ্রগতি জানতে পারেননি। অর্থমন্ত্রী তাদের বক্তব্য শোনেন এবং যথাসময়ে বাস্তবায়ন না হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেন। এক সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে সমাধান দেবেন বলে তিনি স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের প্রতিশ্রুতি দেন।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকে আটক স্বর্ণ নিলামের ব্যবস্থা করলে দেশে স্বর্ণের প্রাপ্তি সহজলভ্য হবে। এ ব্যবস্থা করা হলে স্বর্ণ সংগ্রহে যে সংকট আছে তা আপাতত কেটে যাবে।
যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির সাধারণ সম্পাদক দিলিপ কুমার আগরওয়াল বলেন, স্বর্ণ নীতিমালা দ্রুত কার্যকরের জন্য অর্থমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তারা। তিনি শিগগির এ বিষয়ে সমাধানের আশ্বাস দেন।
দিলিপ কুমার আরও বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে স্বর্ণের দাম বেশি। ফলে বিদেশ থেকে স্বর্ণ এনে অলঙ্কার তৈরি করলে খরচ বেশি পড়বে। বাংলাদেশ ব্যাংক যদি আটক স্বর্ণ নিলামের অনুমতি দেয়, তাহলে দেশের ব্যবসায়ীরা সহজেই স্বর্ণ কিনতে পারবেন। সেই স্বর্ণ দিয়ে অলঙ্কার বানিয়ে রফতানিও করা যাবে। ২০০৯ সালের পর থেকে স্বর্ণের নিলাম বন্ধ রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, নীতিমালা কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না।
গত ২৩ মে অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভায় স্বর্ণ নীতিমালা অনুমোদন পায়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্বর্ণ আমদানিতে বন্ড সুবিধা থাকছে। আমদানি করে দেশের ভেতর অলঙ্কার বানিয়ে তা বিদেশে রফতানি উন্মুক্ত করতে এ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এ ধরনের রফতানিকারকদের নগদ প্রণোদনাসহ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে জমিও বরাদ্দ দেওয়া হবে। এ ছাড়া অলঙ্কার তৈরি করে যারা দেশের মানুষের কাছে বিক্রি করবে, তারাও আমদানি করা স্বর্ণ ব্যবহার করতে পারবে।